1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোরিয়ায় করোনা: উত্তরে লুকোচুরি, দক্ষিণে ধর্মঘটে ডাক্তার

২৭ আগস্ট ২০২০

আশেপাশের সব দেশই করোনা সংক্রমণে বিধ্বস্ত৷ কিন্তু উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বলছেন তার দেশে কোনো সংক্রমণই নেই৷ অন্যদিকে উপদ্বীপের দক্ষিণে ধর্মঘটে থাকা ডাক্তারদের কাজে না ফিরলে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছে সরকার৷

https://p.dw.com/p/3haSg
ছবি: Reuters/KCNA

উত্তরে সংক্রমণ নেই, আসলেই কী তাই?

কিম জং উন বলছেন তার দেশে করোনার কোনো রোগী নেই৷ কিন্তু দেশটিতে এমনিতেই তথ্যের অবাধ প্রবাহ নেই৷ ফলে আসলেই দেশটিতে চিকিৎসা ব্যবস্থার কী অবস্থা জানতে উত্তর কোরিয়া থেকে ২০১২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে আসা এক ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷

ড. চোই জুং হুন যখন রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন, তখন তাকে নিজের সুরক্ষা উপকরণ নিজেরই জোগাড় করতে হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাকে নিজের জন্য সার্জিক্যাল মাস্ক এবং গ্লাভস কিনতে বলা হয়েছিল৷’’ দক্ষিণে পালিয়ে আসার আগে উত্তরের চোংজিন শহরে দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে কাজ করতেন তিনি৷ সে সময় সার্স করোনা ভাইরাসও মহামারি আকার ধারণ করতে যাচ্ছিলো৷ কিন্তু একটি থার্মোমিটার ছাড়া রোগ নির্ণয়ের আর কোনো প্রযুক্তিই ছিল না চোইয়ের হাতে৷

এখন ড. চোই দক্ষিণ কোরিয়ার সেজোং ইউনিভার্সিটিতে গবেষক হিসেবে কাজ করেন৷ উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দেশটিতে কোনো সংক্রমণ নেই বলে যে সংবাদ প্রচার করছে তা কেবলই প্রপাগান্ডা বলে মনে করেন তিনি৷ জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চীনের ১৪শ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত খোলা ছিল৷ সেসময়ই দেশটিতে ভাইরাস প্রবেশ করেছে বলে মনে করেন চোই৷ উত্তর কোরিয়াকে বিভিন্ন ভাইরাসের জাদুঘর বলে উল্লেখ করে ড. চোই বলেন, ‘‘দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল৷ কিন্তু তারা বিশ্বের সামনে সেটা প্রকাশ হতে দিতে চায় না৷ একই সঙ্গে দেশের মানুষের কাছেও ‘সব ঠিক চলছে' এমন একটি বার্তা দিতে চায় সরকার৷

সরকার কী বলছে?

দেশটির রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম নিয়মিতই মহামারির সংবাদ প্রচার করছে৷ প্রতিদিনই দেশের সরকার করোনা ঠেকাতে কী কী ব্য়বস্থা নিয়েছে তা বেশ বড় আকারে প্রচার করা হচ্ছে৷ কিন্তু এসব সংবাদ মাধ্যমে কখনও উত্তর কোরিয়ায় সংক্রমণ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়া হয় না৷ জুলাইয়ের শেষের দিকে উত্তর কোরিয়া প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র করোনা সংক্রমণের তথ্য দেয়৷ সেই ব্যক্তিও দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু ‘অনুতপ্ত হয়ে নিজ দেশে ফেরত এসেছেন’ বলে দাবি করে দেশটির কর্তৃপক্ষ৷ এরপর থেকে আর কোনো সংক্রমণের তথ্য দেয়নি দেশটি৷ এমনকি জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রমণের তালিকাতেও নেই উত্তর কোরিয়ার নাম৷

তবে সিউলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি এনকে ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে৷ নিরাপত্তার খাতিরে সূত্রের নাম গোপন রেখে প্রকাশ করা তথ্যে বলা হচ্ছে দেশটিতে অনেককেই কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে এবং এদের মধ্য়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন৷ তবে এই তথ্যের সত্যতাও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি৷

দক্ষিণে মুখোমুখি ডাক্তার-সরকার

করোনা সংক্রমণ যখন আবার হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করেছে, তখনই মুখোমুখি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার ডাক্তারদের সংগঠন এবং সরকার৷ চিকিৎসায় জনবল বাড়াতে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার৷ কিন্তু ডাক্তাররা মনে করছেন, এর ফলে আদতে চিকিৎসাসেবায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে৷

সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ উল্লেখ করে ডাক্তাররা বলছেন, এরই মধ্য়ে এই খাতে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি৷ আরো বেশি শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দিয়ে বরং চিকিৎসা খাতকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়া হবে৷ ফলে তারা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন৷ তাদের দাবি বাড়তি শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা না দিয়ে বরং যারা এরই মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, তাদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো উচিত৷

ডাক্তারদের ধর্মঘটের কারণে বড় বড় অনেক হাসপাতালে সেবা দেয়ার সময় কমিয়ে দিতে হয়েছে৷ অনেকের অস্ত্রপচারও বাতিল করতে হয়েছে৷ তবে এর মধ্য়েই দক্ষিণ কোরীয়ায় গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে৷ ২৪ ঘণ্টায় ৩২০ জন শণাক্ত হওয়ায় মহামারি বেড়ে চলার আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷

এমন অবস্থায় ডাক্তারদের ধর্মঘট চলতে থাকলে চিকিৎসাসেবায় আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কার কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে দেশটির সরকার৷ দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী পার্ক নেউং-হু কাজে না ফিরলে ডাক্তারদের ‘কারাগারে পাঠানোর' হুমকি দিয়েছেন৷ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘জনগণের জীবন ও নিরাপত্তা যাতে হুমকিতে না পরে, স লক্ষ্যে সরকারের সামনে আইনি পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকছে না৷ আমরা সকল প্রশিক্ষণার্থী এবং চিকিৎসককে অবিলম্বে কাজে ফেরার আহ্বান জানাই৷’’

 এডিকে/কেএম (এপি, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)