1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একলাখি ছোট্ট গাড়ি ন্যানোর জীবনও অত্যন্ত ছোট

রাজীব চক্রবর্তী আহমেদাবাদ
৩০ নভেম্বর ২০১৭

ন্যানো গাড়ির কারখানা পশ্চিমবঙ্গ থেকে চলে গিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর গুজরাটে৷ তখন শিল্পায়ন থমকে যাওয়ার আশঙ্কায় ঘুম ছুটেছিল বহু বাঙালির৷ কিন্তু ক'‌জন জানেন, এখন মোদীর রাজ্যে কার্যত শেষ নিঃশ্বাস ফেলছে সেই ন্যানো?‌

https://p.dw.com/p/2oWTM
ভারতে ন্যানো গাড়ির কারখানা
ছবি: AP

প্রায় ১১-‌১২ বছর আগে টাটা মোটর্স ‌কোম্পানি বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে হাজির হয়েছিল৷ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং তাঁর সরকার হুগলি জেলার সিঙ্গুরে ১১০০ একর জমি টাটা গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয়৷ তারপর সিঙ্গুরের কয়েকটি গ্রামের কৃষক আন্দোলন ক্রমশ রাজনৈতিক আন্দোলনের আকার নেয়৷ জমি অধিগ্রহণের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা হয়৷ অবশেষে তুমুল অশান্তি ও বাধার মুখে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন টাটা গোষ্ঠীর তৎকালীন কর্ণধার রতন টাটা৷ তৎক্ষনাৎ টাটাদের আমন্ত্রণ জানান ভারতের একেবারে পশ্চিমের রাজ্য গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ রাতারাতি সিঙ্গুর থেকে আহমেদাবাদের সানন্দে উঠে যায় ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানা৷ বড়জোর ৮-‌৯ মাসের মধ্যে গাড়ি তৈরিও শুরু হয়ে যায়৷

‌তারপর কেটে গেছে দশটা বছর৷ এখন গুজরাটের সানন্দ-‌এ ‘‌বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি'‌-র কারখানাটি কার্যত ধুঁকছে৷ রতন টাটা এককালে যাকে ‘‌জনগণের গাড়ি'‌ আখ্যা দিয়েছিলেন, তার ‘‌অকাল মৃত্যু'-‌র প্রহর গুনছে টাটারা৷ কিন্তু কেন এমন হলো?‌ আসলে গত কয়েক মাসে দেশ জুড়ে ন্যানোর বুকিং প্রায় বন্ধ৷ চাহিদা না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিক্রেতারা৷ যার জেরে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, এখন গড়ে দিনে মাত্র দু'টি ন্যানো তৈরি হচ্ছে গুজরাটের কারখানায়!‌

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, ২০০৮ সালে সিঙ্গুর ছাড়ার পর আহমেদাবাদ-‌সংলগ্ন সানন্দ এলাকায় চলে আসে একলাখি গাড়ির কারখানাটি৷ বাংলা ছেড়ে আসায় ‘‌উপহার'‌ হিসেবে টাটা গোষ্ঠীকে কারখানা গড়ার জন্য বিনামূল্যে কলানা, খোডা এবং বল গ্রামের ১১০০ একর জমি দিয়েছিলেন মোদী৷

‌সিঙ্গুর আন্দোলনের সঙ্গেই নাম জুড়ে রয়েছে নন্দীগ্রাম কৃষক আন্দোলনের, যা পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদলের প্রধান এবং অন্যতম কারণ বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মামুদ হোসেন৷ ন্যানো কারখানার বেহাল দশা শুনে তিনি বললেন, ‘‌‘আধুনিক বিশ্বে ‌শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই৷ কিন্তু শিল্পের নামে চোখ বন্ধ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে ন্যানো কারখানা একটি শিক্ষা৷ সব মহলের কাছেই শিক্ষণীয়৷ ভবিষ্যতে শিল্পের জন্য  খুনোখুনি করার আগে গোটা বিশ্বের মানুষ যেন একবার ন্যানোর পরিণতি ভেবে দেখেন৷''

মামুদ হোসেন

জমির বিষয়ে টাটাদের সঙ্গে গুজরাট রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের চুক্তি অনুযায়ী, ১০ বছর পর থেকে সহজ কিস্তিতে (‌মাত্র ০ দশমিক ১৫ শতাংশ সুদে)‌ জমির মূল্য বাবদ ৩৩ হাজার কোটি টাকা মেটাতে শুরু করবে টাটা গোষ্ঠী৷ এ বছর সেই চুক্তির ১০ বছর শেষ হতে চলেছে৷ আগামী বছর, অর্থাৎ ২০১৮ থেকে কিস্তি শুরু হওয়ার কথা৷ অথচ এরই মধ্যে নতুন ন্যানো গাড়ির জন্ম প্রায় বন্ধ হতে চলেছে!‌

আহমেদাবাদ রেল স্টেশন থেকে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দূরে সানন্দ বিধানসভা৷ সেখানে চওড়া সড়কের একপাশে টাটা মোটর্সের ন্যানো তৈরির কারখানা৷ টাটা গোষ্ঠী সিঙ্গুর ছেড়ে আসার সময় (‌২০০৮ সালে)‌ রাতারাতি ‘‌সানন্দ রিসার্চ সেন্টার ফর এগ্রিকালচার'‌-‌কে আনন্দ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত করে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী৷ কারখানা গড়ার সময়েই পশ্চিমবঙ্গের মতো এখানেও জমির মালিকদের অনেকে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ কিন্তু ওই জমি একশ বছর আগের চুক্তি অনুযায়ী সরকারের হাতে ছিল৷ ফলে জমির মালিকানা রাজ্যের৷ তাই কৃষকের আর্জি আদালতে ধোপে টেকেনি৷

তবে যে বিষয়গুলিতে টাটা গোষ্ঠী এবং গুডরাট সরকারের ওপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হলো, ন্যানো কারখানার ৮০ শতাংশ শ্রমিক স্থানীয় এলাকা থেকে নেওয়ার কথা ছিল৷ তবে বাস্তবে তা করেনি কর্তৃপক্ষ৷ এবং কারখানার ডানদিকে রেললাইনের পাশে বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে সেচের সমস্যা তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে জমি অধিগ্রহনের পটভূমি তৈরি করতে জিইয়ে রাখা হয়েছে৷ হাজারো অভিযোগ রয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে৷ এইসব নিয়ে আন্দোলন করছেন স্থানীয় কৃষক নেতা মুকেশ সিং বাঘেলারা৷ গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে বেরিয়ে রাহুল গান্ধী বার বার এ নিয়ে অভিযোগ করছেন৷

নাম প্রকাশ করা হবে না এই শর্তে কারখানার এক আধিকারিক জানালেন, ‘‘‌‌এখন গড়ে দু'টি ন্যানো তৈরি হচ্ছে৷ তা-‌ও বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য৷ ভারতে আর ন্যানো গাড়ির চাহিদা নেই৷ অবশ্য এই কারখানায় টাটা গোষ্ঠীর অন্য দু'টি গানি ‘‌টিয়াগো'‌ এবং ‘‌টিগোর' তৈরি শুরু হয়েছে৷'‌'‌ আহমেদাবাদে গাড়ি দু'টির প্রারম্ভিক মূল্য হলো যথাক্রমে সাড়ে তিনলাখ ও চার লাখ সত্তর হাজার টাকা৷ আরও জানিয়েছেন, ‘‌‘‌পেট্রোলচালিত ন্যানোর উৎপাদন বন্ধ হলেও পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎচালিত ন্যানো গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে কোম্পানি৷''

আহমেদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সহ-‌সভাপতি সত্তরোর্ধ অমর সোলাঙ্কি যা জানালেন তা এই রকম, ভারতে ন্যানো গাড়ির দিন শেষ৷ একলাখি গাড়ি তৈরি বন্ধ করার পথে টাটা মোটর্স কোম্পানি৷ গত আগস্টে গোটা দেশের ৬৩০টি বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ১৮০টি ন্যানো বিক্রি করেছে টাটা মোটর্স৷ গতবছর আগস্টে এই সংখ্যা ছিল ৭১১৷ গতমাসে গোটা দেশে ন্যানো বিক্রির সংখ্যা মাত্র চারটি৷ গতবছর অক্টোবরে যাছিল ৫৭টি৷ বোঝাই যাচ্ছে, ন্যানোর শেষ নিঃশাস সময়ের অপেক্ষা৷ অথচ পণ্য ও পরিষেবা কর চালু হওয়ায় গাড়ির ডিলারদের সুবিধা হওয়ার কথা৷ কিন্তু ন্যানোর ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি৷

‌এই প্রসঙ্গে গুজরাটের শাসক দল অমিত শাহ বলছেন, ‘‌‘‌যাঁরা গেলো গেলো করে রব তুলছেন তাঁদের বোঝা উচিত, ন্যানো বন্ধ হলেও অন্য মডেলের গাড়ি নির্মাণ চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য