1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

'এক দেশ এক নির্বাচন' নিয়ে বিতর্ক ভারতে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

‘এক দেশ এক নির্বাচন' নিয়ে ফের তৎপর কেন্দ্র৷ চলতি মাসে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে আসতে পারে এই সংক্রান্ত বিল৷ বিরোধীরা এই নীতির সমালোচনা করছে৷

https://p.dw.com/p/4VsZq
Indien | Narendra Modi im Parlament
ছবি: AP Photo/picture alliance

১৩০ কোটির দেশে একইসঙ্গে হোক লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন৷ এই লক্ষ্য সামনে রেখে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কয়েক বছর ধরেই ‘এক দেশ এক নির্বাচন’-এর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাইছে৷

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে ফের এই নীতি নিয়ে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে৷ ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে৷ সেই অধিবেশনে একসঙ্গে দুই নির্বাচন আয়োজন সংক্রান্ত বিল পেশ করা হতে পারে৷

কীভাবে এই পরিকল্পনা কার্যকর করা যায় তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্র একটি কমিটি গঠন করেছে৷ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে এই কমিটি বিশেষ অধিবেশনে ‘এক দেশ এক নির্বাচন' নিয়ে রিপোর্ট পেশ করবে৷

সরকারের ভাবনা

'এক দেশ এক নির্বাচন’ বাস্তবায়িত হলে অনেকগুলি সুবিধা হবে বলে সরকারপক্ষের মত৷ সবচেয়ে বড় সওয়াল, নয়া নীতি কার্যকর হলে ভোট পরিচালনার খরচ অনেকটাই কমবে৷

ভোট ঘোষণার পরেই আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর থাকায় নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া যায় না৷ নির্বাচন পরিচালনার জন্য সরকারি আধিকারিকদের বিপুল সংখ্যায় নিয়োগ করতে হয় নির্বাচন কমিশনকে৷ এতে উন্নয়নের কাজে বাধা পড়ে৷

এই ব্যবস্থায় ভোটদানের হার বাড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ভোটপর্ব সুষ্ঠু ও অবাধ করা সম্ভব বলেও দাবি করা হচ্ছে৷

সমালোচকদের ভাবনা

বিরোধীরা একগুচ্ছ যুক্তি হাজির করছে এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে৷ সবচেয়ে বড় সওয়াল করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ঘিরে৷ তাদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার এই কাঠামো ক্রমশ ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ধাঁচে ভোটব্যবস্থা পরিচালনা করতে চাইছে৷

আঞ্চলিক দলগুলির আশঙ্কা, রাজ্যকেন্দ্রিক বিভিন্ন বিষয়কে ধামাচাপা দিয়ে কেন্দ্রীয় ইস্যুতে সারা দেশের নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চায় বিজেপি৷ নির্বাচনে যে বিপুল খরচ হয়, তা জোগাতে সমস্যা হবে ছোট দলগুলির ক্ষেত্রে৷ অর্থাৎ প্রচারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে তারা৷ ‘ইন্ডিয়া' জোটের পক্ষ থেকে কেন্দ্রের উদ্যোগের বিরোধিতা করা হয়েছে৷

অতীতে একত্রে ভোট

ভারতের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে হওয়ার নজির রয়েছে৷ ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত দুই নির্বাচন একই সঙ্গে হতো৷

১৯৫৭ সাল থেকে যতগুলি নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে সাতটির ক্ষেত্রে সরকার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি৷ বিধানসভার ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা একশরও বেশি৷

১৯৭২ সালের সাধারণ নির্বাচনকে এক বছর এগিয়ে এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী৷ তারও আগে ১৯৫৯ সালে কেরলে বাম সরকার ভেঙে দেয়া হয়৷ কোনো ক্ষেত্রেই সরকার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেনি৷

নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন করাতে চায় বিজেপি: সুমন ভট্টাচার্য

রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের স্থায়িত্ব এক না হওয়ায় আলাদা সময় দুই ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ রাজ্য বা কেন্দ্রের সরকার তাদের নির্ধারিত মেয়াদ অর্থাৎ পাঁচ বছরের সময়কাল পূর্ণ করতে না পারলে একইসঙ্গে নির্বাচনের পরম্পরা ধরে রাখা যায় না৷

নতুন করে উদ্যোগ

গত ৮০-র দশকে একসঙ্গে ভোট করানোর প্রস্তাব উঠেছিল৷ নির্বাচন কমিশন এমন প্রস্তাবও দিয়েছিল৷ তবে সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকার এই সুপারিশ গ্রহণ করেনি৷ পরবর্তীকালে আইন কমিশনও একযোগে ভোটগ্রহণের উপর জোর দেয়৷

এরপর দেড় দশক বিষয়টি নিয়ে আর তেমন আলোচনা হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার ২০১৬ সালে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন' নীতি নিয়ে আসার চেষ্টা করে৷ যদিও সেবার বিষয়টা বেশি দূর এগোয়নি৷

কেন্দ্র ২০১৯ সালে আরো একবার সব দলের সহমতের ভিত্তিতে এই পরিকল্পনা কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়৷ কিন্তু কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দল আলোচনায় রাজি হয়নি৷

গত বছরই জাতীয় নির্বাচন কমিশন বলেছে, লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে তারা সব বিধানসভার ভোটগ্রহণ করতে তৈরি রয়েছে৷ তবে এজন্য দরকার আইন পাশ করা৷ শুধু আইন করলেই হবে না, সংবিধানের একাধিক ধারার সংশোধনও দরকার৷

ব্যয়ের যুক্তিই সরকাপক্ষের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার৷ অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম (এডিআর)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সঞ্চালক উজ্জয়িনী হালিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলির উচিত নির্বাচনী প্রচারের খরচ কমানো৷ তার বদলে সস্তায় ভোট সারার যুক্তি অসার৷''

আচরণবিধি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আচরণবিধি কার্যকর হলেও পুরনো প্রকল্প চালিয়ে যাওয়া যায়৷ নতুন প্রকল্প ঘোষণায় বাধা থাকে৷ তবে সেটাও সম্ভব যদি বিশেষ অনুমতি নেয়া হয়৷ অতীতে সেই নজির আছে৷’’

কতটা সম্ভাবনা?

কেন্দ্র চাইলেই এই আইন আনতে পারবে, এমনটা নয়৷ প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র বলেন, ‘‘এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে আইন তৈরি ও সংবিধান সংশোধনের কাজটাও করা কঠিন৷ অর্ধেকের বেশি রাজ্য বিধানসভার সম্মতি লাগবে৷ এর বদলে প্রকৃত সংস্কার দরকার৷ অপরাধে অভিযুক্তদের আইনসভার প্রবেশ রুখতে হবে৷ নির্বাচনী ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে৷''

এই উদ্যোগের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী বিজেপির একমাত্র ভোট ক্যাচার৷ তাই তাকে সামনে রেখে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন করাতে চায় বিজেপি৷ তারা চায়, একই এজেন্ডায় সারা দেশ ভোট দিক৷ কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়৷''

আইন পাশ হলেও লোকসভা বা কোনো বিধানসভা পাঁচ বছরের আগে ভেঙে যেতে পারে৷ তখন কী হবে? শুভাশিস বলেন, ‘‘এর একটাই সমাধান৷ অনাস্থা ভোটের সঙ্গে সঙ্গেই আস্থা ভোটের সংস্থান রাখতে হবে৷ যাতে কেন্দ্র বা রাজ্যে বিকল্প সরকার গঠন করা যায় যেটি পাঁচ বছরের মেয়াদ পূরণ করবে৷’’