1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা টিকার সংকট কাটবে কি?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ জুলাই ২০২১

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতি মাসে এক কোটি ডোজ করে টিকা দেওয়া পরিকল্পনা করছে সরকার৷ তবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় টিকা সরবরাহ আছে কিনা সে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3y1dS
ফাইল ছবিছবি: Rashed Mortuza/DW

মন্ত্রণালয়ে রবিবার টিকা ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক বৈঠকের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এখন পর্যন্ত ২১ কোটি ডোজ টিকার পাওয়ার বিষযে নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে৷ এর মধ্যে দুই কোটি দ্রুতই সরকারের হাতে পৌঁছাবে৷ সেই প্রেক্ষিতেই প্রতিমাসে এক কোটি ডোজ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷

তিনি জানান, বাংলাদেশে এই মহূর্তে একসঙ্গে আট কোটি ডোজ টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে৷ তার মধ্যে ৩০ লাখ টিকা রাখা যাবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রায়৷ সংরক্ষণের সংক্ষমতা বাড়াতে নতুন ফ্রিজ আনা হচ্ছে৷ আর পুরো টিকা সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার ব্যাপারেও পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে৷ সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আর টিকার সংকট হবে না বলে মত দেন তিনি৷

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ডের টিকা পাঠানো বন্ধ করার পর বাংলাদেশ টিকা সংকটে পড়ে গণটিকা কর্মসূচি থামিয়ে দিতে হয়েছিল সরকারকে৷ পরে বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের পর গত ২ জুলাই থেকে আবারো গণটিকাদান শুরু হয়৷ এর আগে ৭ এপ্রিল প্রথম গণটিকা দেয়ার পর ২৫ এপ্রিল তা স্থগিত করা হয়েছিলো৷

বিভিন্ন উৎস থেকেই সরকার টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে৷ শনিবার জাপান থেকে অক্সফোর্ডের দুই লাখ ৪৫ হাজার টিকা এসেছে৷ বাংলাদেশকে বিভিন্ন সময়ে উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা দেওয়া দেশ জাপান মোট ২৯ লাখ টিকা দেবে বলে আশ্বস্ত করেছে৷ ফলে যারা অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছিলেন না তাদের বিষয়ে অনিশ্চয়তা কাটবে বলে আশা করা হচ্ছে৷

‘আশা করি ভবিষ্যতে আর সংকট হবে না’

জাপানের দেওয়া টিকা ছাড়াও দেশে এ পর্যন্ত অক্সফোর্ড টিকা এসেছে এক কোটি ৩ লাখ৷

এদিকে চীন উপহার হিসেবে সিনোফার্মের ১১ লাখ টিকা দিয়েছে৷ গত সোমবার চীনের সিনোফার্মের কাছ থেকে কেনা ২০ লাখ টিকা আর কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০ লাখ মডার্নার টিকা পাওয়া গেছে৷ আগামি আগস্ট মাসে চীন আরো ৪০ থেকে ৫০ লাখ টিকা পাঠাবে৷ কোভ্যাক্সের নিয়মিত বরাদ্দ থেকে অক্সফোর্ডের ১০ লাখ ও ফাইজারের ৬০ লাখ টিকা আগামি আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ বা সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে আসার কথা রয়েছে৷

সেই সাথে রাশিয়ার সঙ্গে চলতি মাসেই টিকার বিষয়ে চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে৷ চুক্তি হলে রাশিয়া থেকে প্রথম ধাপে পাওয়া যাবে ১০ লাখ টিকা৷ সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ২ কোটি ডোজ টিকার পাওয়া যাবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে৷ এর বাইরেও চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশে চীনের টিকা উৎপাদন প্রক্রিয়া চলছে৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান জানান, ‘‘টিকা নিয়ে আর কোনো সংকট নেই, আশা করি ভবিষ্যতে আর সংকট হবে না৷ আমাদের যে পরিমাণ টিকা পাইপ লাইনে আছে এবং আরো যে টিকা পাওয়া যাচ্ছে তাতে সবাইকে টিকা দেয়া যাবে৷’’

টিকাদেনের ক্ষেত্রেও নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার৷ টিকা নেওয়ার বয়স কমিয়ে ৩০ বছর করা হয়েছে৷ আর যারা ফ্রন্টলাইনার তাদের পরিবারের সদস্যদের ১৮ বছর পর্যন্ত টিকা দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে৷

‘টিকার ব্যবস্থাপনার দিকে এখন জোর দিতে হবে’

শুরুতে মানুষের মধ্যে কিছুটা সংশয় ধাকলেও এখন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে টিকার আগ্রহ বাড়ছে৷ এ পর্যন্ত এক কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৯৭ জন টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন৷

দেশে এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ডের টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৩৩ জন, ফাইজারের পাঁচ হাজার ২১৭, সিনোফার্মের ১১ লাখ ৭২ হাজার ৬২৪ এবং মডার্নার টিকা নিয়েছেন তিন লাখ ছয় হাজার ১২৩ জন৷

বিএসএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে তাতে টিকা নিয়ে আর সংকট হবে বলে মনে করি না৷ কোভ্যাক্স বড় একটি সাপোর্ট দিচ্ছে৷ আর অনেক দেশই একন টিকা বিক্রি করবে৷ তাই টিকা কিনে নিতে পারলে কোনো সংকট হওয়ার কথা নয়৷ জাপান থেকে অক্সফোর্ডের টিকা আসায় এই টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েও সংকট কেটে গেল৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘রাশিয়া সাত কোটি ডোজ টিকা দিচেছ৷ চীনের সাথে বাংলাদেশ এখানে যৌথ উদপাদনে যাচ্ছে৷ তাই টিকার ব্যবস্থাপনার দিকে এখন জোর দিতে হবে৷ প্রথমে আমাদের কৌশলগত কিছু ভুলের কারনে টিকা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল৷’’

এখন যারা টিকা নিচ্ছেন তাদের এক বছর পর আবারো টিকা নিতে হবে৷ তাই সেভাবেই টিকাদান প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে হবে বলে জানান তিনি৷