এমএইচ৩৭০-এর টুকরো
৬ আগস্ট ২০১৫বুধবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে টেলিভিশনে বলতে শোনা যায়: ‘‘বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার ৫১৫ দিন পর আজ আমাকে গভীর দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একটি গোষ্ঠী চূড়ান্তভাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, লা রেউনিয়ঁ দ্বীপে প্রাপ্ত বিমানের অংশ বাস্তবিক এমএইচ৩৭০ থেকে এসেছে৷''
দুই মিটার লম্বা ‘ফ্ল্যাপেরন'-টি বিমানের পাখার একটি অংশ৷ ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ফরাসি দ্বীপটিতে ভেসে আসা অংশটি খুঁজে পাওয়া যায় গত ২৯শে জুলাই, পরে পাঠানো হয় ফ্রান্সে পরীক্ষার জন্য৷ বিমানের সিটের কুশন এবং জানলার কাচও নাকি লা রেউনিয়ঁ দ্বীপে খুঁজে পাওয়া গেছে, বলে জানিয়েছেন মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ৷
মার্কিন জাতীয় পরিবহণ নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক সদস্য, বিমানযাত্রা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জন গোগলিয়া ডয়চে ভেলের সাক্ষাৎকারে বলেন যে, তদন্তকারীদের এখনও কিছু কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে৷
ডিডাব্লিউ: লা রেউনিয়ঁ দ্বীপে পাওয়া ফ্ল্যাপেরনটি যে এমএইচ৩৭০ থেকে এসেছে, মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ তার প্রমাণ পেলেন কোথা থেকে?
জন গোগলিয়া: ফ্ল্যাপেরন-এর ওপর মুদ্রিত সংখ্যাটি নিয়ে গোড়ায় অনেক আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কোনো নির্দ্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি৷ তদন্তকারীরা নিশ্চয় বিমানটির উৎপাদনের নকশার সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছিলেন....বোয়িং যে বেশ কয়েকদিন আগেই (ফ্ল্যাপেরনটির) ড্রয়িং-এর খুঁটিনাটি ফরাসি কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত৷
অংশটা একটি বোয়িং ৭৭৭ থেকে এসেছে, এটা নির্ধারিত হবার পর সম্ভাবনা প্রবল যে, সেটি এমএইচ৩৭০ থেকে এসেছে, কেন না বোয়িং ৭৭৭ বিমানকে কেন্দ্র করে বিশেষ দুর্ঘটনা ঘটেনি; সে সব দুর্ঘটনাই শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে এবং তাদের একটিও ভারত মহাসাগরে ঘটেনি৷
এই ধ্বংসাবশেষ থেকে এমএইচ৩৭০ উড়ালের কী দশা ঘটেছে এবং কোথায় ঘটেছে, সে বিষয়ে কিছু জানা যাবে কি?
নিখোঁজ বিমানটির বাকি অংশ কোথায় আছে, সে বিষয়ে কিছু জানা যাবে না৷ তবে ধ্বংসাবশেষে যে সামুদ্রিক ঝিনুক ইত্যাদি লেগে রয়েছে, তা থেকে একটা হদিশ পাওয়া যেতে পারে৷ (ফ্ল্যাপেরন) ও তার জোড়া দেওয়ার অংশগুলোতে যে ড্যামেজ হয়েছে, তা থেকে জানা যেতে পারে, বিমানটা জলে পড়ার সময় কি অবস্থায় ছিল৷
আরেকটি পদক্ষেপে তদন্তকারীরা ফ্ল্যাপেরন জোড়া দেওয়ার পয়েন্টগুলি ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের তলায় স্ক্যান করে দেখবেন, ধাতব অংশগুলো ভাঙল কী করে৷ এ ধরনের অনেক খুঁটিনাটি জানতে পাওয়া যাবে, তবে দুর্ঘটনার কারণ অথবা বিমানটি এখন কোথায় রয়েছে, তা জানতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম৷
লা রেউনিয়ঁ দ্বীপে বিমানের সিটের কুশন এবং জানলার কাচ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে৷ তা থেকে কি দুর্ঘটনার কারণ জানা যেতে পারে?
এই অংশগুলো এমএইচ৩৭০ থেকে এসেছে কিনা, তা জানতে পারার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে৷ সিটগুলো, অথবা কুশনের কাপড় কিংবা ফোম থেকে নিখোঁজ বিমানটির সঙ্গে সংযোগের কোনো সন্ধান পাওয়া যেতে পারে৷ জানলার কাচের কোনো বিশেষত্ব নেই৷ তবে এই নতুন অংশগুলো থেকে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, বিমানটি জলে ধাক্কা খাবার সময় টুকরো টুকরো হয়ে যায়৷
এছাড়া এই সব পদার্থ থেকে বিমানে কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল কিনা, তার হদিশ পাওয়া যেতে পারে৷ দুর্ঘটনার কারণ জানার জন্য তদন্তকারীদের ফ্লাইট রেকর্ডারগুলো পাওয়া প্রয়োজন৷
বিমানযাত্রা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জন গোগলিয়া মার্কিন জাতীয় পরিবহণ নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক সদস্য৷