1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কামড়ের পর এবার পুলিশের ঘুসি

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৪ নভেম্বর ২০২২

চাকরিপ্রার্থীকে কামড়ের পর প্রতিবাদী সরকারি কর্মীদের ঘুসি। পশ্চিমবঙ্গে এভাবেই আন্দোলনের মোকাবিলায় পুলিশ।

https://p.dw.com/p/4JzUH
পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠছে।
পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠছে। ছবি: Satyajit Shaw/DW

চাকরিপ্রার্থী থেকে সরকারি কর্মী, নানা ধরনের আন্দোলনে এখন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কলকাতার রাজপথ। আন্দোলনকারীদের সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। লাঠিচার্জ, গ্রেপ্তারি সত্ত্বেও দমানো যাচ্ছে না প্রতিবাদীদের। এই পরিস্থিতিতে এক এসএসসি চাকরিপ্রার্থীকে কামড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিতর্কের রেশ না ফুরোতেই বুধবার ঘুসির ঘটনা।

বাম সংগঠনগুলির ডাকে বিধানসভা ভবন অভিযান ছিল বুধবার। সরকারি কর্মচারীদের এই অভিযানে প্রধান দাবি ছিল, রাজ্য সরকারকে প্রাপ্য বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে। ধর্মতলা থেকে বিধানসভা ভবন পর্যন্ত এই মিছিল ঘিরেই উত্তেজনা। মিছিলকারী জনতার একাংশ বিধানসভার দুই নম্বর গেটের কাছে চলে আসে। তাতে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এই সময় সরকারি কর্মীদের মারধর করেছে পুলিশ। ঘুসি মারা হয়েছে এক কর্মীর পেটে ও ঘাড়ে। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওয় দেখা গিয়েছে মারধরের ছবি যার সত্যতা ডয়চে ভেলে যাচাই করেনি। মিছিলে যোগ দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীরাও পুলিশের রোষের মুখে পড়েন বলে অভিযোগ। নারীদের টেনে-হিঁচড়ে তোলা হয় প্রিজন ভ্যানে।

জলকামান, লাঠি ছাড়াও পুলিশ এখন কামড়ে দিচ্ছে, ঘুসি মারছে।
জলকামান, লাঠি দিয়ে মার ছাড়াও পুলিশ এখন কামড়ে দিচ্ছে, ঘুসি মারছে। ছবি: Satyajit Shaw/DW

মিছিলের উপস্থিত রাজ্য কোঅর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিনহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সরকারের নির্দেশে নির্মম আচরণ করেছে পুলিশ। তবে এতে আন্দোলন থামবে না। বৃহস্পতিবার কালো ব্যাজ পরে বিক্ষোভ হবে। ডিএ আদায় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে।”

সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "কোন পুলিশ কতটা সাফল্যের সঙ্গে বিরোধী আন্দোলনকে দমন করে শাসকের বশংবদ হবে, এই রাজ্য তার পরীক্ষাগার হয়ে উঠেছে। যে কোনো উপায়ে আন্দোলনকারীদের শায়েস্তা করতে গিয়ে কামড়াতে হচ্ছে, ঘুসি মারতে হচ্ছে।”

সম্প্রতি অরুণিমা পাল নামে যে চাকরিপ্রার্থীকে পুলিশ কামড়েছে বলে অভিযোগ ওঠে, তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছিল পুলিশ। বুধবারের ঘটনায় ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে।

এ সবের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের বিরুদ্ধে অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। রাজ্য সরকার বিরোধীদের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, "আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করতে ধস্তাধস্তি হয়েছে, পুলিশ ঘুসি মারেনি। আমাদের পুলিশ গুলি চালায় না। বাম আমলে পুলিশ গুলি করে ১৩ জনের প্রাণ নিয়েছিল।”

‘পুলিশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বদলে শাসকের কথাতেই কাজ করে’

রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশকর্তা আন্দোলন মোকাবিলায় পুলিশের কর্মপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ডিএ বাড়লে তো পুলিশেরও বাড়বে। সরকারি কর্মী হিসেবে তারাও ডিএ বাড়ানোর দাবি তুলছে। তাই এই আন্দোলনের প্রতি পুলিশের সহানুভূতি থাকা উচিত। তা ছাড়া অনেক পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকঠাক হয় না। তাই আন্দোলন সামলানোর সময় তারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।

শীর্ষ আদালতের গাইডলাইনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আর এক প্রাক্তন পুলিশকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, "সুপ্রিম কোর্ট সাত দফা গাইডলাইন জারি করেছিল। বিভিন্ন রাজ্যের সরকার তা মেনে চলে না। পুলিশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বদলে শাসকের কথাতেই কাজ করে। এখানেও সেই ছবি দেখা যাচ্ছে।”

৩৫ শতাংশ মহার্ঘভাতার দাবিতে আন্দোলন করছেন সরকারি কর্মীরা। উত্তরপ্রদেশে ৩৮ শতাংশ, রাজস্থানে ৩৪ শতাংশ, কেরলে ৩৬ শতাংশ মহার্ঘভাতা পান কর্মচারীরা। পশ্চিমবঙ্গে বকেয়া মহার্ঘভাতা সংক্রান্ত মামলা চলছে শীর্ষ আদালতে। হাইকোর্ট বকেয়া মিটিয়ে দিতে বলায় সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছে রাজ্য।

ডিএ বকেয়া থাকার জন্য শাসক দল তৃণমূল আঙুল তুলছে কেন্দ্রের দিকে। তৃণমূল মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, "সরকারি কর্মচারীদের বাইরে রাজ্যে বিপুল সংখ্যক অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক-কর্মী রয়েছেন। মুদ্রাস্ফীতির জন্য তাদের পরিস্থিতি আরো খারাপ। এ জন্য দায়ী কেন্দ্র। রাজ্য বিপুল টাকা পায় কেন্দ্রের কাছ থেকে। সেই টাকা মিটিয়ে দিলে রাজ্য মহার্ঘভাতা দেবে।”