1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতায় সালামের বই এনেও বিক্রি করতে পারলেন না প্রকাশক

গৌতম হোড় কলকাতা
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

এ এক অদ্ভূত লুকোচুরি খেলা। কলকাতা বইমেলার স্টলে ফাহামের বই নিয়ে এসেও বিক্রি করতে পারছে না আদর্শ প্রকাশন।

https://p.dw.com/p/4MwAd
ছবি: Subrata Goswami/DW

কলকাতা বইমেলায় আদর্শ-র স্টল আছে। সেই স্টলে ফাহাম আব্দুস সালামের বিতর্কিত বই বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে-ও আছে। তবু এই বই  বিক্রি করা যাচ্ছে না। দেখানোও যাচ্ছে না। স্টলে লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে বইগুলি। কারণ, নির্দেশ চলে এসেছে, সালামের এই বই বিক্রি করা যাবে না। এই নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি।

আদর্শ প্রকাশনের মাহবুব রহমানকে ৩০ জানুয়ারি চিঠি লিখে সমিতির অফিস নির্বাহী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এই বই বিক্রি বা স্টলে প্রদর্শন করা যাবে না। এই নির্দেশ যখন দেয়া হয়েছে, তখন কলকাতা বইমেলার উদ্বোধন হয়ে গেছে। বইও চলে এসেছে স্টলে। চিঠি পাঠাবার পর ফোন করেও তাদের একই কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খায়রুল ইসলাম পলাশ। কলকাতা বইমেলায় তিনিই এখন আদর্শের স্টল সামলাচ্ছেন।

বইমেলায় বংলাদেশের প্যাভিলিয়ন। এখানেই আছে আদর্শের স্টল।
বইমেলায় বংলাদেশের প্যাভিলিয়ন। এখানেই আছে আদর্শের স্টল। ছবি: Subrata Goswami/DW

বইগুলো তাহলে কোথায় রাখলেন? প্রশ্নটা শোনামাত্রই হাত দিয়ে নিজের সামনের ঢাকা টেবিলের নিচের দিকটা দেখিয়ে দিলেন পলাশ। বললেন, দেখুন না, এখানে রেখেছি। অনুরোধ করলাম, বইটা একটু দেখতে পারি। পলাশ বইটি বের করে দিলেন। উল্টেপাল্টে দেখে বললাম, আপনি কি আমাকে বইটি বিক্রি করবেন? পলাশের জবাব, পারব না, নিষেধাজ্ঞা আছে। কাউকেই বিক্রি করছি না। দুঃখিত।

‘কেন এই নিষেধাজ্ঞা জানি না’

পলাশের বক্তব্য, কেন এইভাবে তাদের বই বিক্রি করতে মানা করা হচ্ছে, তা তারা একেবারেই বুঝতে পারছেন না। বইটি প্রকাশ করার আগে তারা আগাগোড়া পড়েছেন। কোথাও আপত্তিকর কিছু দেখেননি। বরং লেখকের লেখা তাদের আকর্ষণীয় লেগেছে।

সবথেকে বড় কথা, বইটি নিষিদ্ধ করা হয়নি। কিন্তু বলা হচ্ছে, বিক্রি করা যাবে না। সরকার বলছে না, বলছে পুস্তক বিক্রতে সমিতি। বাংলাদেশের বইমেলা নিয়ে পুস্তক বিক্রেতা সমিতির কর্মকর্তারা ঢাকায় ব্যস্ত। মঙ্গলবার অন্তত তাদের দেখা পাওয় যায়নি। ফলে তারা কেন এরকম ফতোয়া দিলেন তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

পলাশ বলছিলেন, ‘‘একুশের বইমেলায় তো আমাদের স্টলই দেয়া হয়নি। আমাদের তিনটি বই নিয়ে ওদের আপত্তি ছিল। তবে প্রধান আপত্তি সালামের বই নিয়ে।’’

সালামের বইয়ের লেখক পরিচিতিও দেয়া আছে।
সালামের বইয়ের লেখক পরিচিতিও দেয়া আছে। ছবি: Subrata Goswami/DW

সালামের বই

এমন নয় যে, সালামের বইটা নতুন। ১৫০ পাতার হার্ড বাউন্ড বইয়ের প্রথম প্রকাশ ৪ মার্চ, ২০২২। তৃতীয় মুদ্রণ হয়েছে ২০২৩-এ। লেখক পরিচয়ে বলা হয়েছে, সালাম ২০০৪ থেকে অস্ট্রেলিয়া নিবাসী। এটাই তার প্রথম বই। এখন তিনি রেগুলেটরি সায়েন্স নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু তার উৎসাহ ও আগ্রহ মনস্তত্ত্ব, ভাষা, রাজনীতি, বিজ্ঞান ও ধর্ম নিয়ে। বইটি বিভিন্ন বছরে লেখা তার নিবন্ধের সংকলন। ফলে নিবন্ধও আগে প্রকাশিত। বইও এক বছরের বেশি সময় ধরে বাজারে আছে। তাহলে হঠাৎ কেন সেই বই নিয়ে এমন নিষেধাজ্ঞা?

গণতান্ত্রিক দেশে

প্রকাশক মহম্মদ হাসান মামুন বসেছিলেন তার স্টলে। তাদের একটা বইও পাঁচ বছর ধরে নিষিদ্ধ থাকার পর আবার ছাড়পত্র পেয়েছে। হুমায়ুন আজাদের লেখা বই সম্পর্কে মামুন ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘‘প্রথমে ভাবা হয়েছিল, এই বই ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হেনেছে। ভালো করে দেখার পর তারা বুঝতে পেরেছেন, এই বইয়ে এমন কিছু নেই, যা কোনো বিশ্বাসকে আহত করতে পারে।’’

মামুনের বক্তব্য, ‘‘সালামের বই নিষিদ্ধ হয়নি। কিন্তু এখানে সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে কিছু কথা আছে বলে বইয়ের বিক্রি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আমরা এই নির্দেশ মানতে বাধ্য়।’’

বইমেলায় আয়োজকদের কথা

কলকাতা বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স ও বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘‘আমরা শুনেছি, একটি বই বিক্রি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আমরা কাউকে কিছু বলিনি বা আমাদের কাছে কেউ এই অনুরোধ করেনি। আমরা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বইয়ের উপর এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত নয়।’’

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷