কোটা সংস্কার আন্দোলন: ঢাকায় সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ
প্রকাশিত ১৮ জুলাই ২০২৪শেষ আপডেট ১৯ জুলাই ২০২৪আপনারা যা জানা দরকার
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা নিয়ে উত্তপ্ত গোটা বাংলাদেশ৷ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
- কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে ছাত্র আন্দোলনের পর সে বছরেরই ৪ অক্টোবর এক পরিপত্রে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে সরকার৷
- পরিপত্রের বৈধতা নিয়ে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাত সন্তান।
- রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরের ৫ জুন কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট।
- এই রায়ের পর ১ জুলাই আবার মাঠে নামেন শিক্ষার্থীরা৷
- ১০ জুলাই হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ৷
- এরপরও রাজপথের আন্দোলন থেকে সরে আসেনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা৷ গত কয়েকদিনের আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৩ জন৷ বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে সরকার৷
নারায়ণগঞ্জে পাসপোর্ট অফিসে আগুন
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে৷ কিন্তু শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে৷
প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হক জানান, প্রথমে হামলাকারীরা ইট-পাটকেল ছোড়ে৷ এরপর ভাঙচুর করে বিভিন্ন কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং লুটপাট করে৷
এ ছাড়া গতকাল রাতেই পাসপোর্ট অফিসের পাশে জেলার পিবিআই অফিসে ভাঙচুর চালিয়ে বাস, প্রাইভেট কার, পিকআপ, মোটরসাইকেলসহ ১২টি যানবাহনে আগুন দেয়া হয়৷ আগুন নেভাতে এলে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেয়া হয়৷
এ ছাড়া শহরের নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে৷
সূত্র: প্রথম আলো
আবারও উত্তাল যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আজ শুক্রবারও পুলিশের সংঘর্ষ চলছে৷
যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ অন্যদিকে শনির আখড়ার কাজলা অংশে অবস্থানরত আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ছেন৷
শুক্রবার সকাল সাতটার পর থেকেই কাজলা-শনির আখড়া অংশে বিপুলসংখ্যক আন্দোলনকারীকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে৷ বিপরীতে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় পুলিশ, আমর্ড পুলিশ, র্যাব অবস্থান নিয়েছে৷
টানা তিন দিন ধরে চলা এ সংঘর্ষে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ৷ কোটা সংস্কারের দাবিতে এবার আন্দোলন শুরু হয় গত ৫ জুন৷ বিরতি দিয়ে জুনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা৷ ১ জুলাই থেকে শুরু হয় টানা আন্দোলন৷
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারাদেশ প্রায় অচল হয়ে পড়ে৷ রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় গতকাল দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে৷
এসব ঘটনায় এক সাংবাদিকসহ ২৭ জন নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে প্রথম আলো।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার পর মঙ্গলবার সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন৷ এদিন হামলা-সংঘর্ষে সারা দেশে নিহত হন ছয় জন৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে৷
এর আগে মঙ্গলবার সব স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার৷ বন্ধ করা হয় সিটি করপোরেশন এলাকার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ও৷ তবে বুধবার সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত মেনে নেননি শিক্ষার্থীরা৷ এই আন্দোলনে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন৷
সূত্র: প্রথম আলো
ঢাকায় সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ
ঢাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপি উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বেলা পৌনে ১টার দিকে বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, শুক্রবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারাদেশ প্রায় অচল হয়ে পড়ে৷ রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় গতকাল দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনায় এক সাংবাদিকসহ ২৭ জন নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে প্রথম আলো। আহত হয়েছেন অন্তত দেড় হাজার। কোথাও কোথাও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের, আবার কোথাও সরকার–সমর্থক বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়৷
সহিংসতা তদন্তে কমিশন গঠন
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারা দেশে সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনার পাশাপাশি গত ১৬ জুলাই বিক্ষোভ-সংঘাতে ছয় জনের নিহত হওয়ার বিষয়টি তদন্তে এক সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়েছে৷
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে এই কমিশনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ৷ এদিন তা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করেছে তথ্য অধিদপ্তর৷
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই কমিশন ওই দিনের মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন ও তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে৷ এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে কমিশন৷
সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে কমিশনকে ৩০ কার্যদিবস সময় দেয়া হয়েছে৷
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার ইউনিট কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা করবে৷
হামলায় বিটিভির প্রচার বন্ধ
রাজধানীর রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনে হামলা, ভাঙচুরের পর আগুন দেয়া হয়েছে৷
বিকেল তিনটার দিকে ওই হামলা চালানো হয়৷
বৃহস্পতিবার রাত সোয়া আটটার দিকে বিটিভির একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে বিটিভির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরে গেছেন৷ এরপর থেকে চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷
সারাদেশে সংঘর্ষ, নিহত ১৯
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ–যুবলীগের সংঘর্ষ চলার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত আরো চারজনের মরদেহ এসেছে। তাদের মধ্যে একজন সাংবাদিক রয়েছেন বলে জানা গেছে৷
নিহত সাংবাদিক হাসান মেহেদী ঢাকা টাইমসে কর্মরত ছিলেন৷ সন্ধ্যার পর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তার শরীরে ছররা গুলির ক্ষত রয়েছে৷
নিহত অপর তিন জনের মধ্যে ওয়াসিমকে আনা হয় যাত্রাবাড়ী মাছের আড়ত এলাকা থেকে। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে৷ নিহত নাজমুলকেও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আনা হয়েছে৷ আনুমানিক ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী নাজমুলের শরীরে কোপের আঘাত রয়েছে৷
এছাড়া নিহত মোহাম্মদকে আনা হয়েছে আজিমপুর এলাকা থেকে৷ আনুমানিক ২০ বছর বয়সী মোহাম্মদের শরীরে ছররা গুলির ক্ষত রয়েছে৷
এদিকে নরসিংদীতে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাহমিদ তামিম ও মো. ইমন মিয়া নামে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে ইমন এবং জেলা হাসপাতালে তাহমিদের মৃত্যু হয়েছে৷
সংঘর্ষে চট্টগ্রামে নিহত হয়েছেন দুজন৷ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দার হাট এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের মধ্যে তারা গুলিবিদ্ধ হন। তাদের একজন পটিয়া সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র মোহাম্মদ ইমাদ৷ অপরজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি৷
এই আটজনকে নিয়ে আজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৩ জন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ–যুবলীগ নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন।
সূত্র: প্রথম আলো
লিভ টু আপিলের উপর শুনানি রোববার
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেছেন চেম্বার আদালত৷
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দিয়েছেন৷
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শুনানির দিন ধার্যের জন্য চেম্বার আদালতে আবেদন নিয়ে যান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম। আদালত বসেন বিচারপতির বাসভবনে।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানিয়েছেন, চেম্বার আদালত লিভ টু আপিল আপিল বিভাগে শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন নির্ধারণ করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের রোববারের কার্যতালিকায় রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর করা দুটি লিভ টু আপিল শুনানির জন্য তিন নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো
পুলিশ ও ছাত্রলীগের ওয়েবসাইট হ্যাক
বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ওয়েবসাইট দুটি হ্যাক করা হয়েছে৷
www.police.gov.bd ও www.bsl.org.bd দুটিতে ক্লিক করলে দেখা যায় দ্য রেজিস্ট্যান্স নামের একটি হ্যাকার গ্রুপের বার্তা ভেসে উঠে৷
কে বা কারা ওয়েবসাইট দুটি হ্যাক করেছে, তা জানা যায়নি৷ ওয়েবসাইটের হোম পেজে লেখা রয়েছে ‘অপারেশন হান্টডাউন’৷ সেখানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ অবস্থান নিয়ে বলা হয়েছে, ‘স্টপ কিলিং স্টুডেন্টস’ বা শিক্ষার্থী হত্যা বন্ধ করুন৷
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে সাংবাদিক, হ্যাকার, সাধারণ মানুষদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে৷ একইসঙ্গে সব রাজনৈতিক দল ও ইসলামপন্থি গ্রুপগুলোকেও এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে হ্যাকাররা৷
ইতিবাচক বার্তা পেয়েছি: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সরকার শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে এগোতে চায় বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত৷
আজ বৃহস্পতিবার সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেছেন৷ তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়৷
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বেশ কিছু ইতিবাচক বার্তা পেয়েছি৷ তারা বলেছে যে তারা পড়ার টেবিলে ফিরতে চায়৷ আমরাও চাই তারা পড়ার টেবিলে ফিরুক৷’’
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীরা আলোচনার পথে যেতে চায়। সরকারের পক্ষ থেকেও আলোচনার দরজা খোলা আছে৷
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীরা সবচেয়ে ইতিবাচক যে বক্তব্যটি দিয়েছে তা হলো, চলমান ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ কোনোভাবেই জড়িত নয়৷ অর্থাৎ, তারা স্বীকার করে নিয়েছে যে আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও সন্ত্রাস হচ্ছে৷ এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই যে তারা এই সহিংসতা ও সন্ত্রাসকে নিন্দা জানিয়েছে৷
সূত্র: প্রথম আলো
ঢাকাসহ সারাদেশে নিহত ১১
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জনই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ–যুবলীগ নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে চারজনের মরদেহ রয়েছে রাজধানীর উত্তরার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে৷ হাসপাতালটির পরিচালক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, চারজনের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী৷ অন্য দুজনের পরিচয় সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হতে পারেনি৷
এর আগে উত্তরায় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে দুজন নিহতের খবর পাওয়া যায়৷ তাদের একজন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান এবং আরেকজন উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মারা গেছেন৷ দুই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷
সব মিলিয়ে উত্তরায় ছয়জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে হাসপাতাল সূত্রে। এ ছাড়া ধানমণ্ডিতে সংঘর্ষে ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষার্থী, রামপুরায় এক পথচারী, যাত্রাবাড়ীতে এক রিকশাচালক, সাভারে এক শিক্ষার্থী ও মাদারীপুরে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে ১১ জনের।
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শনির আখড়া থেকে মিছিল নিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে আসার চেষ্টা করলে আন্দোলনরতদের ঠেকাতে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়েন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা৷ এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়৷
বেলা সোয়া ১১টার দিকেও যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ আন্দোলনরতরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে পুলিশ৷ শনির আখড়ার কাজলা থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পুরো সড়কে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে৷
রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকায় থেমে থেমে পুলিশ ও কোটা আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে৷ মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ও আশপাশের এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে৷ পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা গোলচত্বরে অবস্থান নিয়েছেন৷ আর আন্দোলনরতদের অবস্থান গোলচত্বরের পাশে আল-হেলাল হাসপাতালের সামনে৷ আর একটি অংশের অবস্থান মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের দিকে৷
বেলা ১টার দিকে প্রথম আলোর প্রতিবেদক ঘটনাস্থল থেকে জানান, পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করছে৷ এর আগে ব্যাপকভাবে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে৷
রামপুরায় আন্দোলনরত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ এ সময় একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷
বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার রাজন কুমার সাহা জানান, এ সময় ওই এলাকায় ১০-১২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে৷
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে রাস্তায় নেমে আসে৷ পুলিশ তাদের বাধা দিতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়৷ শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া দেন।
এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত৷ সেখানে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে যোগ দেন৷
এসময় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ এবং তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ৷
এ সময় মেরুল বাড্ডা এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ বেলা ১১টার দিকে পুলিশ ক্যানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে যায়। বাইরে ছিলেন শিক্ষার্থীরা৷ এ সময় সেখানকার বেশ কয়েকটি দোকানপাট, স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়৷
বেলা একটার আগে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে আন্দোলনরতদের দিকে রাবার বুলেট ও ছররা গুলি ছোঁড়ে৷ এ সময় শিক্ষার্থীসহ অনেকে আহত হয়েছেন৷
আলোচনায় সম্মত সরকার, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন
ঘটনাস্থল থেকে প্রথম আলোর গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের সামনে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করছেন৷ সেখানে অনেকে আহত রয়েছেন৷
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেছেন, এই আলোচনার জন্য দুজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আনিসুল হক বলেন, ‘‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যখনই আলোচনায় বসতে রাজি হবেন, তখন এ আলোচনা হবে।’’ তিনি জানান, তাকে ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেছেন, আজ বিকেলেই বৈঠকটি হতে পারে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে গত মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।
অন্যদিকে কোটা নিয়ে আপিল বিভাগে আগামী ৭ আগস্ট শুনানির দিন নির্ধারিত আছে। শুনানির সময় এগিয়ে আনার জন্য আগামী রোববার আদালতে সরকারপক্ষ আবেদন করবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ডাকে দেশজুড়ে চলছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচি৷ এতে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে৷ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরতদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷
‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে' বৃহস্পতিবার কমপ্লিট শাটডাউন পালন করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা৷
হাসপাতাল, সংবাদমাধ্যম ও অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া এই কর্মসূচি চলাকালে সব কিছু বন্ধ থাকবে জানিয়েছেন তারা৷