1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কক্সবাজারে পাহাড় ধসে ৬ জনের মৃত্যু, দুর্ভোগে পর্যটকরা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রবল বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কক্সবাজার শহর এবং সংলগ্ন এলাকা৷ অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন৷ ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের দুটি পৃথক ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4kc5w
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প
ভারি বর্ষণ এবং পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণের ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ধসের ঝুঁকিতে রয়েছেছবি: Kazi Salahuddin Razu/NurPhoto/picture alliance

শুক্রবার ভোররাতে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককুল ও উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় পাহাড় ধসে ছয় জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে৷

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণের কারণে হঠাৎ কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ডিককুল এলাকায় পাহাড় ধসে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়৷ তারা হলেন, ওই এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী আঁখি মনি (২৬) এবং তার দুই শিশুকন্যা মিহা জান্নাত নাঈমা ও লতিফা ইসলাম৷ তাদের প্রতিবেশী মোহাম্মদ রুস্তুম জানান, রাতের পর থেকে টানা বৃষ্টি হওয়ায় মিজানের বাড়ির দিক থেকে পাহাড়ধসের একটি বিকট শব্দ শোনা যায়৷ পরে তারা সেখানে গিয়ে দেখেন মিজানের পরিবারের সদস্যরা মাটিচাপা পড়েছে৷ পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে মা ও দুই মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে৷

ওই এলাকার ইউপি সদস্য কুদরত উল্লাহ শিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই পরিবারটি পাহাড়ের ওপর ঘর তৈরি করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছিল৷ ভারী বর্ষণে তা ধসে পড়ে৷ অন্যান্য এলাকায় আরো কয়েকটি ঘর ধসে পড়েছে৷ সেখানে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন৷''

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর চৌধুরী বলেন, ‘‘এখানে পাহাড়ের ওপর অনেক ঝূঁকিপূর্ণ ঘর-বাড়ি আছে৷ এর আগেও প্রবল বর্ষণে একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও লোকজন সচেতন হচ্ছে না৷''

অন্যদিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়৷ তারা হলেন ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-২ ব্লকের কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফেজ ও আবদুল ওয়াহেদ৷ অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ্দৌজা নয়ন জানান, ‘‘যে তিনজন মারা গেছেন তারা সবাই রোহিঙ্গা৷ কেউ আহত হয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য নাই৷''

২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে: আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান

তিনি বলেন,‘‘এখানকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অধিকাংশই পাহাড়ের ওপর৷ পাহাড় কেটে তার ওপর তৈরি করা হয়েছে৷ আরো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ  ঘর-বাড়ি আছে৷ আমরা তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছি৷ এখানে যে কমিউনিটি স্পেসগুলো আছে, সেখানে তাদের আশ্রয় দিচ্ছি৷ তবে অনেকেই পাহাড় থেকে সরে যেতে চান৷''

এর আগে গত ২০ জুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে নারী ও শিশুসহ ১১ জন নিহত হন৷

এদিকে, কক্সবাজার শহরে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের কারণে শহরের প্রায় ৮০-৯০ ভাগ এলাকা ডুবে গেছে৷ সংলগ্ন উপজেলাগুলোর অবস্থাও একই রকম৷ কয়েক দিন ধরেই ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল৷ তবে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান৷ তিনি বলেন, ‘‘এর আগে ২০১৫ সালের ২৬ জুন এইরকম বৃষ্টি হয়েছিল৷ আরো একদিন এই রকম বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে৷ বুধবার থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়৷''

কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা নুপা আলম বলেন, ‘‘শহরের ৯০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে৷ শহরের বাইরে উখিয়া ও টেকনাফের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে৷ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও হাসপাতালসহ কিছু উঁচু এলাকারসহ অধিকাংশ এলাকাই পানির নিচে তলিয়ে গেছে৷''

আমাদের ৬০০-এর বেশি আশ্রয় কেন্দ্রের সবগুলোই আমরা খুলে দিয়েছি: বিভীষণ কান্তি দাস

তিনি বলেন, ‘‘কক্সবাজারের পানি নিষ্কাশনের অভাবে বিমানবন্দরের মূল সড়ক বন্ধ আছে৷ আর নালাগুলোও বন্ধ৷ ফলে ভারি বৃষ্টি হলেই কক্সবাজার ডুবে যায়৷''

‘‘শহর ও উপজেলার আশ্রয়বেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু অনেকেই এখানো তাদের বাড়ি-ঘরে অবস্থান করছেন৷ পানিতে মাছের ঘের, পোল্ট্রি ফার্ম, ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে,'' জানান তিনি৷ তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের বন্যায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা আবারো ক্ষতির মুখে পড়েছেন৷

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের ৬০০-এর বেশি আশ্রয় কেন্দ্র আছে৷ সবগুলোই আমরা খুলে দিয়েছি৷ আর যেসব এলাকায় পানি বেশি সেখানে আমরা ত্রাণের কাজ চালাচ্ছি৷ শুকনা এবং রান্না করা খাবার দিচ্ছি৷ বেসরকারি পর্যায়েও ত্রাণ কাজ চলছে৷ আমরা এখন চেষ্টা করছি, যারা দুর্গত তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে৷''

আগের বন্যায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের পুনর্বাসন কাজ চলছিল৷ এখন আবার নতুন করে তারা দুর্গত হয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি৷ এদিকে টানা ২০ ঘণ্টার ভারী বর্ষণে কক্সবাজার সৈকত এলাকার হোটেল-রিসোর্ট, কটেজ জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন পর্যটকেরা৷ শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন৷ তারা হোটেল বা রিসোর্টের বাইরে যেতে পারছেন না৷

এদিকে ঢাকার আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী তিন দিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভারী বৃষ্টি হবে৷ শুক্রবার আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশ এবং সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকার একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে৷ বর্তমানে একই এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে এটি অবস্থান করছে৷ এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও আরো ঘনীভূত হতে পারে৷