1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বিচার ব্যবস্থাভারত

এখনই এটা নিয়ে লম্ফঝম্প করাটা অপরিণত মস্তিষ্কের মানুষের চিন্তা: বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য

৭ ডিসেম্বর ২০২৪

জয়নগরে নাবালিকা ধর্ষণ, খুন কাণ্ডে ৬২ দিনের মাথায় দোষীর ফাঁসির ঘোষণা হয়েছে। পুলিশের তৎপরতায় খুশি বিচারপ্রার্থীরা। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, আরজি কর এর বিচারের জন্য কত দিন অপেক্ষা করতে হবে?

https://p.dw.com/p/4ns52

দক্ষিণ ২৪ পরগণার জয়নগরের নাবালিকা পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুন নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছিল রাজ্য। গত ৪ অক্টোবর গভীর রাতে বাড়ির কাছে জলা জমিতে মেয়েটির দেহ পাওয়া গিয়েছিল। তদন্তে সিট গঠন করে রাজ্য সরকার। ৩০ অক্টোবর ২৫ দিনের মাথায় চার্জশিট জমা দেয়া হয় বারুইপুর আদালতে। ৫ নভেম্বর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ৩৬ জন সাক্ষ্য দেন।  পাঁচই ডিসেম্বর দোষী সাব্যস্ত ১৯ বছরের মোস্তাকিন সরদার। ৬ ডিসেম্বর, ঘটনার ৬২ দিনের মাথায় পকসো আদালতে তার ফাঁসির সাজা হয়।

তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষ্যদান মামলায় গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্যই দ্রুত বিচার পেল জয়নগর। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমরাও সরেজমিনে তদন্ত করতে জয়নগরে গিয়েছিলাম। বহু মানুষ এই ঘটনাটা ঘটতে দেখেছেন। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিল। প্রত্যক্ষদর্শী থাকলে যে কোন অপরাধমূলক মামলায় সাজা হওয়াটা খুব সহজ ব্যাপার। বিচারপতি প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণের ভিত্তিতেই এই সাজাটা দিয়েছেন। এবার মামলাটা হাইকোর্টে যাবে, সেখানে বিচার বিবেচনা হবে, নিম্ন আদালতের রায় কতটা সঙ্গত হয়েছে। এখনই চূড়ান্ত ভাবে কিছু বলে দেওয়া যায় না।"

আরজি কর এর সঙ্গে তুলনা

গত ৯ আগস্ট আরজি করে কর্মরত চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটে। এরপর কেটে গিয়েছে প্রায় চার মাস। এখনো তদন্ত চলছে, মেলেনি বিচার। একদিকে যখন জয়নগরের ঘটনায় দোষীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হল ৬২ দিনের মাথায়, অন্যদিকে আর জি করে নিহত, নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মাকে বিচার চেয়ে সমাজ মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়েছে, নামতে হয়েছে পথে। তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে দাবি, আর জি করের ঘটনার তদন্তভার রাজ্য পুলিশের অধীনে থাকলে এত দিনে জয়নগরের মতো দোষীর ফাঁসি হয়ে যেত!

এ প্রসঙ্গে বাম সংসদ সদস্য আইনজীবী বিকাশরঞ্জন বলেন, "এটার সঙ্গে আর জি করের তুলনা যারা করছেন, তারা একেবারেই অপরিণত মস্তিষ্কের মানুষ। কারণ আর জি করের ঘটনা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সরকারি ব্যবস্থাপনায়, সরকারি হাসপাতালে সরকারি চিকিৎসকের খুন হয়েছে। এবং তার সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটও হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে যারা মনে করছেন যে জয়নগরে এত তাড়াতাড়ি বিচার হয়ে গেল, আর জি করে হচ্ছে না কেন, তারা হয়তো খুব পরিকল্পিতভাবেই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এই জিনিসটাকে হাজির করছেন।"

প্রসঙ্গ কামদুনি

পশ্চিমবঙ্গে ২০১৩ সালে ঘটেছিল কামদুনির ঘটনা। নৃশংস ওই ঘটনার বিচারে তিন দোষী সাব্যস্ত হয়। তাদের ফাঁসির সাজা দেয় নিম্ন আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় আরো তিনজনকে। কিন্তু উচ্চ আদালতে তাদের সাজা মকুব হয়। এই ঘটনার রেশ অনেকে টেনে আনছেন জয়নগর কাণ্ডের রায়ের ক্ষেত্রেও।

আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন বলেন, "আমাদের মনে রাখতে হবে, কামদুনি মামলাও হাইকোর্টে কিন্তু টিকতে পারেনি। হাইকোর্ট বলেছে সাক্ষ্য প্রমাণ নেই। এইজন্যই তাড়াহুড়ো করে করা সেই তদন্ত কতটা সঠিকভাবে হলো, এটা শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে হাইকোর্ট যখন পর্যবেক্ষণ করবে তার বিচারের ভিত্তিতে। এখনই এটা নিয়ে লম্ফঝম্প করাটা পুরোপুরি ভাবে অপরিণত মস্তিষ্কের মানুষের চিন্তা। এবং তদন্ত সম্পর্কে মানুষের মনে একটা ভুল ধারণা তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা।"

কামদুনি ঘটনার অনেকগুলো বছর কেটে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, ফালাকাটা, আলিপুরদুয়ার এরকম বহু জায়গায় ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। শুধু জয়নগরে এত তাড়াতাড়ি বিচার হল কী করে?

আইনজীবী বিকাশরঞ্জন বলেন, "জয়নগরের মামলাটা হয়েছে পকসো কোর্টে। পকসো কোর্ট একটা নির্দিষ্ট কোর্ট, যেখানে নাবালিকা মেয়েদের উপরে নির্যাতন হলে সেই বিচার চলে। জয়নগরের প্রত্যক্ষদর্শী বা পারিপার্শ্বিক তথ্য ভাল পাওয়া গিয়েছে। সেই জন্য জয়নগরে বিচার তাড়াতাড়ি হয়েছে। এখানে সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের কোনো বিষয় ছিল না। অন্যান্য ক্ষেত্রে সাক্ষ্য প্রমাণ ঠিকমতো পাওয়া যায় না। তদন্ত করতে দেরি হয় সেই জন্য। সে ক্ষেত্রে তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা অনেকটা তাৎপর্য রাখে। "

তিনি মনে করেন, জয়নগরের দ্রুত দোষীকে সাজা দেওয়ার পেছনে পুলিশের যে ভূমিকা দেখা গিয়েছে তা অনেকটাই আর জি কর আন্দোলনের চাপে। তিনি বলেন, "জয়নগরের ঘটনাটা ঘটেছে আর জি কর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে। এই আন্দোলন যখন প্রবল গতিতে চলছে, তখন জয়নগরের ঘটনা ঘটে। তাই পুলিশকে একটু বেশি তৎপরতার সঙ্গে, সততার সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস। আন্দোলনের চাপেই এটা হয়েছে।"