1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্রিকেটাররা একটু বেশিই প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলেছে: সুজন

নোমান মোহাম্মদ
২৯ অক্টোবর ২০২১

বিশ্বকাপের মাঠে পারফর্ম করতে পারছে না বাংলাদেশ৷ কিন্তু বিসিবি প্রেসিডেন্ট, অধিনায়ক, সিনিয়র ক্রিকেটাররা মিডিয়ায় নানা ধরনের কথাবার্তা বলেই চলেছেন৷ এতে কি শেষ পর্যন্ত দলের খেলাটাই আরো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না?

https://p.dw.com/p/42MFP
Pakistan vs Bangaldesch Vorbereitungen Cricket T20 Gaddafi Stadion in Lahore
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali

এসব নিয়ে কথা বলতে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বর্তমান বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন ডয়চে ভেলের মুখোমুখি হয়েছিলেন বৃহস্পতিবার৷

ডয়েচে ভেলে : একটা প্রত্যাশা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে গিয়েছিল৷ খেলোয়াড়রাও সেমিফাইনাল স্বপ্নের কথা বলেছিলেন৷ সে দৃষ্টিকোণ থেকে সুপার টুয়েলভের প্রথম দুটো ম্যাচের পর বাংলাদেশ যেখানে আছে, সেটি কি কিছুটা হতাশার?

খালেদ মাহমুদ সুজন : অবশ্যই৷ সবার আশা ছিল, আমরা ভালো করব৷ দলের ভারসাম্য, সিনিয়র খেলোয়াড়দের উপস্থিতি সব মিলিয়ে আমারও মনে হয়েছিল, আমরা হয়তো সেমিফাইনাল খেলতে পারি৷ ভালো ক্রিকেট খেললে সে সুযোগ থাকবে৷ কিন্তু আমরা যে রকম খেললাম, সেটি অবশ্যই হতাশার৷ স্কটল্যান্ড, ওমান, পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে প্রথম রাউন্ডে আমাদের কোনো সমস্যা হবে, ভাবিনি৷ এই দলগুলোকে আমরা সবসময় হারানোর ক্ষমতা রাখি৷ এ বিশ্বাস আমার এখনও আছে৷ স্কটল্যান্ডের সঙ্গে ১০টা ম্যাচ খেললে ১০টাই জিততে পারি৷ কিন্তু ওই একটা দিন আমরা খারাপ খেলেছি৷ ক্রিকেটে খারাপ দিন তো আসেই৷ আমার কাছে প্রসেসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ আমাদের সেই প্রসেস ঠিক ছিল না৷ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে প্রসেস ঠিক ছিল৷ কিন্তু ম্যাচটি হারলাম বোলিংয়ের সময় পরিকল্পনার ভুলে৷

বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে যেমন উইকেটে খেলেছে বাংলাদেশ, সেটাও কি বিশ্বকাপে ধুঁকতে থাকার একটা কারণ বলে আপনার কাছে মনে হয়?

খালেদ মাহমুদ সুজন : আত্মবিশ্বাসের দিক থেকে এই প্রস্তুতি ভালো ছিল৷ কিন্তু আত্মবিশ্বাস দিয়ে সবসময় কাজ হয় না৷ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছি, সে কারণে সবাই খুশি ছিলাম৷ তবে বিশ্বকাপের জন্য যথার্থ প্রস্তুতির কথা যদি বলি, তা হয়নি৷

বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে গণমাধ্যমে এসে সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকরা যেমন কথাবার্তা বলেছেন, তাতে কি নিজেদের উপরই চাপ বাড়িয়েছেন কিনা? আর এর প্রভাব দলের পারফরম্যান্সে আপনি দেখছেন?

খালেদ মাহমুদ সুজন : অবশ্যই৷ যখন ওরা এসব কথাবার্তা বলেছে, তখনই আমার মনে হয়েছে, ওদের মন ক্রিকেট থেকে সরে গেছে৷ কে কী বলল, সেগুলো দেখার সময় তো থাকার কথা নয়৷ মানুষের মুখ আপনি বন্ধ করতে পারবেন না৷ বাংলাদেশ যখন জেতে, তখন মানুষ হই চই করে, রঙ খেলে, মিছিল করে, কত কিছু করে৷ তো আমরা যখন খারাপ খেলব, স্কটল্যান্ডের মতো দলের কাছে হারব, তখন কি সমালোচনা আসবে না? এটি কি স্বাভাবিক না? খুবই স্বাভাবিক৷ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা যখন পারফর্ম করে, সবাই তালি দেয়, বাহবা দেয়৷ যখন পারফর্ম করবে না, তখন তো দুয়েকটা কথা বলবেই৷ কারণ বাংলাদেশ ক্রিকেট সবারই আবেগের জায়গা৷ আমি তো ফেসবুক দেখি না, কিন্তু শুনি যে সবাই ক্রিকেট নিয়ে কথা বলে৷ ছেলেরা কেন সেদিকে মনোযোগ দেবে? আর বোর্ড তো অভিভাবক৷ বোর্ড অনেক কথাই বলতে পারে৷ আর সবাই জানি, আমাদের বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনেক আবেগপ্রবণ৷ তো আমরা যখন স্কটল্যান্ডের কাছে হেরেছি, ওমানের সঙ্গে অমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, তখন স্বাভাবিকভাবে সেটি ওনার কাছেও ভালো লাগেনি৷ আর পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে জেতার পর তো বিশাল কৃতিত্ব দাবি করার কিছু নেই৷ এটি কি অমন কিছু? আমি জানি, ক্রিকেটারদের মনে কষ্ট আছে৷ ওরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়৷ যেহেতু আমরাও খেলোয়াড় ছিলাম, আমরা মনে করতাম, মানুষ আমাদের নিয়ে এত কথা বলে কেন? কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি এসবের মধ্যে জড়াব কেন? দরকার নাই তো৷ জবাব দেবার জায়গা একটাই, মাঠে ব্যাট আর বলে৷ পারফর্ম করেই জবাব দিতে হয়৷ আমার তাই মনে হয়, ক্রিকেটাররা একটু বেশিই প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলেছে৷ গণমাধ্যমে এসব না বলে ক্রিকেট সম্পর্কিত কথা বললেই বেশি যুক্তিসঙ্গত হত৷

বিসিবি প্রেসিডেন্টের কথায় ক্রিকেটাররা কষ্ট পেয়েছেন, এটা বোঝা যায়৷ আপনি কি মনে করেন, ব্যাপারটা নিয়ে গণমাধ্যমে না বলে বোর্ড ও ক্রিকেটার নিজেদের মধ্যেই কথা বলে সমাধান করা উচিত ছিল?

খালেদ মাহমুদ সুজন : অবশ্যই৷ একটা জবাবদিহিতার জায়গা তো ক্রিকেটারদের থাকা উচিত৷ কারণ ওরা বোর্ডের বেতনভুক্ত৷ চাকরিতে কেউ ভুল করলে এর জবাবদিহিতা চাওয়া হয় না? উইকেট খারাপ বানালে কিউরেটরের কাছে জানতে চাওয়া হয় না? ওই কিউরেটর যেমন পেশাদার, তেমনি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিংবা সাকিব কিংবা তামিম কিংবা মুশফিক -- সবাই তো পেশাদার৷ বোর্ড থেকে বেতন পায়৷ জবাবদিহিতার একটা ব্যাপার তাই আছেই৷ এখন আপনি চাকুরি করা অবস্থায় বোর্ডের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবেন কিনা, সেটা তো আমি জানি না৷ এটা ওদের বোঝা উচিত ছিল৷ এটা একটা আবেগের ব্যাপার হয়ে গিয়েছে৷ এখানে লুকোচুরির কিছু ছিল না৷ অমন পারফরম্যান্সের কারণে সবাই কষ্ট পেয়েছে৷ পাপন ভাই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, ওরা মিডিয়ায় এসে কথা বলার পর৷ ওদের এই প্রতিক্রিয়া কি বোর্ডকেই দিল, নাকি বোর্ড প্রেসিডেন্টকে দিল, নাকি সাধারণ মানুষকে দিল -- এটা তো আমরা জানি না৷ কাউকে তো উল্লেখ করেছি৷ বলেছে, আয়নায় নিজের দিকে তাকাতে৷ এখন আয়নায় কারা তাকাবে? বোর্ড প্রেসিডেন্ট তাকাবে, নাকি বোর্ড পরিচালকরা তাকাবে -- আমিই তো বুঝতে পারছি না৷ আমার কথা হচ্ছে, ওরা কেন এদিকে মনোযোগ দিচ্ছে? এতে তো নিজের উপরই চাপ তৈরি করছে৷ বরং ওদের ভাবা উচিত ছিল, লোকে যাই বলুক আমরা জানি আমরা ভালো দল৷ আমরা ভালো ক্রিকেট খেলে ফিরে আসব৷ 

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যদি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এত প্রভাবিত হন, যদি সে চাপ না নিতে পারেন, তাহলে বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়েও কি অন্তত ক্রিকেটাররা নিজেদের ফেসবুক থেকে সরিয়ে রাখতে পারেন কিনা?

খালেদ মাহমুদ সুজন : ঠিক তাই৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় তো মানুষ যে কোনো কিছুই বলতে পারে৷ তাতে যদি কারো সমস্যা হয়, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার না করলেই হয়৷ আমি দেখব না৷ এড়িয়ে যাব৷ এটা তো খুবই সোজা একটা কথা৷ আমি জানি, ক্রিকেটাররা সবাই শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করে৷ কিন্তু মাঠের বাইরে থেকে দেখে যা মনে হচ্ছে, ওরা হান্ড্রেট পার্সেন্ট অ্যাফোর্ট দিচ্ছে না৷ এখন সাধারণ একটা মানুষের মন্তব্যও যদি ক্রিকেটারদের গায়ে লাগে, তাহলে তো সমস্যা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য