1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গরমে স্বস্তি পেতে এসির বিকল্প

১৯ জুলাই ২০২২

গরম যত বাড়ছে তত বাড়ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার৷ কিন্তু এতে ঘরের ভিতরে সাময়িক স্বস্তি মিললেও বাইরের পরিবেশ আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে৷ তাহলে বিকল্প কী?

https://p.dw.com/p/4EMWK
Hongkong Fassade mit Klimaanlagen
ছবি: Ingo Schulz/imageBROKER/picture alliance

কুয়েতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছাড়া গ্রীষ্মে কারো পক্ষে বসবাস কঠিন এক ব্যাপার৷ দেশটিতে এক সময়ে বসবাস করতেন আলেক্সান্ডার নাসির৷ তিনি বলেন, ‘‘কুয়েতে আপনাকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে হবে৷ সেখান থেকে বের হয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিং মলে যেতে হবে৷''

২০১৪ সাল থেকে নাসির বার্লিনে আছেন৷ কিন্তু ইউরোপে এসেও গ্রীষ্মে ঘাম ঝরানো তাপমাত্রা থেকে মুক্তি মিলছে না৷ তুলনামূলক কম গরম সত্ত্বেও  জার্মানির রাজধানীতে এরিমধ্যে তিনি ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করেছেন কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সুবিধা ছাড়া৷ কেননা জার্মানির বাড়িঘরগুলোতে এসি নেই বললেই চলে৷ অবশ্য তিনি নিজেও চান না পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই ব্যবস্থায় ফিরে যেতে৷ নাসির বলেন, ‘‘আমি আবার এসি ব্যবহারে ফিরে যেতে চাই না৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পরিস্থিতি প্রতি বছরই খারাপ থেকে আরো খারাপ হচ্ছে এবং আমরা এর সঙ্গে আসলে মানিয়ে নিচ্ছি না৷''

বাড়ছে এসির চাহিদা

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির ২০১৮ সালের হিসাবে বৈশ্বিক বিদ্যুৎ ব্যবহারের ১০ শতাংশ খরচ হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও বৈদ্যুতিক পাখাতে৷ জাপান ও যুক্তরাজ্যে এসির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি৷ দেশ দুইটিতে ৮০ শতাংশ ঘর-বাড়িতে আছে এমন ব্যবস্থা৷ অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে গরম অঞ্চলগুলোতে এসি ব্যবহার করেন মাত্র আট শতাংশ মানুষ৷ কিন্তু ক্রমশ তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে এসির চাহিদা বেড়েই চলছে৷ এতে ২০৫০ সাল নাগাদ বিদ্যুত ব্যবহারের চাপ তিনগুণ বাড়বে৷

কিন্তু বিদ্যুতের ব্যবহার যত বাড়বে তত পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে৷ বাড়বে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের গতি৷ এই চক্র ভাঙতে বিকল্প উপায় বেছে নেয়ার কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা৷ তাদের মতে এতে নগরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রকোপ ঠেকানোর পাশাপাশি বৈদ্যুতিক গ্রিডের উপর চাপও কমানো যাবে৷

সমাধান কী?

ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলগুলোর জন্য সহজ সমাধান হলো রাতে জানালা খোলা রেখে ঘরে পর্যাপ্ত ঠান্ডা বাতাস ঢুকতে দেয়া৷

যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আলেক্সান্দ্রা রেমপেল এই বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন৷ তাতে দেখা গেছে প্রাকৃতিক বাতাস চলাচল ব্যবস্থা বা ভ্যান্টিলেশন এবং ছায়া পরিবেশ তৈরি করে ঘরে ভিতরের তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমানো যেতে পারে৷ এতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের উপর ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চাপ কমানো সম্ভব৷

এক্ষেত্রে নতুন করে কোন ব্যবস্থাও উদ্ভাবনের প্রয়োজন নেই৷ বরং পুরনো কৌশল ব্যবহার করেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা যেতে পারে৷

ভবনের নকশায় পরিবর্তন

ভবনের নকশায় কিছু কৌশল ব্যবহার করে ভিতরে ঠান্ডা থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ যেমন, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে শতশত বছর ধরে বাতাস ধরে রাখার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়৷ এজন্য ভবনের উপরে খোলা জানালার টাওয়ার বসানো হয়৷ সেই টাওয়ার দিয়ে ভবনের ভিতরে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করে গরম বাতাসকে বের করে দেয়৷

আরেকটি উপায় হলো কৃত্রিমভাবে ছায়া ফেলার ব্যবস্থা করা৷ এতে ভবনে সূর্যের আলোর প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঘরের তাপমাত্রা সহনীয় রাখা যায়৷

দুবাইর ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা বলছে এমন সব বিকল্প উপায় ব্যবহার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বার্ষিক জ্বালানির ব্যবহার ২০ শতাংশের বেশি কমানো সম্ভব৷

সেই সঙ্গে ঘরের বাইরে পরিবেশকে ঠান্ডা রাখতে নগরে আরো গাছ লাগিয়ে ছায়া তৈরির পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা৷ সিঙ্গাপুরের এক গবেষণা বলছে এতে করে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অন্তত পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমানো যেতে পারে৷

বেয়াট্রিসে ক্রিস্টোফারো/এফএস