কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকে বাধ্য হলো মোদী সরকার
১ ডিসেম্বর ২০২০সরকারের শর্ত ছিল, আগে দিল্লির সীমান্ত ছেড়ে কৃষকদের ১৬ কিলোমিটার দূরের বুরারিতে চলে যেতে হবে, তারপর আলোচনা করা হবে সংগঠনগুলির সঙ্গে। কিন্তু কৃষকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা এই শর্ত মানবেন না। বুরারি যাবেন না। আলোচনা করতে হবে নিঃশর্তে। অবশেষে সোমবার গভীর রাতে কৃষকদের শর্তেই তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। মঙ্গলবার আলোচনা হবে।
তবে এরপরেও আলোচনা নিয়ে বিতর্ক যে পুরোপুরি কেটেছে তা বলা যাচ্ছে না। কারণ, ৫০০-রও বেশি সংগঠন এই আন্দোলনে সামিল। তার মধ্যে সরকার আলোচনায় ডেকেছে মাত্র ৩২টি সংগঠনকে। তাই পাঞ্জাব কৃষক সংঘর্ষ কমিটি জানিয়েছে, সব গোষ্ঠীকে ডাকা না হলে তারা এই আলোচনায় অংশ নেবে না। যাঁরা ডাক পাননি, তাঁরা ক্ষুব্ধ।
কৃষকরা এখন ট্রাক ও ট্রাক্টর নিয়ে দিল্লির সীমান্তে চলে এসেছেন। তাঁরা কার্যত দিল্লি ঘিরে ফেলেছেন। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান ও কেরালা থেকে কৃষকরা বিক্ষোভেসামিল হয়েছেন। ব্যারিকেড তৈরি করে, লাঠিপেটা করে, জলকামান দেগে, কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়েও তাঁদের দিল্লি আসা আটকাতে পারেনি পুলিশ। দিল্লি ঢোকার দুইটি প্রধান রাস্তা বন্ধ। একটি আংশিক বন্ধ।
সরকার করোনার কারণ দেখিয়ে জানিয়েছিল, কৃষকদের দিল্লিতে ঢুকতে দেয়া হবে না। তখন যোগেন্দ্র যাদব সহ অন্য কৃষক নেতারা প্রশ্ন তোলেন, তা হলে বিহারে কী করে লাখো লোকের জনসভা করলেন প্রধানমন্ত্রী সহ অন্যরা। তখন তো করোনার কথা মাথায় রাখা হয়নি! করোনার কড়াকড়ি কি শুধু কৃষকদের গতিরোধ করার জন্যই চালু হবে? করোনাকালে লাখো লোকের জনসভা করলে কোনো অসুবিধা নেই?
কৃষকদের জেদ, সারা দেশে কৃষক ভোট হারাবার সম্ভাবনা এবং এই যুক্তির সামনে অসহায় হয়ে পড়ে সরকার। তারপরই আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র তোমর বলেন, 'আমরা আগেই আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কৃষকরা আন্দোলনের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। এখন শীত ও করোনার কথা ভেবে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বেলা তিনটে নাগাদ আলোচনা শুরু হবে।'
কৃষক নেতারা অবশা বলছেন, শীতের কথা মাথায় রাখলে গত ছয়দিন ধরে সমানে কৃষকদের উপর জলকামান চালানো হতো না। বারবার করে আন্দোলনকারী কৃষকরা ভিজেছেন, আহত হয়েছেন, কিন্তু জমি ছেড়ে নড়েননি। আর করোনার কথা ভাবলে প্রথমেই নিঃশর্তে আলোচনার প্রস্তাব মেনে নিত সরকার।
কৃষকদের প্রধান দাবি দুইটি। কৃষি আইনের সংশোধন করে কর্পোরেটের সুবিধা করে দিয়ে যে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে। আর সরকার যে ফসলের ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য বেঁধে দেয়, তাকে আইনি মর্যাদা দিতে হবে। অর্থাৎ, বেসরকারি সংস্থা বা ব্যক্তি যদি ফসল কেনেন, তা হলে ওই দামেই কিনতে হবে। না দিলে তাঁদের শাস্তি হবে। এই ব্যবস্থা না করলে ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য বেঁধে দিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না কৃষকদের। কারণ, তাঁদের উৎপাদনের অনেকটাই বেসরকারি সংস্থা বা ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতে হয়। তখন তাঁরা অনেক কম দাম পান। সরকার এখন এই দাবি মানে কি না সেটাই দেখার।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই)