গুম-হত্যা আর কতদিন?
৩০ এপ্রিল ২০১৪সোমবার এক আলোচনা সভায় গুমের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন খোদ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত৷ সুরঞ্জিত বলেন, ‘‘গুম ও অপহরণ সীমা অতিক্রম করেছে''৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে রিয়াজ উদ্দীন লিখেছেন, ‘‘দেশে গুম, হত্যা আর বন্দুকযুদ্ধ যেন ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷ কত মায়ের চোখে এখনো অনবরত ঝরছে জল তার ইয়ত্তা নেই৷ ক্রসফায়ারে বরাবরই পুলিশের একই বক্তব্য – আসামিদের দল পুলিশের উপর হামলা চালালে পুলিশ পাল্টা গুলি করে, ফলে আসামিরা গুলিবিদ্ধ হয়৷ এখানে একটি বিষয় অস্পষ্ট যে আসামি ব্যতীত কেন আক্রমণকারী অন্যান্য ব্যক্তিরা আহত হন না৷ কেনই বা আসামিরা নিহত কিংবা আহত হচ্ছেন? এ নাটক দিয়ে আর কতদিন? গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে আর কত মায়ের বুক খালি হবে?''
তিনি হতাশা প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘‘জানি না দেশের সচেতন নাগরিক আর কতদিন এমন নিষ্ঠুর অবিচার সহ্য করে যাবেন৷ দেশে নানা গোয়েন্দা সংস্থা আছে, যাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে বেতন দেয়া হয় জনগণের সুবিধার জন্য৷ তারা কেন এ বিষয়ে কিছু জানেন না? দেশের সবাই নির্বিঘ্নে কাটাক তাঁদের অনাগত দিনগুলি – এমন নিশ্চয়তাটুকু রাষ্ট্রর কাছে তো চাইতেই পারি একজন নাগরিক হিসেবে?''
একই ব্লগে আহমেদ রশীদ লিখেছেন, ‘‘দেশে এখন অপহরণ আতঙ্ক চলছে৷ অভিযোগটি অপ্রিয় হলেও সত্য৷ কেন এসব অপহরণের ঘটনা ঘটছে তার রহস্য উৎঘাটনের দায়িত্ব সরকারের৷ পরিস্থিতি গুরুত্বের সঙ্গে উপলব্ধি করে অপহরণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে৷''
রশীদ লিখেছেন, ‘‘গত ১৬ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের ভুঁইগড় এলাকা থেকে অপহৃত হন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক৷ এই ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে ৩৫ ঘণ্টার মধ্যে তিনি মুক্তি পান৷ আশা করা হচ্ছিল, আর অপহরণের মতো ঘটনা ঘটবে না৷ কিন্তু সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ১১ দিন পর আবার নারায়ণগঞ্জে একই ধরনের ঘটনা ঘটল৷ দিন-দুপুরেই একসঙ্গে অপহৃত হলেন পাঁচ ব্যক্তি৷ বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার৷''
তিনি লিখেছেন, ‘‘অনেক সময় পুলিশ বা র্যাবের পরিচয় দিয়ে কাউকে গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে থানায় পাওয়া যায় না৷ পুলিশ কিংবা র্যাবের তরফ থেকে বলা হয়, তারা গ্রেফতার করেনি৷ তাহলে কারা এর সঙ্গে জড়িত? যারা পুলিশ বা র্যাবের নাম নিয়ে এই ধরনের অপরাধ কর্ম করছে তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব কি সরকারের ওপর বর্তায় না? ''
টি ইউ রিয়াদ গুমের ঘটনাকে একটি গল্পে রূপ দিয়েছেন৷ লিখেছেন, ‘‘নতুন জামা পরে বাড়ির সামনে রাস্তার ধারে বসে আছে ছয় বছর বয়সি রাহি৷ অপেক্ষা করছে তার আব্বুর৷ রাহির আব্বু রাহিকে আজ তাকে মেলায় নিয়ে যাবে বলেছেন৷ কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও আব্বু আসে না৷
মাগরিবের আজান তো দিয়ে দিল৷ আজ বোধহয় আর মেলায় যাওয়া হবে না৷ বিষন্ন মনে রাহি বাড়িতে ফিরে যায়৷ বাড়িতে ফিরে অপেক্ষা করতে থাকে৷ রাত নামে৷ তাও বাবার দেখা নেই৷ অবশেষে পরদিন সকাল দশটার দিকে রাহির আব্বুর সহকর্মী জানান, রাহির আব্বুকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে৷ এর পরদিন বিকেলের দিকে খবর আসে রাহির আব্বুকে পাওয়া গেছে পাশ্ববর্তী শহরে৷ তবে জীবিত নয় মৃত৷ তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে৷ এ খবর শুনে রাহি শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে সবার দিকে তাকায় কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না৷
রাহিরা জানে না তাদের আব্বুরা কিছু হিংস্র পশুদের পশুত্বের বলি হয়ে যাচ্ছে৷ মানুষ নামের কিছু হায়েনাদের হিংস্রতার খোরাকে পরিণত হচ্ছে৷ কিন্তু এভাবে আর কত?''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ