1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্ষমতাসীন দলের তারকা বিধায়ক হলেই কি মারধর করা যায়?

১৮ জুন ২০২৪

অভিনেতা ও তৃণমূল বিধায়ক সোহম চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে রেস্তোরাঁ মালিককে মারধর করা নিয়ে পুলিশকে তদন্ত চালিয়ে যেতে বললো কলকাতা হাইকোর্ট।

https://p.dw.com/p/4hBEt
অভিনেতা ও বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী।
রেস্তোরাঁ মালিককে মারধর করে প্রবল বিতর্ক ও মামলার মুখে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক ও অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী। ছবি: Subrata Goswami/DW

নিউটাউনের এক রেস্তোরাঁ মালিককে বেধড়ক মেরে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন অভিনেতা ও তৃণমূল বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ৭ জুন, কলকাতার নিউটাইনে একটি রেস্তোরাঁয়। সেখানে ছাদে শুটিং করছিলেন সোহম। রেস্তোরাঁর সামনে সোহম ও শুটিং ইউনিটের গাড়ি রাখা ছিল। সেখান থেকে একটি গাড়ি সরানোর কথা বলেছিলেন রেস্তোরাঁর কর্মীরা ও মালিক আনিসুল আলম।

সেখান থেকেই বিরোধের সূত্রপাত। আনিসুল আলম সংবাদমাধ্যমকে যে সিসিটিভি ফুটেজ দিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, তর্কাতর্কির পর সোহম আনিসুলের গলার কাছে ধরে তাকে ধাক্কা মারেন। তিনি মাটিতে পড়ে যান। সোহম তখন লাথি মারেন। আনিসুলের অভিযোগ, সোহমের দেহরক্ষীরা রেস্তোরাঁর কর্মীদের খুঁজে বের করে মারতে থাকেন।

এরপর আনিসুল থানায় গিয়ে এফআইআর করেন। সোহমও রেস্তোরাঁ মালিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন।

আনিসুল কী বলেছেন

আনিসুল বলেছেন, ''সোহম সাত-আটজন দেহরক্ষী নিয়ে আমাকে মারতে থাকে। সোজা চোখের নিচে একটা ঘুষি মারে। জামা ছিঁড়ে যায়। লাথি মেরেছে। কর্মীরা বাঁচাতে এলে তাদের মারে।''

তার অভিযোগ, ''পুলিশ ওকে কোথায় গ্রেপ্তার করবে তা নয়, আমাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। আমাকে কিছুক্ষণ বসিয়ে রেখে ছেড়ে দেয়।''

আনিসুল জানিয়েছেন, তাকে ও তার পরিবারকে নিয়মিত হুমকি দেয়া হচ্ছে। প্রাণে মেরে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। রেস্তোরাঁ বন্ধের হুমকি দেয়া হচ্ছে। তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। 

সোহম যা বলেছেন

সংবাদমাধ্যমকে সোহম জানিয়েছেন, ''আমি শুটিং করছিলাম। হঠাৎ চেঁচামিচি শুনি। যেটুকু দেখলাম। আমার কর্মীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি মারামারি হচ্ছে। তারপর ওরা আমাকে গালাগালি করেছে, অভিষেককে গালাগালি করেছে। এরপর মাথাটা গরম হয়ে যায়। তখন বুঝিয়ে দিয়েছি, সে কে। মোটামুটি এইটুকুই হয়েছে।''

সোহম বলেন, ''এরা খুবই উদ্ধত। গালাগালি করবে, অভিষেককে নিয়ে বলবে, তা তো মানা যায় না। আমি চড় মেরেছি। ধাক্কা মেরেছি। টিভির পর্দায় যখন অভিনয় করি, তখন অন্য সত্ত্বা। কিন্তু দিনের শেষে আমরা মানুষই। আমাদেরও আবেগ আছে। তবে এটা ছোটখাট বিষয়। স্থানীয় থানায় জানিয়েছি। ওরা এসেছিল।''

সোহমের আগাম জামিন

এরপর গত বৃহস্পতিবার সোহম বারাসতের আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করেন। তিনি দুই হাজার টাকার বন্ডে আগাম জামিন পেয়ে যান।

বারাসত আদালতে গিয়েছিলেন সোহম। তবে সেখানেও তিনি নতুন একটি বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন। তিনি দীর্ঘক্ষণ সরকারি আইনজীবীর নির্ধারিত ঘরে গিয়ে অপেক্ষা করেন। একজন অভিযুক্ত আদালতে না বসে কেন সরকারি আইনজীবীর বরাদ্দ ঘরে বসেছেন সেই প্রশ্ন উঠেছে।

পরে সোহম এবিপি আনন্দকে বলেছেন, ''আমি দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আমার মাথা গরম হয়েছিল। আপনারা যে ভিডিওটা দেখেছেন, তার আগে হোটেলের বাইরের ঘটনাটা নেই। ওরা খুবই খারাপ ব্যবহার করেছে। আমরা কখনই মানুষের অসুবিধা করে কাজ করি না। ওরা প্রথমে তুই-তোকারি করে। অভিষেকের নামে খারাপ কথা বলে। ওদের কর্মীরা আমার দেহরক্ষী পুলিশকে মারতে থাকে। পুলিশ প্রথমে কিছু করেনি। পরে তারা ব্যবস্থা নেয়। পুলিশই ব্যবস্থা নিতে পারত। আমার নিচে গিয়ে এতে জড়িয়ে পড়াটা ঠিক হয়নি। রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ বাইরের ভিডিওটা প্রকাশ করুক। তাহলেই পুরোটা বোঝা যাবে।''

হাইকোর্টের নির্দেশ

বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানিয়েছেন, বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট তদন্তের কাজ চালিয়ে যাবেন।

আদালতে আনিসুলের আইনজীবী বলেন, পুলিশ জোর করে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষকে থানায় নিয়ে যায় এবং কী অভিযোগ করতে হবে সেটাও ঠিক করে দেয়। সরকারি আইনজীবীর যুক্তি ছিল, এফআইআর করতে একদিন দেরি হলো কেন? এরা তো কেউ গ্রামবাসী নন।

বিচারপতি সিনহা নির্দেশ দেন, মামলাকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সব তথ্যপ্রমাণ রেখে দিতে হবে। ৪ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

টলিউডের প্রতিক্রিয়া

সোহমের বন্ধু,সহ-অভিনেতা ও তৃণমূল সাংসদ দেব বলেছেন, "সোহমও একজন জনপ্রতিনিধি। আমি ওকে বুদ্ধিমান বলে ভাবতাম। সোহম আমার খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু বন্ধু বলে আমি সব কিছু সমর্থন করতে পারি না। এক্ষেত্রে সোহমের ক্ষমা চাওয়া উচিত। সোহমের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, ও ঠিক কাজ করেনি।"

অভিনেতা ও পরিচালক কৌশিক সেন হিন্দুস্তান স্যান্ডার্ডকে বলেছেন, ''সোহম ওখানে আমাদের প্রতিনিধি হয়েই গেছিলেন। এই ঘটনায় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মুখ পুড়েছে। সোহমের উচিত দেবকে অনুসরণ করা। তৃণমূলে গুণ্ডাদের সংখ্যা প্রচুর। তা আর বাড়াবার দরকার নেই। হিরণ দেবকে নিয়ে এত বাজে কথা বলেছে, দেব একটাও জবাব দেননি।''

অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ''সোহমকে অনেকদিন ধরে চিনি। ও এভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা জানা ছিল না। অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা।''

অভিনেত্রী পায়েল সরকার বলেছেন, ''সোহম ক্ষমা চেয়েছে। মনে হয় উত্তেজনার বশে হয়ে গেছে। তবে ও পাবলিক ফিগার বলে আরেকটু সংযত হওয়া উচিত ছিল।''

অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র বলেছেন, ''এরকম ঘটনা আগেও হয়েছে। সোহমকে নরম মনের ও ভালো মানুষ বলেই চিনি। ও ক্ষমা চেয়েছে। ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলে কেউ ছোট হয়ে যায় না।''

জিএইচ/এসজি (এবিপি আনন্দ, হিন্দুস্তান টাইমস)