একে একে হারিয়ে যাচ্ছে পাপুয়া নিউ গিনির ভাষা
২৬ জুলাই ২০১১ইয়োসেফ ওয়ালি ইন্দোনেশিয়ার জয়পুরায় সেন্দ্রাওয়াসি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্বববিদ৷ গ্রামে গঞ্জে ঘুরে বেড়ান৷ কান খাড়া করে শোনেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা কোন কথ্য ভাষায় কথা বলছে৷ ক্রমশই অনেক বেশি মানুষ ভাষা ইন্দোনেশিয়ায় কথা বলছে, জানান তিনি৷ স্থানীয় কথ্য ভাষা ব্যবহার করছে শুধু বৃদ্ধবৃদ্ধারাই৷ এমনকি তাঁর দেখা কিছু গ্রামে এমন একজনকেও তিনি পাননি যে স্থানীয় ভাষার একটি শব্দও বুঝতে সক্ষম৷
অধ্যাপক ইয়োসেফ ওয়ালি বলেন: ‘‘কিছু কিছু ভাষা হারিয়ে গেছে খুবই দ্রুত - যেমন মুরিস৷ ১৫ বছর আগেও এই ভাষায় কথা বলত স্থানীয় মানুষজন৷
নিউ গিনির রয়েছে হাজার খানেকেরও বেশি ভাষা৷ পাপুয়া নিউগিনিতে ৮০০ র মত আর ইন্দোনেশীয় পাপুয়া অঞ্চলে ২০০৷ তবে অধিকাংশ ভাষায় কথা বলে এক হাজারেরও কম মানুষ৷ প্রায়শই দেখা যায় এই সব ভাষা কোন একটিমাত্র গ্রাম অথবা একগুচ্ছ গ্রামের মাঝেই সীমিত৷
নিউ গিনির প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই বাস করে গ্রামাঞ্চলে৷ বিশেষ করে বিচ্ছিন্ন পার্বত্য অঞ্চলের বহু উপজাতির নিজেদের মধ্যে এবং বাইরের সঙ্গে কোন সংযোগ নেই৷
সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষা হল এঙ্গা৷ পাপুয়া নিউগিনির কেন্দ্রবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় দু'হাজার মানুষ এই ভাষায় কথা বলে৷ তার পরের স্থানে রয়েছে মেলপা আর হুলি৷
সেন্দ্রাওয়াসি বিশ্ববিদ্যালয় মিউজিয়ামের কিউরেটর নিকো বলেছেন: ‘‘এইসব অঞ্চলে যখনই কেউ মারা যায়, ভাষার একটি অংশেরও মৃত্যু হয় তার সঙ্গে৷ কেননা সবচেয়ে বেশি বয়সের মানুষরাই সে ভাষা ব্যবহার করে থাকে৷''
জয়পুরা অঞ্চলের একজন শিক্ষা কর্মকর্তা হাবেল এম সুভায়ে বলেন, শহরগুলোতে এবং বনাঞ্চলেও চল্লিশের কম বয়সিদের জন্য ইন্দোনেশীয় হয়ে উঠেছে প্রধান ভাষা৷ আর স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী ভাষাগুলো উৎসব অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত৷
পাপুয়া নিউগিনিতে প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবে ইংরেজির প্রসার ঘটেছে৷ তবে কিছু উপজাতির মাঝে - বিশেষ করে বিচ্ছিন্ন পার্বত্য অঞ্চলে - ইংরেজি সেভাবে ঢুকতে পারেনি৷ কর্তৃপক্ষকে কখনও কখনও এব্যাপারে দায়ী করা হয় যে তারা এই সনাতন ভাষাগুলো হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কিছুই করছেনা৷ এমনকি এরকম অভিযোগও তাদের শুনতে হয় যে বিশেষ করে ইন্দোনেশীয় পাপুয়ার বাসিন্দাদের সমাজের মূলধারায় ভালভাবে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সরকারি ভাষার প্রতিই পক্ষপাতিত্ব দেখাচ্ছে৷
ইন্দোনেশিয়ার সরকারি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হারি উন্তরো দ্রাজাত বলেন, স্কুলে স্কুলে এইসব ঐতিহ্যবাহী ভাষাগুলো লালন করার যতই ব্যবস্থা নেয়া হোক না কেন, প্রাত্যহিক জীবনে কোন ভাষার ব্যবহার যদি না থাকে তাহলে সেভাষা সংরক্ষণ করা প্রায় অসম্ভব৷
নৃতত্ত্ববিদ ওয়ালি অবশ্য এতটা হতাশ হতে চাননা৷ তিনি মনে করেন, শিল্প ও সংস্কৃতি পাপুয়ান ভাষাগুলোর হারিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে পারে৷ পাপুয়ার মানুষজন গান বাজনা আর উৎসবে মেতে উঠতে ভালবাসে৷ আর সেজন্য নিজেদের পূর্বপুরুষদের ভাষাই তাদের ব্যবহার করতে হবে৷ আর এভাবে যুব সম্প্রদায় গানের অর্থ বুঝতে ভাষার উপর গুরুত্ব দেবে৷ আবিষ্কার করতে চাইবে নিজের ভাষা৷
গবেষকদের কেউ কেউ বিপন্ন ভাষাগুলোর রেকর্ড রাখতে উদ্যোগ নিয়েছেন৷ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দুসনার ভাষা বলতে পারেন এমন তিন সর্বশেষ পাপুয়ানের কথা রেকর্ড করে রাখছে৷ এরা হলেন এমা - বয়স ৮৫, এনস - বয়স ৬০ এবং আনা - বয়স ৬০৷ ইউনেস্কোর বিপন্ন ভাষার তালিকায় স্থান পেয়েছে মোট ৬০০ টি ভাষা৷ গত তিন প্রজন্মে দু'শোরও বেশি ভাষা অদৃশ্য হয়ে গেছে৷ আড়াই হাজার ভাষা রয়েছে হুমকির মুখে৷
প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন