1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কান্তজিউ মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণের কাজ বন্ধ প্রশাসনের

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৪ মার্চ ২০২৪

দিনাজপুরের কাহারোলে ঐতিহ্যবাহী কান্তজিউ মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

https://p.dw.com/p/4e4Uu
কান্তজিউ মন্দির চত্বর
পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র তীর্থস্থান দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দিরের দেবোত্তর ভূমিতে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগে চিন্তিত দেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।ছবি: DW/M. Mamun

জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, "এটা রাজ দেবোত্তর এস্টেটের জমি। আমি নিজেও একজন ট্রাস্টি। আমরা বৈঠক করার পর আজ (রোববার) দুপুরে আমি নিজে সেখানে গিয়েছিলাম। মসজিদ কমিটির সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের নির্মাণ পুরোপুরি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। বিকল্প জায়গায় মসজিদ নির্মাণের কথা বলেছি।”

গত পহেলা মার্চ দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য জাকারিয়া জাকা মসজিদের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। গত ১৩ মার্চ নির্মাণকাজ বন্ধ চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রণজিৎ কুমার সিংহ। অভিযোগ পাওয়ার পর জেলা প্রশাসন নির্মাণকাজ সাময়িক বন্ধ রাখে।

'জেলা প্রশাসক নির্মাণকাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন'

রণজিৎ কুমার সিংহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক আজ (রোববার) ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। তিনি সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে তিনি বলেছেন, এটা রাজ দেবোত্তর এস্টেটের জমি। ফলে সেখানে মসজিদ নির্মাণকরা যাবে না। স্থায়ীভাবে নির্মাণকাজ বন্ধ করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। যেহেতু বিষয়টির মীমাংসা হয়ে গেছে, ফলে এখন আর আমরা এটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না।”

বিষয়টি কি মীমাংসা হয়ে গেছে, জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "জেলা প্রশাসক মহোদয় এসেছিলেন। তিনি আমাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বলেছেন। এই জমি তো এক সময় খাস জমি ছিল। পরে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে। এখানে যে মসজিদটি ছিল সেটা ৭৫-৮০ বছরের পুরনো। টিনশেড ছিল, মুসল্লিদের জায়গা হতো না, সেই কারণে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলে তিনতলার ভিত দিয়ে সমজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছিল।”

'এ জমি রাজ দেবোত্তর এস্টেটের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে'

জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের পর আপনারা কি কাজ বন্ধ করেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, "কাজ তো আগেই বন্ধ। জেলা প্রশাসনই আমাদের বরাদ্দ দিয়েছিল, এখন তারা অস্বীকার করছে। এখন আমরা কমিটির সবাই বসে বাকি সিদ্ধান্ত নেব।”

রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রণজিৎ কুমার সিংহ জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেছেন, "কাহারোল উপজেলার কান্তনগর মৌজায় সিএস ২ নম্বর খতিয়ানটি শ্রীশ্রী কান্তজিউ বিগ্রহ পক্ষে সেবাইত অনারেবল মহারাজা জগদীশ নাথ রায় নামে প্রচারিত। ওই খতিয়ানে কান্তজিউ বিগ্রহর নামে ৯৪ দশমিক ০৭ একর জমি রয়েছে। এসএ ০৫ নম্বর খতিয়ানে দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেটের পক্ষে জিম্মাদার জেলা প্রশাসক ১৯টি দাগে ৬২ দশমিক ৪৬ একর জমি রয়েছে। বাংলা ১৪৩০ সন পর্যন্ত জমির খাজনা হালনাগাদ রয়েছে। গত ১০ মার্চ জানতে পারি যে, কান্তনগর মৌজার ১৬ নম্বর দাগে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের সম্পত্তির ওপর একটি পাকা মসজিদ তৈরি করা হচ্ছে। এটা শুনে গত ১১ মার্চ নির্মাণাধীন মসজিদের জায়গাটি পরিদর্শন করি, দেখি মসজিদটি রাজ দেবোত্তর এস্টেটের কান্তনগর মৌজার এসএ ৫ নম্বর খতিয়ানের ১৬ নম্বর দাগের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে।”

লিখিত অভিযোগে রণজিৎ কুমার সিংহ আরও বলেন, "ঘটনাস্থলে উপস্থিত মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মোজাম্মেল হকের কাছে কীভাবে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করছেন, জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৯৭৬ সালে ডিসি দিনাজপুর ওই জমি তাদের দিয়েছেন। তার কাছে দলিল দেখতে চাইলে তিনি একটি হাতে লেখা তিন পৃষ্ঠার আপসনামার ফটোকপি দেন। কথিত আপসনামাটি যাচাই করে দেখি, উহা কোনো বরাদ্দ নয়। এটি কোনো রেজিস্ট্রিকৃত জমির দলিল নয়। ওই কাগজে মালিকানা হস্তান্তরের কোনো কথা উল্লেখ নেই। আপসনামাটি ভুয়া ও বানোয়াট মনে হয়। তা ছাড়া ১৯৯৯ সালের ৫১ ডিএলআর বলা হয়েছে, দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য নয়, উহা সব সময়ের জন্য দেবোত্তর সম্পত্তি।”

পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র তীর্থস্থান দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দিরের দেবোত্তর ভূমিতে অবৈধভাবে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। স্থানীয় অনেকেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষার জন্য প্রশাসনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

'বিকল্প জায়গায় মসজিদ নির্মাণের কথা বলেছি'

বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি কি? কোন উত্তেজনা আছে কিনা? জানতে চাইলে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "জেলা প্রশাসন মসজিদ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পরকেউ যেন গুজব ছড়িয়েআইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে, সেদিকে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোন ধরনের উত্তেজনা নেই। সবাই শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আছেন।”

যে জমিতে মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছিল সেটা যে মন্দিরের জায়গা, আপনি কি আগে জানতেন? জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. জাকারিয়া জাকা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমাকে কয়েকজন ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। আমি আসলে কিছুই জানতাম না। পরে যেটা জেনেছি, ওখানে ১৯৫০ সালের একটা মসজিদ ছিল। ১৯৯৩ সালে সেটা সংস্কার হয়। এবার সেই টিনসেড মসজিদ ভেঙে একটি পাকা মসজিদ করা হচ্ছিল। আমি সেখানে কোনো অনুদানও দেইনি। বিষয়টি আমার নজরে আসার পর আমি নিজেই জেলা প্রশাসককে বলেছি, খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিতে। এখন জেলা প্রশাসক সেটা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি মসজিদ কমিটিকে বলেছি, অন্য জায়গা দেখতে। আমি সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।”

জনাব জাকারিয়া জাকা বলেন, "আমার এলাকা শান্তিপূর্ণ এলাকা। সেখানে কেউ বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ পাবে না। স্থানীয় প্রশাসনও সতর্ক আছে। আমি নিজেও খোঁজখবর নিচ্ছি। ইনশাল্লাহ আর কিছু হবে না।” ওই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, "তিনি নিজেই ওই মসজিদে অনুদান দিয়েছেন। এখন নির্বাচনে হেরে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তিনি এসবের পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন।”