গণতন্ত্র সূচকে দশ ধাপ নামলো ভারত, বিতর্ক তুঙ্গে
২৩ জানুয়ারি ২০২০ডেমোক্রেসি ইনডেক্স ২০১৯৷ সেখানে দশ ধাপ নেমে গেল ভারত৷ যারা এই তালিকা তৈরি ও প্রকাশ করেছে, সেই ইকনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের মতে, ভারতের নীচে নামার মূল কারণ তিনটি৷ জম্মু ও কাশ্মীর, এনআরসি এবং সিএএ৷ সেই সূত্র ধরে নাগরিক অধিকার দমন করা৷ ফলে দশ এর স্কেলে ভারত পেয়েছে ৬.৯৷ সবমিলিয়ে ১৬৫টি দেশ ও দুটি অঞ্চলের মধ্যে ভারতের স্থান ৫১৷ ভারতের পক্ষে অস্বস্তির কথা হল, সংগঠনটি জানিয়েছে, ২০২০ সালে গণতন্ত্রের সূচকে ভারত আরও নামবে৷ কারণ, ডিসেম্বরে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস হয়েছে৷ এখন তা আইনে পরিণত হয়েছে৷ এই আইন বিভেদকামী বলে মনে করছে সংগঠনটি৷ আর ২০১৯ এর ক্ষেত্রে ভারতের নীচে নামার প্রধান কারণ হল, কাশ্মীর ও এনআরসি৷ সারা বিশ্বে ৫৪টি দেশের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা খারাপ হয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে৷ তালিকায় এক নম্বরে আছে নরওয়ে৷ জার্মানি ১৩ নম্বরে, বাংলাদেশ ৮০, পাকিস্তান ১০৮, চীন ১৫৩ ও দক্ষিণ কোরিয়া ১৬৭ তম স্থানে আছে৷
বিরোধী দলগুলির মতে, কারণ শুধু এই তিনটিই নয়, আরও আছে৷ রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশজুড়ে বিষাক্ত প্রচার চালাচ্ছেন৷ তাঁরা ছাত্রদের কন্ঠস্বর রুদ্ধ করে দিতে চাইছেন, কোনও প্রতিবাদই তাঁরা বরদাস্ত করতে রাজি নন৷ সংসদ সহ সব প্রধান প্রতিষ্ঠানকে হত্যা করতে চাইছেন৷ সব চেয়ে বড় কথা, যে গণতান্ত্রিক ধারণা ও মূল্যবোধ, যা আমরা স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে পেয়েছি, তাকেও নষ্ট করে দিতে চাইছেন। পশ্চিমবঙ্গ দেশকে দেখিয়ে দিয়েছে, কী ভাবে সিএএ নিয়ে প্রতিবাদ করতে হয়৷ দেশজুড়ে ছাত্রছাত্রীরা সরকারের ওপর ক্রুদ্ধ৷ এরকম অবস্থা হলে সরকার কতটা সঙ্কটে পড়ে তা সকলেই জানেন৷''
এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে, ছাত্রছাত্রীরা দেশজুড়ে সিএএ, এনআরসি নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে৷ যেভাবে জামিয়া, আলিগড়, জেএনইউতে বিক্ষোভ দমন করা হয়েছে তার প্রতিবাদ হচ্ছে৷ ছাত্রদের রোষ বাড়লে তার প্রভাব পড়ে৷ প্রবীণ সাংবাদিক ও পিইউডিআর নেতা আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''আমার ফোন তো সরকার ট্যাপ করে৷ ভারতে কার কার ফোন ট্যাপ করা হয়, তা নিয়ে কানাডার সংস্থা তালিকা দিয়েছিল, তার মধ্যে আমার নামও ছিল৷ আর নাগরিক আন্দোলন দমন করার চেষ্টা আগের আমলেও হয়েছে৷ আন্দোলনে লাঠি, গুলি চলেছে৷ কিন্তু পরে তারা কিছু দাবি মেনে নিয়েছে৷ অনেক ক্ষেত্রে আন্দোলনের ফলে সরকারের সিদ্ধান্তে বদল এসেছে৷ কিন্তু বর্তমান সরকার অনড় মনোভাব নিয়ে চলছে৷ ফলে গণতন্ত্র সূচকে ভারত আরও নীচে নামতে পারে৷''
বিজেপি অবশ্য এই সমীক্ষার স্বচ্ছ্বতা নিয়ে, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''কিছু পশ্চিমী সংস্থা এই ধরনের সমীক্ষা করে। তাদের স্বচ্ছ্বতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে৷ আমি যা দেখেছি, কাশ্মীরের জন্যই মূলত ভারত নীচে নেমে এসেছে৷ ওদের মনে রাখতে হবে, কাশ্মীরে ৪৫ হাজার মানুষ সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছেন৷ সরকার সেখানে স্বাভাবিকতা আনার জন্য কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে৷ তাতেই আপত্তি ওই সংস্থার৷ এটা দুর্ভাগ্যজনক৷'' তবে এই বিজেপি নেতাও প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিচ্ছেন, কাশ্মীরে সাময়িকভাবে সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর বিধিনিষেধ চাপিয়েছিল৷ সায়ন্তন বলেছেন, ''এক মাসের জন্য কাশ্মীরে খুবই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল৷ তাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে ও হচ্ছে৷ কিন্তু সরকার কোথাও গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ব্যবস্থার ওপর হাত দিচ্ছে, এমন উদাহরণ নেই৷''
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টই সম্প্রতি কাশ্মীরে ইন্টারনেট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিল, নেট পরিষেবা পাওয়া লোকের মৌলিক অধিকার৷ যখন তখন, যত্রতত্র ১৪৪ ধারা জারিকে ঔপনিবেশিক শাসনের কথা মনে পড়িয়ে দেয় বলেও জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ উত্তর প্রদেশে এখনও বারবার করে অভিযোগ উঠছে, জোর করে সেখানে প্রতিবাদ থামাবার চেষ্টা হচ্ছে৷ সে কারণে এই রিপোর্ট সরকারের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷