1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গণতন্ত্র সূচকে দশ ধাপ নামলো ভারত, বিতর্ক তুঙ্গে

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২৩ জানুয়ারি ২০২০

গণতন্ত্র সূচকে দশধাপ নীচে নেমে গেল ভারত৷ ২০০৬ সালের পর থেকে ভারত কখনো এত নীচে নামেনি৷ এই রিপোর্ট এলো এমন এক সময়ে যখন সিএএবিরোধী আন্দোলনে দেশ উত্তাল৷ রিপোর্ট নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক৷ 

https://p.dw.com/p/3Wfqq
ছবি: Surender Kumar/Student Union of Jamia Milia University

ডেমোক্রেসি ইনডেক্স ২০১৯৷ সেখানে দশ ধাপ নেমে গেল ভারত৷ যারা এই তালিকা তৈরি ও প্রকাশ করেছে, সেই ইকনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের মতে, ভারতের নীচে নামার মূল কারণ তিনটি৷ জম্মু ও কাশ্মীর, এনআরসি এবং সিএএ৷ সেই সূত্র ধরে নাগরিক অধিকার দমন করা৷ ফলে দশ এর স্কেলে ভারত পেয়েছে ৬.৯৷ সবমিলিয়ে ১৬৫টি দেশ ও দুটি অঞ্চলের মধ্যে ভারতের স্থান ৫১৷ ভারতের পক্ষে অস্বস্তির কথা হল, সংগঠনটি জানিয়েছে, ২০২০ সালে গণতন্ত্রের সূচকে ভারত আরও নামবে৷ কারণ, ডিসেম্বরে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস হয়েছে৷ এখন তা আইনে পরিণত হয়েছে৷ এই আইন বিভেদকামী বলে মনে করছে সংগঠনটি৷ আর ২০১৯ এর ক্ষেত্রে ভারতের নীচে নামার প্রধান কারণ হল, কাশ্মীর ও এনআরসি৷ সারা বিশ্বে ৫৪টি  দেশের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা খারাপ হয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে৷  তালিকায় এক নম্বরে আছে নরওয়ে৷ জার্মানি ১৩ নম্বরে, বাংলাদেশ ৮০, পাকিস্তান ১০৮, চীন ১৫৩ ও দক্ষিণ কোরিয়া ১৬৭ তম স্থানে আছে৷ 

বিরোধী দলগুলির মতে, কারণ শুধু এই তিনটিই নয়, আরও আছে৷ রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশজুড়ে বিষাক্ত প্রচার চালাচ্ছেন৷ তাঁরা ছাত্রদের কন্ঠস্বর রুদ্ধ করে দিতে চাইছেন, কোনও প্রতিবাদই তাঁরা বরদাস্ত করতে রাজি নন৷ সংসদ সহ সব প্রধান প্রতিষ্ঠানকে হত্যা করতে চাইছেন৷ সব চেয়ে বড় কথা, যে গণতান্ত্রিক ধারণা ও মূল্যবোধ, যা আমরা স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে পেয়েছি, তাকেও নষ্ট করে দিতে চাইছেন। পশ্চিমবঙ্গ দেশকে দেখিয়ে দিয়েছে, কী ভাবে সিএএ নিয়ে প্রতিবাদ করতে হয়৷ দেশজুড়ে ছাত্রছাত্রীরা সরকারের ওপর ক্রুদ্ধ৷ এরকম অবস্থা হলে সরকার কতটা সঙ্কটে পড়ে তা সকলেই জানেন৷''

এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে, ছাত্রছাত্রীরা দেশজুড়ে সিএএ, এনআরসি নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে৷ যেভাবে জামিয়া, আলিগড়, জেএনইউতে বিক্ষোভ দমন করা হয়েছে তার প্রতিবাদ হচ্ছে৷  ছাত্রদের রোষ বাড়লে তার প্রভাব পড়ে৷ প্রবীণ সাংবাদিক ও পিইউডিআর নেতা আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''আমার ফোন তো সরকার ট্যাপ করে৷ ভারতে কার কার ফোন ট্যাপ করা হয়, তা নিয়ে কানাডার সংস্থা তালিকা দিয়েছিল, তার মধ্যে আমার নামও ছিল৷ আর নাগরিক আন্দোলন দমন করার চেষ্টা আগের আমলেও হয়েছে৷ আন্দোলনে লাঠি, গুলি চলেছে৷ কিন্তু পরে তারা কিছু দাবি মেনে নিয়েছে৷ অনেক ক্ষেত্রে আন্দোলনের ফলে সরকারের সিদ্ধান্তে বদল এসেছে৷  কিন্তু বর্তমান সরকার অনড় মনোভাব নিয়ে চলছে৷ ফলে গণতন্ত্র সূচকে ভারত আরও নীচে নামতে পারে৷''

বিজেপি অবশ্য এই সমীক্ষার স্বচ্ছ্বতা নিয়ে, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''কিছু পশ্চিমী সংস্থা এই ধরনের সমীক্ষা করে। তাদের স্বচ্ছ্বতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে৷ আমি যা দেখেছি, কাশ্মীরের জন্যই মূলত ভারত নীচে নেমে এসেছে৷ ওদের মনে রাখতে হবে, কাশ্মীরে ৪৫ হাজার মানুষ সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছেন৷ সরকার সেখানে স্বাভাবিকতা আনার জন্য কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে৷ তাতেই আপত্তি ওই সংস্থার৷ এটা দুর্ভাগ্যজনক৷'' তবে এই বিজেপি নেতাও প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিচ্ছেন, কাশ্মীরে সাময়িকভাবে সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর বিধিনিষেধ চাপিয়েছিল৷ সায়ন্তন বলেছেন, ''এক মাসের জন্য কাশ্মীরে খুবই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল৷ তাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে ও হচ্ছে৷ কিন্তু সরকার কোথাও গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ব্যবস্থার ওপর হাত দিচ্ছে, এমন উদাহরণ নেই৷''

কিন্তু সুপ্রিম কোর্টই সম্প্রতি কাশ্মীরে ইন্টারনেট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিল, নেট পরিষেবা পাওয়া লোকের মৌলিক অধিকার৷ যখন তখন, যত্রতত্র ১৪৪ ধারা জারিকে ঔপনিবেশিক শাসনের কথা মনে পড়িয়ে দেয় বলেও জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ উত্তর প্রদেশে এখনও বারবার করে অভিযোগ উঠছে, জোর করে সেখানে প্রতিবাদ থামাবার চেষ্টা হচ্ছে৷ সে কারণে এই রিপোর্ট সরকারের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷