এক মুসলিম প্রধান দেশে মানুষ, পাহাড় ও সমুদ্র
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম প্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়া৷ সমৃদ্ধ সংস্কৃতির এই দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে৷ রনি জাকারিয়ার সাদা-কালো ছবিগুলো দেখলে বোঝা যাবে ইন্দোনেশীয়দের জীবন, মননও কতটা প্রকৃতিকেন্দ্রিক৷
পাহাড়ে পূজা
ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে পূর্ব জাভার তিনটি পাহাড়৷ পাহাড় তিনটির নাম ব্রোমো, বাটক ও সেমেরু৷ প্রতিবছর টেনগার জনগোষ্ঠীর মানুষদের ধর্মীয় উৎসব হয় এখানে৷ টেনগাররা প্রধানত হিন্দু ধর্মাবলম্বী৷ প্রতি বছর ব্রোমো পাহাড়ে গিয়ে তাঁরা চাল, ফল-মূল এবং ঘরের অন্য কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু অর্পণ করে দেবীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন৷ টেনগার জনগোষ্ঠীর মানুষদের বিশ্বাস, দেবী খুশি হলে তাঁদের জীবনে সুখ-সাচ্ছন্দ্য আসবে৷
পায়ের নীচে আগ্নেয়গিরি
আগ্নেয়গিরির দেশও ইন্দোনেশিয়া৷ অনেক পাহাড়ই আসলে আবৃত বা সুপ্ত আগ্নেয়গিরি৷ এই পর্বতারোহী যে পাহাড়টির চূড়ায় দাঁড়িয়ে, তার নাম মাউন্ট মেরাপি৷ ২ হাজার ৯৯৮ মিটার উঁচু এই পাহাড়টিও একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি৷ এই পাহাড়ে এ পর্যন্ত ৮০ বার অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে৷ সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাতটি হয়েছিল ২০০৬ সালে৷
ঝর্ণার পবিত্রতা
এক পাহাড় থেকে নামছে জলের ধারা৷ ইন্দোনেশিয়ার টেনগারাস জনগোষ্ঠীর হিন্দুদের কাছে এই ঝর্ণার জল খুব পবিত্র৷ তাই পূজারিরা এসেছেন পবিত্র জল সংগ্রহ করতে৷
সমুদ্রে ‘দক্ষিণের রানি’, গোধুলীলগ্নে সূর্যস্নান
পারাংট্রিটিস সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড়৷ সূর্য ডোবার ঠিক আগে, অর্থাৎ গোধুলিতে সূর্যের মৃদুমন্দ আলোয় তাঁরা সাগরজলে গোসল করছেন৷ কারো গায়েই কিন্তু সবুজ পোশাক নেই, কারণ, স্থানীয়দের বিশ্বাস, পারাংট্রিটিসে ‘নেয়াই রোরো কিডুল’, অর্থাৎ ‘দক্ষিণের রানি’ আছেন৷ রানি বড় ভয়ংকর৷ সবুজ পোশাক পরা কাউকে পেলেই রানি নাকি তাঁকে গভীর জলে টেনে নেন!
সমুদ্রে প্রার্থনা
যোগ্যকর্তা অঞ্চলের পারাংট্রিটিস সমুদ্রসৈকতে পালিত হয় ‘লাবুহান আলিত’ নামের এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান৷ স্থানীয়রা এখানে এসে আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি, চাকরি ও প্রেমে সাফল্য কিংবা হারানো স্বজনকে ফিরে পাওয়ার আশাসহ জাগতিক অনেক প্রয়োজন মেটানোর জন্যই প্রার্থনা করেন৷
শুদ্ধির প্রয়াস
বালি দ্বীপের বাতুবোলোং সৈকতে অনেকেই যান নিজেকে পবিত্র বা শুদ্ধ করে নেয়ার আচার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে৷ ছবির এই তরুণ একটি মুখোশ নিয়ে এসেছেন৷ সপ্তাহ খানেক আগেও মুখোশটি ছিল স্বর্ণ ও মুক্তাখচিত৷ কিন্তু চোর সব সোনা ও মুক্তা চুরি করেছে৷ স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, খারাপ কাজের চিহ্ন বা স্মৃতি না রাখা ভালো৷ তাই তরুণটি এসেছে চোরের হাতে সোনা, মুক্তা খোয়ানো মুখোশটিকে সমুদ্রে বিসর্জন দিতে৷
জেলেদের নৌকা মিছিল ও ‘উপহার’
ইন্দোনেশিয়ার মানুষদের ধর্ম, সংস্কৃতি, মননে পাহাড় ও সাগরের বিশেষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়৷ এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে জেলেদের নৌকা মিছিল৷ প্রতি বছর এমন মিছিল করে এসে সমুদ্রে বিভিন্ন ধরণের খাবার অর্পণ করে ‘সেডাকাহ লাউট’ উৎসব পালন করেন তাঁরা৷ এই খাবার আসলে ঈশ্বরের জন্য বিশেষ উপহার৷ জেলেরা বিশ্বাস করেন এমন উপহার পেলে সৃষ্টিকর্তা খুশি হবেন এবং খুশি হয়ে তিনি আগামীতে আরো ভালো মাছ ধরার মৌসুম উপহার দেবেন৷