সাহিত্যে নোবেল মানরো
১১ অক্টোবর ২০১৩অ্যাকাডেমির স্থায়ী সচিব পেটার এংলুন্ড বলেছেন, মানরো ছোটগল্প রচনার যে ধারাটিকে পূর্ণ করেছেন, তার সূচনায় রয়েছেন ঊনবিংশ শতাব্দীর রুশ লেখক আন্টন চেকভ, যাকে চিরকালের সেরা ছোটগল্প রচয়িতাদের মধ্যে ধরা হয়৷ বলতে কি, মানরোকে ইতিপূর্বেও বহুবার চেকভের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে৷
অ্যাকাডেমি তার সাইটেশনে মানরোর লেখার যে দিকটি তুলে ধরেছে, সেটি হলো: সাধারণ, দৈনন্দিন জীবনের ঘটনার মধ্যে হঠাৎ এমন এক অনুভূতি ও উপলব্ধির ঝলক, যার ফলে গোটা কাহিনিটিই উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, মানব অস্তিত্বের বুনিয়াদি প্রশ্নগুলো যেন বিদ্যুতের রেখার মতো মুহূর্তে দেখা দিয়ে আবার মিলিয়ে যায়৷
অ্যালিস মানরোর এ যাবৎ ১৪টি ছোটগল্পের সংকলন প্রকাশিত হয়েছে৷ এংলুন্ড বিশেষ করে ১৯৮২ সালে প্রকাশিত ‘‘দ্য মুন্স অফ জুপিটার''-এর কথা বলেন৷ সেখানেই মানরোর শৈলি তার আকার পায়, বলেন এংলুন্ড৷ – কৈশোরেই লেখা শুরু করেন মানরো৷ তাঁর প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালে৷
অ্যালিস মানরোর জন্ম ক্যানাডার অন্টারিও প্রদেশে৷ মা ছিলেন স্কুলের শিক্ষিকা, বাবা একটি ফক্স ফার্ম চালাতেন, যেখানে শেয়াল রেখে তাদের চামড়া বিক্রি করা হয়৷ স্কুল শেষ করার পর মানরো পশ্চিম অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও ইংরিজি সাহিত্য পড়তে শুরু করেন৷ ১৯৫১ সালে বিবাহ৷ পড়াশুনো ভঙ্গ করে, বাস উঠিয়ে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে গিয়ে স্বামীর সঙ্গে একটি বইয়ের দোকান খোলেন অ্যালিস মানরো৷ লেখালিখি তার আগেই শুরু হয়েছিল এবং আজও থামেনি৷
সেই লেখালিখির একটা আন্দাজ দিতে গেলে তাঁর সর্বাধিক পরিচিত ছোটগল্পটির নাম করা যেতে পারে: ‘‘দ্য বেয়ার কেম ওভার দ্য মাউন্টেইন৷'' এক মহিলা তাঁর স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছেন এবং শেষমেষ তাঁর স্বামীর সঙ্গে একমত হলেন যে, তাঁর একটি নার্সিং হোমে যাওয়া উচিত৷ কাহিনির সূচনাতেই আমরা জানতে পারি যে, স্বামীটি মহিলার প্রতি সবসময়ে বিশ্বস্ত ছিলেন না – অর্থাৎ তাঁর অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল – এবং এই বিশ্বাসহীনতা সম্পর্কে সেই স্বামীর সবসময়ে যে অনুতাপবোধ ছিল, এমনও নয়৷ ইত্যবসরে সেই মহিলা ঐ নার্সিং হোমেরই এক অন্য পুরুষের প্রেমে পড়েছেন৷ সাধে কি মানরো একবার বলেছিলেন, তিনি মানবিক সম্পর্কের ‘‘তলপেট'' নিয়ে লেখেন৷
সুইডিশ অ্যাকাডেমির স্থায়ী সচিব পেটার এংলুন্ড বলেছেন: মানরো যে মাত্র বিশ পাতায় অনেক কিছু বলে ফেলতে পারেন, শুধু তাই নয়৷ ঐ বিশ পাতায় তিনি দশকের পর দশক অতিক্রম করতে পারেন৷ – জীবনের আটটি দশক অতিক্রম করার পর মানরো গত জুনে জানান যে, তিনি লেখা বন্ধ করার কথা ভাবছেন৷ এবার নোবেল পুরস্কার পাবার পরও তাঁকে বলতে শোনা গেছে, তিনি সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কারণ দেখেন না, ‘‘কেননা আমার বয়স হচ্ছে''৷
এসি/এসবি (ডিপিএ, এপি, এএফপি)