1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোটা প্রথার নিপাতেই রাষ্ট্র সংস্কার?

তায়েব মিল্লাত হোসেন
তায়েব মিল্লাত হোসেন
১২ জুলাই ২০২৪

আশির দশকে এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনে নূর হোসেন বুকে-পিঠে লিখেছিলেন, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক'৷ হালের কোটাবিরোধী আন্দোলনেও একই আদলে কেউ কেউ বুকে-পিঠে লিখছেন, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক'৷

https://p.dw.com/p/4iDhu
কোটা সংস্কার আন্দোলন
হালের কোটাব্যবস্থার সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়ে কেউ কেউ বুকে-পিঠে লিখছেন, ‘এক দফা এক দাবী, কোটা নট কাম ব্যাক'৷ ছবি: Habibur Rahman/aal.photo/IMAGO

জনপ্রিয় এই স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠছে রাজধানীর শাহবাগ চত্বরও৷ এমন দাবির মুখে মেধাবীরা যদি মুক্তি পেয়ে যায়, তবেই কী মুক্তি পাবে দেশ?

বাংলাদেশ তো সেই কবে থেকে ঘুস-দুর্নীতি-অসততার শৃঙ্খলে বন্দি৷ এর জন্য কতটা দায়ী মেধাবীরা? আর কতটা অমেধাবীরা? পঁচাত্তরের ২৫ জানুয়ারি সংসদের এক ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর উত্তর কিন্তু অনেকটাই রেখে গিয়েছিলেন৷ সেদিন জাতীয় সংসদে তিনি বলেছিলেন, ‘‘করাপশন আমার বাংলার মজদুর করে না৷ করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ, যারা আজকে ওদের টাকা দিয়ে লেখাপড়া করেছি৷ আজ যেখানে যাবেন, করাপশন দেখবেন৷''

৪৯ বছর আগের সেই ভাষণ এখনো প্রাসঙ্গিক৷ দুর্নীতির অবাধ যাতায়াত দেশজোড়া৷ পিএসসি চেয়ারম্যানের গাড়িচালক আবেদ আলী করেন প্রশ্নফাঁস, এনবিআরের কর্তা মতিউর রহমান কেনেন একের পর এক ফ্ল্যাট, অবসরের পর খবর আসে পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ সংখ্যালঘুদের জমি জবরদখল করে গড়ে তুলেছেন রিসোর্ট৷ তারা কোটায়, না মেধায় চাকরি পেয়েছেন, সেটা অবশ্য স্পষ্ট নয়৷

কিন্তু এখনো যে কাগুজে মেধাবীরাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক হিসেবে চাকরি পাচ্ছেন, এটা নিশ্চিত৷ নয়-ছয় হলে শুধু বড় জোর রোল একের বদলে চার নম্বরে থাকা ব্যক্তিটি চাকরি পান৷ আর যারা ধাপে ধাপে উন্নতির শিখরে গিয়ে উপাচার্য হন, তারা মেধা-মননে যে অনেক এগিয়ে তা স্বীকার করতেই হবে৷ অথচ বছরজুড়ে উপাচার্যদের অনিয়ম-অনাচারের খবর আসতেই থাকে৷ কেউ উত্তরবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়ে দিনের পর দিন ঢাকায় কাটান৷ কেউবা অবসরে যাওয়ার আগেভাগে স্বজনদের নিয়োগ দিয়ে যান নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ ‘এমন মেধাবী লইয়া' আমরা তাহলে কী করবো?

কোটা নিপাতের জন্য যে বাংলা ব্লকেড করা হলো৷রাস্তাঘাট অচল করে দেওয়া হলো, যে কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হলো আমজনতাকে৷ সেখানে আন্দোলনকারীরা সান্ত্বনার প্রলেপ দিতে প্রচারপত্রে লিখেছেন: ‘রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ চলছে/ সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত৷' কোটার সংস্কার হলেই কী রাষ্ট্রের ভেতরে সংস্কার ঘটে যাবে?

প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা দুর্নীতির দায় শুধুই কোটাধারীদের কাঁধে চাপাতে হবে? আমাদের যেসব চিকিৎসক সরকারি দায়িত্বে ফাঁকি দেন, তারা কী মেধাবী নন? যে ভূমি কর্মকর্তা গুনে গুণে ঘুষ নেন, তিনি কোটার মারফতই এসেছেন চাকরিতে, সেটা কী নিশ্চিত? মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা ভোগ করতে যিনি ভুয়া সনদ নিয়েছেন, তার বেলায়ই-বা কী বলবো আমরা?

তবে কোটার সুযোগ নেওয়া ব্যক্তিটিকেও কিন্তু চাকরি পরীক্ষার প্রথম কয়েক ধাপ পাস করেই আসতে হয়৷ এই অর্থে তিনিও মেধাবী৷ কিন্তু যাদের হাতে পরীক্ষার আগে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র চলে আসে, তাদের কোটা থাকা, না থাকায় কিছু যায় আসে না৷ তারা আটঘাট বেঁধেই নামেন৷ টাকার বিনিময়ে চাকরি নিবেন, ঘুষ আদায় করে তার কয়েক গুণ বেশি আদায় করে নেবে৷ এমনি হয়ে থাকে তাদের পণ৷

তাই কোটার বিলোপেই কল্যাণ এক রাষ্ট্র হয়ে যাবে বাংলাদেশ, এমনটা মনে করবার কোনো কারণই নেই৷ যেখানে ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা', সেখানে তা পুরোপুরি সারাইয়ে প্রতিটি জায়গায়ই হাত দিতে হবে৷ স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে সবকিছুতেই৷ তখন এমনিতেই মেধাবীদের বঞ্চনাবোধ মিলিয়ে যাবে৷ কোটাবিরোধী হতে হবে না কাউকেই৷ তাই আমাদের মূল স্লোগান হওয়া উচিৎ: ‘দুর্নীতি নিপাত যাক, সততা মুক্তি পাক'৷

তায়েব মিল্লাত হোসেন
তায়েব মিল্লাত হোসেন সাংবাদিক