গভীরতম নীলের সাগর- কোত দ্য'আজুর
২০২২ সালের গ্রীষ্মে ফ্রান্সের প্রোভঁস অঞ্চল ছিল ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। এর নির্জন উপসাগর, গোপন সমুদ্র সৈকত এবং সুন্দর ছোট্ট শহরগুলো অবকাশযাপনের জন্য দারুণ।
ক্যাসিস এবং ক্যালঁক
কোত দ্য'আজুর নামকরণ হয়েছে এর সমুদ্রের গভীর নীল রঙের জন্যই। ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগর উপকূলে অবস্থিত এই অঞ্চল। পশ্চিমে ক্যাসিস থেকে পূর্বে মঁতঁ পর্যন্ত এই বিস্তৃতি। মাছ ধরার জন্য বিখ্যাত ক্যাসিসে রয়েছে বিখ্যাত ক্যালঁক ন্যাশনাল পার্ক। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে খাড়া উঠে যাওয়া খাঁড়িগুলোতেও ঘুরতে যাওয়া যায় নৌকা নিয়ে।
উপকূলজুড়ে সড়ক
ক্যাসিস থেকে মঁতঁ পর্যন্ত উপকূল জুড়ে প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার সড়ক চলে গেছে। এই পথে পড়বে অনেক ছোট ছোট উপসাগর এবং বালুর সৈকত। চাইলে জিরিয়ে নিতে পারেন যেকোনো ছোট শহর বা গ্রামেও। এমনই এক ছোট্ট গ্রাম ল লাভাদুতে রয়েছে সাবেক ফার্স্ট লেডি কার্লা ব্রুনির বাড়িও।
সাঁ তপে
১৯৫৫ সালের সিনেমা 'অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড ওমেন' এর একটি বিখ্যাত দৃশ্য়ে দেখা গিয়েছিল সাঁ তপে সমুদ্রসৈকত। এই দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন ব্রিজিত বার্দো। এই সিনেমাই ব্রিজিতের ক্যারিয়ারে গতি নিয়ে আসে। পরিবর্তন ঘটে সাঁ তপে শহরেরও। ছোট এক শান্ত জনপদের পরিচয় ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে, পর্যটকদের কাছে পরিণত হয় অন্যতম আকর্ষণের স্থানে।
সাঁ রাফায়েল
রূপকথার মতো বৈচিত্র্যময় এই উপকূলটি ওয়াটারস্পোর্টসে আগ্রহীদের কাছে জনপ্রিয় এক গন্তব্য। এর আকার এতই বড় যে পুরো কোট দ্য'আজুর কেবল দূর থেকেই দেখতে পাওয়া যায়। তবে কাছ থেকে এর সৌন্দর্য উপভোগেরও সুযোগ রয়েছে। প্রায় সব শহর থেকেই দিনব্যাপী নৌভ্রমণের সুযোগ রয়েছে।
কর্নিশ দ্য'অর
সাগরপাড়ের পাহাড়ে বয়ে চলা রাস্তাগুলোকে বলা হয় 'কর্ণিশ'। ফ্রেজুস এবং মঁদেলিউ এর মধ্যের কর্নিশকে বিবেচনা করা হয় কোট দ্য'আজুর এর সবচেয়ে সুন্দর পথগুলোর একটি হিসাবে। সূর্যের আলোতে পাহাড়ের সোনালি রঙের কারণে এর নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু সতর্ক থাকুতে হবে। মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য দেখে প্রায়ই অনেক চালক হঠাৎ ব্রেক কষেন, যার ফলে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।
কান
কান শুনলেই অনেকের প্রথমেই মনে পড়ে শহরটিতে আয়োজিত বিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসবের কথা। প্রতি বছর গ্রীষ্মের শুরুতে পুরো বিশ্বের সিনেমা জগত কেন্দ্রীভূত হয় বুলেভার্ড দে লা ক্রসেতে। ১৮৬৮ সালে কৃত্রিম বালুকা সৈকত নির্মাণের ফলে একসময়ের মাছ ধরার গ্রামটি পরিণত হয় ইউরোপের অভিজাতদের আড্ডাখানায়।
আঁতিবে
১৯৪৬ সালে পাবলো পিকাসো আঁতিবের একটি পুরাতন বাড়িতে তিন মাস কাটিয়েছিলেন। স্প্যানিশ শিল্পী সেই সময় পেইন্টিং, স্কেচ, ট্যাপেস্ট্রি এবং সিরামিক অনেকগুলি কাজ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি শহর কর্তৃপক্ষকে সেসব কাজ দান করে দেন। এসব কাজ নিয়ে ১৯৬৬ সালে বাড়িটিতে একটি জাদুঘর চালু করা হয়।
নিস
পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত জুড়ে চলে যাওয়া সড়ক প্রোমেনাদ দেস অংলে এই শহরের প্রধান আকর্ষণ। ঊনিশ শতকে ব্রিটেনের ধনী অবকাশ যাপনকারীদের জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
মোনাকো
ফ্রেঞ্চ রিভেরার চমৎকার এই শহরটি! নাহ, শহর বলা ভুল হবে। মোনাকো ফ্রেঞ্চ রিভারাতে অবস্থিত হলেও আসলে এটি একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। ভ্য়াটিকানের পর বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র এটি। পুরো শহরের চারপাশ জুড়ে চলে গেছে ফর্মুলা ওয়ানের রেসিং ট্র্যাক। এখানেই অনুষ্ঠিত হয় মোনাকো গ্রাঁ প্রিঁ।
মঁতঁ
কান এবং নিস যখন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা অবকাশযাপনকারীদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, মঁতঁ শহরে পর্যটকদের বেশিরভাগই ফরাসি এবং ইটালিয়ান। শীতকালে কোত দ্য'আজুরের উষ্ণতম স্থান এই শহরটি। লেবুর ব্যাপক ফলন হয় এখানে। প্রতি ফেব্রুয়ারিতে আয়োজন হয় লেবু উৎসবের।