কলকাতা: এ পথে আমি যে গেছি বারবার
ঐতিহ্যের শহর কলকাতা। তার গলি থেকে রাজপথ ইতিহাসের সাক্ষী। কলকাতার ব্যস্ততম রাস্তাগুলি তিনশ বছরের ক্লান্তি অতিক্রম করেও সচল ও সজীব। অনেক প্রাচীন ভবন, সৌধ, স্থাপত্য ছুঁয়ে "কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে৷" দেখুন ছবিঘরে...
দুই ইডেনের উদ্যান
সবুজে ঘেরা ময়দানের মধ্যমণি ইডেন গার্ডেন। গোষ্ঠ পাল সরণির ধারে ক্রিকেটের নন্দনকানন। ব্রিটিশ ভারতের সাবেক গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যান্ডের দুই বোন এমিলি ও ফ্যানি ইডেনের উদ্যোগে উদ্যানের প্রতিষ্ঠা। ইংরেজদের ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব এখানে ঠাঁই নেয়। সাবেক ভারতীয় ফুটবলার গোষ্ঠ পালের নামে পথের নামকরণ৷
আকাশবাণী ভবন ছুঁয়ে
ভারতীয় সংস্কৃতি চর্চার পীঠস্থান আকাশবাণী। নামকরণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। শতাব্দী ছুঁই ছুঁই এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু ১৯২৭ সালের ২৬ আগস্ট। তখন নাম ছিল ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি। গারস্টিন প্লেস থেকে এই ভবনে উঠে আসে আকাশবাণী। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ ছুঁয়ে গিয়েছে এই ভবনকে। এর পাশ দিয়ে কিছুটা এগোলেই বাবুঘাট৷
ভুলে যাওয়া পথ
ইউরোপীয় স্থাপত্য শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে। বেলজিয়ামের ক্লথ হলের আদলে তৈরি হাইকোর্ট। এসপ্ল্যানেড রোড ওয়েস্ট-এর উপর দাঁড়িয়ে দেড়শ বছরের পুরোনো ভবনটি। এর কাছেই ছিল পুরোনো ডাকঘর। সে কারণে পথটি ওল্ড পোস্ট অফিস স্ট্রিট নামে রয়ে গিয়েছে প্রবীণদের স্মৃতিতে। কাছেই ঐতিহাসিক টাউন হল৷
নামই যখন ইতিহাস
হেমন্ত বসু সরণি ও ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট আগলে রেখেছে পুরাকীর্তি সেন্ট অ্যান্ড্রুজ চার্চকে। গ্রিক শৈলীতে নির্মিত এই গির্জা। আগে এখানে ছিল মেয়রের কোর্ট। তা থেকেই ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট নামটির উদ্ভব। মেয়রের আদালত ভেঙে গড়ে ওঠে প্রায় দুশ’ বছরের পুরোনো গির্জাটি৷
বিপ্লবীর স্মরণে
শহরের পথ অনেক ঘটনার সাক্ষী। লালবাজার স্ট্রিটে চৌমাথার মোড়ে অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হতো। এই এলাকায় পরে তৈরি হয় কলকাতা পুলিশের সদর কার্যালয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবীর স্মরণে এখন রাস্তার নাম বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট। এই রাস্তার দুধারে, বৌবাজারে অলঙ্কার ব্যবসার মূল কেন্দ্র৷
লর্ড বেন্টিঙ্কের স্মৃতি
সাহেবদের নামে পরাধীন দেশের বহু রাস্তার নামকরণ করা হয়েছিল। এখন সেসব নাম প্রায় মুছে গিয়েছে। কিন্তু জনতার মুখে রয়ে গিয়েছে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট। সাবেক গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের নামে এই রাস্তা। এই পথের ধারে মার্কেন্টাইল বিল্ডিং নজর কাড়ে। নির্মাণ ভিক্টোরীয় শৈলীতে। এখানে ছিল মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সদর কার্যালয়৷
করণিকদের আস্তানা
আরেক সাবেক গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি। তার নামে ডালহৌসি স্কয়ারের ধারে সুদৃশ্য রাইটার্স বিল্ডিং। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির করণিক বা রাইটাররা এখানে থাকতেন। এখান থেকে ব্রিটিশরা ১৯১১ সাল পর্যন্ত ভারতকে পরিচালনা করেছে। অগ্নিযুগের তিন বিপ্লবীর স্মরণে এই পথের নাম বদলে এখন বিনয় বাদল দীনেশ বাগ৷
পরাধীন দেশের চিহ্ন
রাস্তার নামে উপনিবেশের গন্ধ লেগে। সাহেবের নামে আরো এক পথ ব্র্যাবোর্ন রোড। সাবেক ব্রিটিশ প্রশাসক লর্ড ব্র্যাবোর্ন। হাওড়া সেতুর সঙ্গে কলকাতাকে জুড়ে রেখেছে। কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত চৌমাথায় দাঁড়িয়ে ভারতীয় টি বোর্ডের বহুতল। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর থেকে ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র ও বাজার ঘিরে দিনভর সরগরম এই এলাকা৷
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ইউরোপ
অনেকটা মার্কেন্টাইল বিল্ডিংয়ের দোসর। প্রাচীন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়ালে মনে হতেই পারে, ইউরোপের কোনো পথে এসে পড়েছেন। ইন্ডিয়ান এক্সচেঞ্জ প্লেস রোডের উপর এই ভবনের সামনে তিনমাথার মোড়। কাছেই রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও পূর্ব রেলের সদর কার্যালয়৷
চিঠিপত্রের দপ্তর এবং নেতাজি
শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে ভারতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের স্মরণে। তার একটি নেতাজি সুভাষ রোড। লালদিঘির ধার ঘেঁষে এই রাস্তা ধরে এগোলে থমকে যেতে হয় শ্বেতশুভ্র জিপিও ভবনের সামনে। ডাক বিভাগের এই প্রধান কার্যালয়ের নকশা এক ইউরোপীয় স্থপতির। গম্বুজের উপর ঘড়িটি নজর কাড়ে৷
হুগলি নদীর কাছে
হুগলি নদীর পাশে চক্ররেলের লাইন। তার গা ঘেঁষে ছুটছে স্ট্র্যান্ড রোড। এই রাস্তায় মিশেছে হেয়ার স্ট্রিট। ডেভিড হেয়ার ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। হেয়ার স্ট্রিটের শেষ প্রান্তে, স্ট্র্যান্ড রোডের উপর মেটকাফ হল, সাবেক লেফটেন্যান্ট গভর্নর চার্লস মেটকাফের নামে৷
চৌরঙ্গির টিপু সুলতান
সাহিত্যিক শংকরের উপন্যাসে অমর হয়ে গিয়েছে চৌরঙ্গি। কলকাতার প্রাণকেন্দ্র থেকে একটি রাস্তা গিয়েছে রাজভবনের দিকে, আর একটি মৌলালির উদ্দেশে। ধর্মতলায় চৌমাথার মোড়ে টিপু সুলতান মসজিদ শহরের অন্যতম ল্যান্ডমার্ক। টিপু সুলতানের পুত্র গোলাম মহম্মদ এটি তৈরি করেন ব্রিটিশ আমলে৷