1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাতারে মৃত এক ভারতীয় শ্রমিকের কাহিনি

১৬ ডিসেম্বর ২০২২

২০১৪ সালে বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম বানাতে কাতারে গেছিলেন ওই শ্রমিক। মৃত্যু হয় এক সপ্তাহের মধ্যে।

https://p.dw.com/p/4L24c
কাতারে কাজ করতে যাওয়া ভারতীয় শ্রমিক
ছবি: Hassan Ammar/AP/picture alliance

দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানা থেকে কাতারে যান মাম্মাই লক্ষ্মণ। যাওয়ার আগে স্ত্রীকে বলে যান, কাতারে কাজ করে অনেক বেশি টাকা রোজগার করবেন। বাচ্চাদের ভালো স্কুলে পড়াশোনা করাবেন। আট বছর পরও শেষ দিনের সেই স্মৃতি স্পষ্ট মনে পড়ে স্ত্রী মাম্মাই লক্ষ্মীর। ডিডাব্লিউকে তিনি জানান, ভারতের বিমানবন্দর থেকে শেষবার ফোন করেছিলেন লক্ষ্মণ। বলেছিলেন, পৌঁছে স্থানীয় সিম নেবেন, তারপর আবার ফোন করবেন। সেই ফোন আর আসেনি। লক্ষ্মণ পৌঁছানোর প্রায় বেশ কিছুদিন পর লক্ষ্মীকে জানানো হয়, তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে।

কাতার বিশ্বকাপ শেষে স্টেডিয়ামগুলোর কী হবে?

সেই থেকে বিচারের জন্য লড়াই করছেন লক্ষ্মী। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, বিভিন্ন মহলে ঘুরেছেন তিনি। ক্ষতিপূরণের আশায়। কিন্তু আট বছর কেটে গেলেও কোনো ক্ষতিপূরণ মেলেনি। লক্ষ্মীর বাড়িতে এখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। সরকারের সামান্য বিধবা ভাতা পান। দিনমজুরের কাজ করে বাকি রোজগার। এক এক দিন ভাত আর আচার খেয়ে পেট ভরাতে হয় গোটা পরিবারকে।

আট বছর আগে লক্ষ্মণ অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাড়িতে বলেছিলেন, কাতারে রোজগার অনেক বেশি হবে। সে কারণেই বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম বানানোর কাজ নিয়ে সেখানে গেছিলেন তিনি। বস্তুত, ২০১০ সাল থেকেই কাতারে স্টেডিয়াম তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছিল। লক্ষ্মণও সেই কাজে যোগ দিতে গেছিলেন।

কাতারে মারা যাওয়া সুজনের পরিবারের দুঃখ গাথা

কাতারের দাবি, ফুটবল স্টেডিয়ামের কাজ করতে গিয়ে তিনজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আর ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে অন্য সময়ে। কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য বলছে, অন্তত ৫০০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে কাতারে কাজ করতে গিয়ে। বস্তুত, কাতারের শ্রমিক আইন অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে কারো মৃত্যু হলে ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অভিযাগ, ক্ষতিপূরণ বাঁচাতেই কাতার শ্রমিকের মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, কাতারের ভয়াবহ গরমে শ্রমিকদের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাটুকুও দেওয়া হয়নি। অমানুষিক পরিশ্রম সহ্য করতে না পেরেই লক্ষ্মণের মতো বহু শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলিও ক্ষতিপূরণের দাবি করছে। ভারতের একটি মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান ভিম রেড্ডি মান্ধা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''ভারতের সরকারও কাতারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করার বিষয়ে খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে না।''

ভারত সরকারেরঅবশ্য দাবি, ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে কাতারে অন্তত দুই হাজার ৪০০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ভারত তাদের কাগজ পাঠিয়েছে কাতারে। অন্তত ৮১ জনের ক্ষতিপূরণের দাবি ঝুলে আছে। কাতার সাহায্য করছে না বলেই ভারতীয় প্রশাসনের দাবি।

মান্ধার বক্তব্য, ''কাতারে শ্রমিকদের মৃত্যু, মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশ সরব। কিন্তু ভারত সরব নয় কারণ, তাহলে ভারতে শ্রমিকদের দুর্দশার উত্তরও তাদের দিতে হবে।'' মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, ভারতে শ্রমিকদের এত বেশি সংকট বলেই তাদের বিদেশে কাজের খোঁজে যেতে হয়।

মিধাত ফাতিমা/এসজি