1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এমপি আনারের খুনিদের যোগাযোগ আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে

১০ জুন ২০২৪

ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের খুনিদের সঙ্গে ঝিনাইদহের আরেক আওয়ামী লীগ নেতার যোগাযোগের তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।

https://p.dw.com/p/4grnj
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার
আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা যুক্ত থাকতে পারেন বলে ধারণা করছে পুলিশছবি: Md. Nasim

হত্যাকাণ্ডের পর সেই নেতার সঙ্গে দেখাও করেছিলেন খুনিদের একজন।

রোববার ঢাকার একটি আদালতে তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। সেখানেই এসব তথ্য জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু গত ১৭ মে ফরিদপুরের ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে একটি গাড়ির মধ্যে আমানুল্লাহর সঙ্গে দেখা করেন এবং যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেখানকার ছবি দেখেন এবং হত্যাকাণ্ডে কত টাকা হাতবদল হয়েছে তা নিয়ে কথা বলেন।

এই তথ্য পাওয়ার পর শনিবার (৮ জুন) বাবুকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত তাকে সাত দিনের রিমান্ডে দিয়েছে। এ নিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশে চার জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। বাংলাদেশে গ্রেপ্তারকৃত অপর তিন আসামি সেলেস্টি রহমান, আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ও তানভীর ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং কারাগারে রয়েছেন।

আমানুল্লাহ আদালতে স্বীকার করেছেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য হত্যাকাণ্ডে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের সমন্বয়কারী ছিলেন তিনি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের আগের রাতে আমানুল্লাহর সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপে এ নিয়ে কথাবার্তা হয় আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবুর। তবে এসব কথোপকথন পরে মুছে ফেলা হয়েছে বলে ডেইলি স্টারকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন এক ডিবি কর্মকর্তা। তবে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে বাবুর জড়িত থাকার প্রমাণ পুলিশের কাছে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ডেইলি স্টার জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসাবে সন্দেহ করা হচ্ছে এমপি আনারের সঙ্গে স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালানের জড়িত আক্তারুজ্জামান নামে আরেক ব্যক্তি এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। এই আক্তারুজ্জামান আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদ বাবুর মামাতো ভাই।

এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সূ্ত্র উদ্ধৃত করে প্রথম আলো বলছে, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনারকে কলকাতায় হত্যার আগে তার ওপর চেতনানাশক প্রয়োগ করা হয়, তারপর তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর তার পোশাক খুলে ছবি তুলে সেটা পাঠানো হয় কাজী কামাল আহমেদ বাবুর হোয়াটস অ্যাপে। এমপি আনার মারা যাওয়ায় ঝিনাইদহ-৪ আসনে বাবুর 'মনোনয়ন পাওয়া নিশ্চিত', এমন ম্যাসেজও খুনিরা তাকে পাঠিয়েছিল।

প্রথম আলোর উল্লেখ করা সূত্রে ধারণা করা হচ্ছে, এটি আনোয়ারুল হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা হতে পারে। এছাড়া, ঝিনাইদহ-যশোর-খুলনা অঞ্চলের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা এই খুনের বিষয়ে অবগত থাকতে পারেন।

আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কাজী কামাল আহমেদের বাইরেও আরেক আওয়ামী লীগ নেতার নাম জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। তবে সেই নেতার নাম প্রকাশ করা হয়নি।

ভারতেও চলছে তদন্ত

জিহাদ হাওলাদার ও সিয়াম হোসেন নামে আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। সিয়ামের তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ভাঙ্গড়ের একটি খালে তল্লাশি চালিয়ে কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছে। কলকাতা সিআইডি রোববার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। তবে এসব হাড় মানুষের কিনা এবং মানুষের হলেও সেগুলো এমপি আনারের কিনা, তা জানতে আরো সময় লাগবে।

কলকাতায় যে ফ্ল্যাটে (সঞ্জিভা গার্ডেনস) আনারকে হত্যা করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানকার সেপটিক ট্যাংক থেকে কিছু মাংসের টুকরা উদ্ধার করেছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু সেগুলোও এমপি আনারের কিনা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য এখনও কলকাতা পুলিশ সংসদ সদস্যের ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌসের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলে জানিয়েছে প্রথম আলো।

এদিকে, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা দাবি করেছে, চিকিৎসার কারণ দেখিয়ে গত কয়েক বছর ধরে কয়েক জন বাংলাদেশি বিপুল টাকা ভারতে এনে তা বিনিয়োগ করেছেন সোনা পাচারের মতো বেআইনি কারবারে। সেই টাকার একাংশ অপরাধ জগতেও লগ্নি করা হয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

আনন্দবাজারকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, ‘মেডিক্যাল ট্যুরিজম'-কে সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন সংসদ সদস্য আজীম।

এডিকে/কেএম (দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, আনন্দবাজার)