কিছু মানুষ কীভাবে সংক্রমণ এড়িয়ে যান?
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩এটা অনেকটা জুয়া খেলার মতো৷ অনেক মানুষ, এমনকি তরুণ ও সক্রিয় হওয়া সত্ত্বেও করোনা ভাইরাসের সঙ্গে প্রথম মোলাকাতেই আক্রান্ত হয়ে পড়েন৷ অন্যরা কিন্তু সুস্থ থাকেন৷
ইয়ুলিয়া এমনই একজন মানুষ৷ কিছুক্ষণ আগে তিনি প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে নিজের বাবার সঙ্গে প্রাতরাশ করছিলেন৷ সেই দিনই টেস্টে বাবার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে৷ দুই সপ্তাহ পরে ইয়ুলিয়ার বয়ফ্রেন্ডও ভাইরাস নিয়ে বাসায় ফেরেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা তিন দিন একসঙ্গে কাটিয়েছি৷ সে ‘সিটি ২১' মাত্রায় পজিটিভ ছিল৷ কিন্তু কয়েক দিন কেটে যাবার কারণে আমরা আর আলাদা হবার চেষ্টা করিনি৷ কিন্তু আমার সংক্রমণ ঘটেনি৷''
ইয়ুলিয়া সুস্থই থেকেছেন৷ কিছু কিছু মানুষ কেন চট করে সংক্রমিত হন না, গবেষকরা তা ব্যাখ্যা করতে নানা তত্ত্ব খাড়া করেছেন৷ ইমিউন সিস্টেম একটা কারণ হতে পারে৷ ভাইরাসের সংস্পর্শে আশার সময় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে অথবা ব্লাড গ্রুপও বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে৷
মলিকিউলার বায়োলজিস্ট হিসেবে আন্দ্রে ফ্রাংকে ও তাঁর টিম জিনগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করছেন৷ কিছু মানুষ কেন অন্যদের তুলনায় সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পান, সেটা জানাই তাঁদের উদ্দেশ্য৷ সেই প্রক্রিয়ায় তাঁরা ব্লাড গ্রুপের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছিলেন৷ ব্লাড গ্রুপ ‘এ', ‘বি' না ‘ও', তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হচ্ছে৷ প্রো. ফ্রাংকে বলেন, ‘‘এবিও, ব্লাড গ্রুপের অবস্থা এবং সংক্রমণের সম্ভাবনার মধ্যে আমরা স্পষ্ট সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করছি৷''
গোটা বিশ্বে একাধিক গবেষণায় বার বার দেখা গেছে, যে বাকিদের তুলনায় ‘ও' ব্লাড গ্রুপের মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম৷ ব্লাড গ্রুপগুলির মধ্যে পারস্পরিক সামঞ্জস্যই সম্ভবত এমন বৈষম্যের কারণ৷
মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন ব্লা়ড গ্রুপের লোহিত রক্ত কণিকায় আলাদা অ্যান্টিজেন থাকে৷ একমাত্র ‘ও' ব্লাড গ্রুপের একেবারেই কোনো অ্যান্টিজেন নেই৷ সে কারণে ‘ও' ব্লাড গ্রুপের মানুষ অন্য সব ব্লাড গ্রুপের মানুষকে রক্তদান করতে পারেন৷ তবে অন্য গ্রুপের মানুষের রক্ত গ্রহণ করতে পারেন না৷ অ্যান্টিজেন থাকার কারণে ইমিউন সিস্টেম সেই রক্ত প্রত্যাখ্যান করে৷
ফ্রান্সের এক গবেষক দলের তত্ত্ব অনুযায়ী ভিন্ন ব্লাড গ্রুপের মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রেও ঠিক সেই প্রবণতাই দেখা যায়৷ ‘ও' ব্লাড গ্রুপের কোনো মানুষ সহজে অন্য ব্লাড গ্রুপের মানুষের দ্বারা সংক্রমিত হন না৷ কিন্তু একবার সংক্রমিত হলে তিনি সহজেই বাকিদের সংক্রমিত করতে পারেন৷ প্রো. ফ্রাংকে বলেন, ‘‘শরীরের এক বা একাধিক কোষের মধ্যে ভাইরাস বংশবৃদ্ধির সময় প্রোটিন ও অন্যান্য পদার্থও উৎপাদন করে৷ ফলে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়৷ বাস্তবে সেগুলি ব্লাড গ্রুপের অ্যান্টিজেন৷''
পরীক্ষায় দেখা গেল ইউলিয়ার ব্লাড গ্রুপ ‘এ'৷ তা সত্ত্বেও তিনি যে সুস্থ ছিলেন, তার কারণ হয়তো কম ভাইরাল লোড৷ সেই বিষয়টিও একটি ভূমিকা পালন করে৷
উলরিকে হাইমেস/এসবি