ক্রেমলিনের হামলার শিকার পুটিন সমালোচকেরা
ভাগনার প্রধান প্রিগোজিন বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে৷ বিস্তারিত এখনও অস্পষ্ট৷ তবে এ ঘটনা রাশিয়ায় ভ্লাদিমির পুটিনের সমালোচকদের জীবন যে স্বাভাবিক বা নিরাপদ থাকে না- সেই আলোচনাকে আবার সামনে নিয়ে এসেছে৷
রাভিল মাগানভ, সেপ্টেম্বর ২০২২
রাশিয়ার তেল জায়ান্ট লুকওয়েলের চেয়ারম্যান মাগানভ মস্কোর এক হাসপাতালের ছয় তলার জানালা থেকে পড়ে মারা যান৷ হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে হতাশায় ভুগছিলেন বলে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশের ধারনা৷ ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানানো প্রথম বড় রুশ কোম্পানি ছিল লুকওয়েল৷
আলেক্সেই নাভালনি, আগস্ট ২০২০
পুটিনের অন্যতম কট্টর সমালোচক নাভালনি বিমানে করে সাইবেরিয়ার ওমস্ক থেকে মস্কো যাওয়ার পথে ফ্লাইটের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কোমায় চলে যান৷ পরে তাকে চিকিৎসা দিতে জার্মানির শারিটে হাসপাতালে পাঠানো হয়৷ সেখানে তার শরীরে রাসায়নিক এজেন্ট নোভিচক পাওয়া যায়৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে এটি তৈরি করা হয়েছিল৷
সেলিমখান খানগোশভিলি, আগস্ট ২০১৯
দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন তিনি৷ জার্মানির বার্লিনে প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ তাকে হত্যার দায়ে রাশিয়ার গোয়েন্দা ভাদিম ক্রাসিকভকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ দুই বছর পর তাকে আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷
পিওটর ভেরজিলভ, সেপ্টেম্বর ২০১৮
মস্কোর এক আদালতে হাজির হওয়ার পর হাঁটতে না পারা, চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া এবং কথা বলতে সমস্যা হওয়ার অভিযোগ করেছিলেন আর্টিস্ট ও পুসি রায়ট অ্যাক্টিভিস্ট ভেরজিলভ৷ পুলিশি নির্যাতনের দিকে বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করতে ২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের সময় মস্কোর মাঠে ঢুকে দৌ়ড় দিয়েছিলেন তিনি৷ ভেরজিলভকেও শারিটে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল৷ ডাক্তারদের ধারনা তাকে বিষ দেয়া হয়েছিল৷
সের্গেই স্ক্রিপাল, মার্চ ২০১৮
রাশিয়ার ডাবল এজেন্ট স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়াকে ব্রিটেনের সলসবেরি শহরের পার্কের বেঞ্চে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল৷ তাদের উপরও নোভিচক হামলা হয়েছিল৷ তবে দুজনই বেঁচে যান৷ ব্রিটিশ পুলিশের ধারনা স্ক্রিপালের দরজার হ্যান্ডেলে নোভিচক মেশানো ছিল৷
বরিস নিয়েমৎসফ, ফেব্রুয়ারি ২০১৫
রাশিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পুটিন সমালোচক নিয়েমৎসফকে ক্রেমলিনের কাছে একটি সেতু পার হওয়ার সময় গুলি করে হত্যা করা হয়৷ তার ঘণ্টা তিনেক আগে তিনি বেতারের পুটিনের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন৷ তাকে হত্যার দায়ে ২০১৭ সালে তিন চেচেনকে অনেকদিনের জন্য কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ তবে কে তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং উদ্দেশ্য কী ছিল, তা এখনও অজানা৷
নাটালিয়া এসতেমিরোভা, জুলাই ২০০৯
রাশিয়ার মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়ালের বোর্ড সদস্য এসতেমিরোভাকে চেচনিয়ার গ্রোজনির বাড়ি থেকে অপহরণের কয়েক ঘণ্টা পর হত্যা করা হয়৷ তিনি রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ও পুটিনের সমর্থক চেচেন নেতা কাদিরভের ডেথ স্কোয়াডের বিরুদ্ধে অপহরণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিলেন৷ তার হত্যার তদন্তে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি৷
আলেকজান্ডার লিটভিনেঙ্কো, নভেম্বর ২০০৬
রাশিয়ার এই সাবেক গোয়েন্দা পরে পুটিনের সমালোচক হয়ে উঠেছিলেন৷ লন্ডনের একটি হোটেল বারে চায়ে প্লুটোনিয়াম-২১০ মিশিয়ে তাকে হত্যা করা হয়৷ ‘ব্লোয়িং আপ রাশিয়া’ বইয়ে লিটভিনেঙ্কো রাশিয়ার গোয়েন্দা বিভাগের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালে বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে বিস্ফোরণ ও অন্যান্য সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে চেচনিয়া যুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি ও পুটিনকে ক্ষমতায় আনার অভিযোগ করেছিলেন৷
আনা পলিটকোভস্কায়া, অক্টোবর ২০০৬
রাশিয়ার ‘নভায়া গাজিয়েটা’ পত্রিকার অনুসন্ধানী সাংবাদিক পলিটকোভস্কায়া চেচনিয়া যুদ্ধে রুশ বাহিনীর যুদ্ধাপরাধ তুলে ধরেছিলেন৷ তাকে বাসার লিফটের ভেতর গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল৷ তাকে হত্যার দায়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল৷
সের্গেই ইউশেনকভ, এপ্রিল ২০০৩
সংসদের নিম্নকক্ষের সদস্য ও লিবারেল রাশিয়া পার্টির সহ-প্রতিষ্ঠাতাকে মস্কোতে তার বাড়ির বাইরে কয়েকটি গুলি করা হয়েছিল৷ তিনি চেচেন যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির কট্টর সমালোচক ছিলেন৷