1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এখনো ট্রমায় রানা প্লাজার ২২ ভাগ শ্রমিক

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২২ এপ্রিল ২০১৮

পাঁচ বছরেও রানাপ্লাজার আহত শ্রমিকদের বড় একটি অংশ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি৷ ৫০ ভাগ শ্রমিক এখনো নানা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক কারণে কাজ করতে পারছেন না৷ ২২ ভাগ এখনো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত৷

https://p.dw.com/p/2wSmw
ফাইল ছবিছবি: Reuters

মাহমুদ হাসান হৃদয়৷ কোয়ালিটি সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন রানাপ্লাজার ৮ তলায় নিউওয়েভ ফ্যাশন নামের পোশাক কারখানায়৷ রানাপ্লাজা ধসে তিনি গুরুতর আহত হন৷ পাঁজর ভিতরে ঢুকে গেছে৷ ভেঙে গেছে মেরুদন্ড৷ ডান পা এখন আর কাজ করে না৷ অবশ হয়ে গেছে৷ তারপরও তিনি এখন কাক করতে চান৷

অন্তত পাঁচটি পোশাক কারখানায় কাজের জন্য গেছেন৷ কিন্তু করতে পারেননি৷

হৃদয়ের ভাষায়, ‘‘ভবনের ভিতরে ঢুকতে আমি ভয় পাই৷ আমরা মনে হয় সবকিছু ভেঙ্গে পড়বে৷ মাথা ব্যাথা করে৷ কোনো শব্দ হলেই ভয় পাই৷ মনে হয় সবকিছু কাঁপে৷'' ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন তিনি৷

‘মনে হয় সবকিছু ভেঙ্গে পড়বে’

‘‘রাতে ঘুমাতে পারি না৷ দুঃস্বপ্ন দেখি৷ আমি নিজেও কাজ করতে পারিনা৷ আর কেউ এখন আর কাজও দেয় না৷''

হৃদয় বলেন, ‘‘এখনো আমার চিকিৎসা চলছে৷ কিন্তু কোনো সরকারি সহায়তা পাই না৷ ভয় কাটাতে থেরাপি নিতে হয়৷ প্রতিবারে লাগে এক হাজার টাকা৷ আগে সভারের সিআরপি এবং ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা পেতাম৷ এখন আর পাইনা৷ তারা বলেন ফান্ড শেষ হয়ে গেছে৷ কোনো আয় নেই আমার৷ ভাইয়ের খরচে চলি৷ এক দুর্বিষহ জীবন আমার৷ স্ত্রীও আর আমার সঙ্গে নেই৷ সে চলে গেছে৷''

সাভার আশুলিয়া এলকায় এরকম আরো অনেক শ্রমিক আছেন যারা রানাপ্লাজার ঘটনায় আহত হয়ে এখনো দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন৷ কোনো কাজ পাননি৷ আর পেলেও তা করতে পারেন না মানসিক বিপর্যস্ততার কারণে৷ পাচ্ছেন না চিকিৎসাও৷

বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইড-এর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, আহত শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক (৪৮.৭%) এখনও কোনো কাজ করতে পারছেন না৷ ১২ শতাংশের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে৷ ২২ শতাংশ শ্রমিক এখনও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত৷

তবে অন্তত পাঁচ ভাগের এক ভাগ (২১.৬%) শ্রমিক আবারও পোশাক কারখানায় কাজে যুক্ত হতে পেরেছেন৷

‘এখন আর ফ্রি চিকিৎসা পান না’

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে অন্তত ১,১৩৪ জন শ্রমিক নিহত হন৷ আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২,৪৩৮ জনকে৷ মোট পাঁচটি পোশাক কারখানায় পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক কর্মরত ছিলেন৷

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির সাভার-আশুলিয়া-ধামরাই আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৩৬ জন শ্রমিক আছেন যাদের হাত-পা নেই৷ তারা পুরোপুরি পঙ্গু৷ ২৫০ জনের মত আছেন যারা কোনো না কোনো অঙ্গ হারিছেন এবং কাজ করার উপযুক্ত নন৷ আর অনেক শ্রমিক আছেন যারা এখনো মানসিকভাবে বিপর্যন্ত৷ তারাও কাজ করতে পারেন না৷ তারা সারাক্ষণ ভয়াক্রান্ত৷ তারা মনে করেন ভবন ভেঙ্গে পড়বে৷ দু:স্বপ্ন দেখেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘এখন আর সরকারি উদ্যোগে চিকিৎসা নেই৷ তারা এমনিতেইতো নি:স্ব হয়ে গেছেন৷ এখন নিজেদের পকেট থেকে চিকিৎসার খরচ চালানো তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ছে৷ তাই আমাদের দাবি, সরকার যেন কোনো একটা উপায়ে তাদের ধারাবাহিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন৷ এখন তারা কোথাও আর ফ্রি চিকিৎসা পান না৷ কিন্তু তাদের আরো বছরের পর বছর চিকিৎসা লাগবে৷''

অ্যাকশন এইড তিন বছর ধরে আহতদের একটি অংশের জন্য মনোসামাজিক চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি, নতুন কাজে প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ করছে৷ তাদের পুনর্বাসনের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থাও করেছিল৷ কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলানায় অপ্রতুল৷ আর গত জুলাইতে তাদের সেই প্রকল্পও শেষ হয়ে গেছে৷

অ্যাকশন এইড গবেষণার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের ম্যানেজার নুজহাত জেবিন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই শ্রমিকরা এখন শারীরিকভাবে দুর্বল এবং তাঁদের ভীতি এখনো কাটেনি৷ ১১০ জন শ্রমিক পুরোপুরি শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে গেছেন৷ আরো সাতশ'র মতো আছেন গুরুতর আহতের তালিকায়৷ তাঁদের জন্য ধারাবাহিক একটি স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ কিন্তু আমরা যাঁদের নিয়ে কাজ করেছি, আমাদের প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা আর ধারাবাহিক কোনো স্বাস্থ্য সেবার আওতায় নেই৷ কেউ কেউ আবার থাকতেও পারেন৷ কিন্তু এটাতো হলো রিকারিং ইনজুরি৷ একটা থেকে আরেকটা আসে৷ তাই তাঁরা সুস্থ হতে অনেক সময় নেবেন৷ তাঁদের ট্রমা থেকে বের করে আনতে আরো কাউন্সেলিং দরকার৷ সেটার কোনো ধারাবাহিক ব্যবস্থা নেই৷''

‘প্রকল্প শেষ, তাই তাঁরা ধারাবাহিক স্বাস্থ্য সেবার আওতায় নেই’

তিনি বলেন, ‘‘তবে ট্রাস্ট ফান্ড থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ৮০০ জনের জন্য একটি স্বাস্থ্য সেবা প্রকল্প এখনো চালাচ্ছে৷ আর ব্র্যাক গুরুতর আহত ১০৯ জনের জন্য একটি চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালাচ্ছে৷ কিন্তু এই হেলথ স্কিমের মধ্যে সাইকোস্যোশাল কাউন্সেলিংটা নেইা৷ এটা খুবই জরুরি৷ যারা এখনো ভয়-ভীতির মধ্যে আছেন তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর জন্য ব্যক্তিগত বা গ্রুপ কাউন্সিলিং দরকার৷ এখন প্রশ্ন উঠতে পারে কাউন্সিলিং কতদিন হবে৷ এটা আজীবন করা না গেলেও কয়েক বছর প্রয়োজন৷ দুই-চার মাসে হয়না৷''

তিনি বলেন, ‘‘এর সঙ্গে পুনর্বাসন জরুরি৷ কাউকে ভিন্ন পেশায় দেয়ার জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন৷ আবার একবারের প্রশিক্ষণে কেউ কেউ সঠিক জায়গায় নাও যেতে পারেন৷ তখন তার আবার নতুন স্কিল ডেভেলপমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে৷ সরকার যদি তাদের হেলথ কার্ড করে দেয়, আর তাদের সবাই যদি ডিজ্যাবিলিটি ভাতার আওতায় আসেন তাহলে বড় একটি কাজ হবে৷''

 

এই মানুষগুলোর স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার বলে আপনি মনে করেন? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷ 

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য