1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোরবানির ভালমন্দ

এম আবুল কালাম আজাদ
এম আবুল কালাম আজাদ
১৬ জুন ২০২৪

নিজের একটি অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করি৷ ২০০৬ সালে কোরবানির ঈদে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে থাকতে হয়েছিল৷ প্রিয়জনদের ছাড়া সেটাই প্রথম ঈদ৷ ঈদের দিন সকালে মন বেশ খারাপ৷

https://p.dw.com/p/4h0ys
গরুর চোখে মানুষের প্রতিবিম্ব
ঢাকায় জমে উঠেছে গরুর হাট৷ একটি হাটে গরুর চোখে মানুষের প্রতিবিম্ব ধরা পড়েছে ক্যামেরাতেছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

তাই দুপুরের দিকে ঘুরতে বের হয়ে ভাবছিলাম বাংলাদেশের মতো যত্রতত্র পশু জবাই হবে আর বর্জ্য ফেলে রাখা হবে৷ কয়েকটি এলাকা ঘুরে কোথাও গরু জবাইয়ের চিহ্ন এমন কি নাকে কোন দুর্গন্ধও পেলাম না৷ পরে জেনেছি, সে দেশে নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে পশু জবাই দেয়া হয় না৷ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও এমনভাবে করে যেন পরিবেশ দূষণ না হয়৷ অবাক হয়েছিলাম বাংলাদেশের বাস্তবতা ভেবে৷

ঈদ মানেই আনন্দ৷ তবে কোরবানির ঈদে থাকে বাড়তি আনন্দ৷ কেননা, কোরবানিকে ঘিরে ঈদের দিন সকাল থেকে সবার মাঝে ভিন্ন রকম উৎসাহ বিরাজ করে৷ আর সেটা পশু জবাই, মাংস প্রস্তুত ও বিতরণকে ঘিরে৷ পরিবার ও প্রিয়জনদের সাথে আনন্দ-উল্লাস ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারটা তো আছেই৷

ছোট বেলায় গ্রামে এরপর ঢাকা শহরে দেখেছি অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গরু ও ছাগল জবাই করে কত দ্রুত মাংস ঘরে নেয়া যায় তা নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হত সবাই৷ এর উদ্দেশ্য কোরবানির মাংস রান্না করে তা উপভোগ করা৷ এসব কোরবানির ভাল, আনন্দের দিক৷ তবে এর অন্যদিকটি নোংরা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷

সে সময় কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেয়া হত না৷ পশুর মল-মুত্র ও রক্ত বাসাবাড়ির সামনে, আশেপাশে, রাস্তাঘাট ও নর্দমায় ফেলা দেয়া হত, যা পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি রোগজীবাণু ছড়িয়ে স্বাস্থ্যহানির কারণ ছিল৷ বর্জ্য পচে এমন দুর্গন্ধ ছড়াত যা সহ্য করা কঠিন ছিল৷

অবশ্য ইদানীং মানুষের মাঝে সচেতনতা বেড়েছে৷ পশু কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনের দিক থেকেও অনেক ধরনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়৷

আগের মত গ্রামে যত্রতত্র পশু জবাই না করে ফাঁকা একটি যায়গায় করা হয়৷ কোরবানির পর বর্জ্যসমূহ গর্তে পুতে ফেলার উদ্যোগ গ্রহন করে৷ কিন্তু পশু জবাইয়ের স্থান ভালমত পরিস্কার করা হয় না৷ ফলে রক্ত ও কিছু বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে যা দুর্গন্ধ ও পরিবেশ দুষণ ঘটায়৷

অন্যদিকে, ঢাকা পরিস্থিতিও উন্নতি হয়েছে৷ পর্যাপ্ত না হলেও কয়েক বছর পূর্বে দুই সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন এলাকায় কোরবানি স্থান নির্ধারণ করে দেয় এবং জনসাধারণকে সেখানে কোরবানি করতে উৎসাহিত করা হয়৷ কোরবানির বর্জ্য দ্রুত সংগ্রহ ও অপসারণের জন্যেও সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদল মোতায়েন থাকে৷ তারা কোরবানির পরে দ্রুত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালায়৷ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বর্জ্য সংগ্রহ করে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায়৷ বড় শহরগুলোর চিত্র অনেকটা সেরকমই৷

তবে নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাইয়ের যে উদ্যোগ দুই সিটি কর্পোরেশন নিয়েছিল তা ইতিমধ্যেই ভেস্তে গেছে মানুষের স্বদিচ্ছার অভাবে৷ প্রথম দিকে কিছু মানুষ সেখানে পশু জবাই দিলেও তা আর ধরে রাখেনি৷ বিভিন্ন ওযুহাত যেমন নির্ধারিত স্থান বাসা থেকে দূরে, সেখানে পর্যাপ্ত পানির অভাব ইত্যাদি কারনে মানুষ নিজ নিজ বাসাবাড়ির ভেতরে বা বাইরে জবাই দিয়ে থাকে৷

এভাবে নির্ধারিত স্থানের বাইরে যেখানে সেখানে কোরবানি দেয়ার ফলে বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়ে৷ অন্যদিকে, বিশাল জনগোষ্ঠীর তুলনায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখ্যা কম হওয়ায় সময়মত বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হয় না৷ আবার ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবও রয়েছে, যার ফলে কার্যকরভাবে বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ করা সম্ভব হয় না৷

মোট কথা, ঢাকার কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংকটা অনেকটা দুইধাপ এগিয়ে একধাপ পিছিয়ে পড়ার মত৷ আগের চেয়ে অবস্থা ভাল হলেও বাড়িতে বাড়িতে, রাস্তায় রাস্তায় দিনভর কোরবানি দেয়ার কারনে বর্জ্য পুরোপুরি পরিস্কার করা সম্ভব হয় না৷ রাস্তাঘাটে এবং নর্দমায় পশুর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য জমা হয়ে দুর্গন্ধ এবং মশার উৎপত্তি ঘটায়৷

জানা যায়, মালয়েশিয়ায় কোরবানির ঈদ এখন আরও সুশৃঙ্খলভাবে উদযাপিত হয়, যেখানে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন এবং কমিউনিটি সংগঠনগুলো সক্রিয় ভূমিকা পালন করে৷ যত্রতত্র কোরবানি না হয়ে নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোরবানি করা হয়৷ পশু জবাইয়ের জন্য থাকে নির্দিষ্ট সময়সূচি ও নির্দেশিকা৷ কোরবানির স্থানগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ কোরবানির পরপরই নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে ব্যাপক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হয়৷

আমাদের দেশেও তেমনটা সম্ভব৷ এজন্য প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মনযোগী হতে হবে৷ আর তাহলেই ঢাকাসহ সারা দেশে দুর্গন্ধ ও দূষণমুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোরবানির ঈদ উদযাপন করা সম্ভব হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য