1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়, বিজেপির বিপর্যয়

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৩ জুলাই ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গে চারটি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিপুল জয় তৃণমূলের। তিনটি আসন তারা ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপির কাছ থেকে। অন্যান্য রাজ্যেও ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি।

https://p.dw.com/p/4iFnZ
ভারতে একটি কেন্দ্রে নির্বাচনের প্রস্তুতি
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা দেখা গিয়েছে।ছবি: Amit Dave/REUTERS

লোকসভা নির্বাচনের মাস দেড়েকের মধ্যে উপনির্বাচন। এই ভোটে চারটি কেন্দ্রেই বড় ব্যবধানে জিতল রাজ্যের শাসক দল। লোকসভা নির্বাচনে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি অনেকটা এগিয়ে থাকলেও উল্টে গেল সেই ফল।

বিজেপির হাতছাড়া তিন

উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা, নদিয়ার রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্র পদ্ম শিবিরের হাতছাড়া হয়েছে। তিনটি কেন্দ্রেই ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা। শুধু তাই নয়, সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটে এই তিনটি কেন্দ্রে 'লিড' ছিল বিজেপি প্রার্থীদের।

রায়গঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী ৫০ হাজার ৭৭ ভোটে বিজেপির মানস ঘোষকে হারিয়েছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে এখান থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন কৃষ্ণ। পরে যোগ দেন তৃণমূলে। গত লোকসভা নির্বাচনে ঘাসফুলের প্রতীকে লড়ে হেরে যান তিনি। এমনকি এই রায়গঞ্জ বিধানসভাতে ৪৭ হাজার ভোটে বিজেপি প্রার্থীর থেকে পিছিয়ে ছিলেন কৃষ্ণ। প্রায় এক লক্ষ মানুষের সমর্থন বদলে গিয়েছে মাস দেড়েকের মধ্যে।

বাগদা কেন্দ্রে ঠাকুরবাড়ির সদস্য মধুপর্ণা ঠাকুর বিজেপির বিনয় বিশ্বাসকে হারিয়ে দিয়েছেন। তার জয়ের ব্যবধান ৩৩ হাজার ৪৫৫ ভোট। বিধানসভার কনিষ্ঠতম সদস্য হতে চলেছেন ২৫ বছরের তরুণী। তিনি সাবেক তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের কন্যা। বনগাঁ লোকসভার অন্তর্গত এই বিধানসভায় সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর ২০ হাজার ভোটে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে ছিলেন। সেই ব্যবধান মুছে শান্তনুর বোন মধুপর্ণার বিপুল জয় প্রমাণ করে, মতুয়া ভোটারের বড় অংশ বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়েছে।

মতুয়া প্রভাবিত আর এক কেন্দ্র রানাঘাট দক্ষিণে একই ছবি। এখানে তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারী জয়ী হয়েছেন ৩৯ হাজার ৪৮ ভোটে। সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটে তিনি রানাঘাট কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে লড়ে হেরেছেন। সেই ভোটে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের তুলনায় ২৮ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলেন মুকুটমণি। ব্যবধান মুছে বিপুল জয় পেয়েছেন পেশায় চিকিৎসক মুকুটমণি। কৃষ্ণ কল্যাণীর মতো তিনিও দলবদল করেছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে মুকুটমণি এই কেন্দ্র থেকে জেতেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, অধ্যাপক শুভময় মৈত্র বলেন, "দলবদল পশ্চিমবঙ্গে এখন খুব স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। এখন রাজনীতি খুব নীতি ও আদর্শের উপর বিশ্বাস করে হচ্ছে না। মূলত ক্ষমতা দখলের লড়াই। মানুষের খুব একটা ভাবনাচিন্তা নেই নীতি নিয়ে। গোটা দেশের ক্ষেত্রেই এটা সত্যি। অনেক নেতাই দলবদল করছেন।"

এখন রাজনীতি খুব নীতি ও আদর্শের উপর বিশ্বাস করে হচ্ছে না: অধ্যাপক শুভময় মৈত্র

মানিকতলায় চমক

রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের প্রয়াণে কলকাতার মানিকতলা আসনটি শূন্য ছিল দীর্ঘদিন। প্রায় আড়াই বছর এই এলাকার কোনো প্রতিনিধি বিধানসভায় ছিলেন না। মামলার জটে এই কেন্দ্রে নির্বাচন করাতে পারেনি কমিশন।

এবার সাধনের স্ত্রী সুপ্তি পান্ডে ৬২ হাজার ৩১২ ভোটে বিজেপির কল্যাণ চৌবেকে পরাজিত করেছেন। স্বামীর তুলনায় তার জয়ের ব্যবধান তিনগুণ বেশি। অথচ সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে উত্তর কলকাতা আসনের অধীন মানিকতলায় মাত্র হাজার তিনেকের বেশি ভোটে এগিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

পরাজিত কল্যাণ ভোটগ্রহণের দিনের মতো গণনার সকালেও নির্বাচন বয়কটের কথা বলেন। ফলাফল স্পষ্ট হতে তার দাবি, "একটি বুথে ৬৬৯টি ভোট পড়েছে। এর মধ্যে বিজেপি ও সিপিএম পেয়েছে তিনটি করে ভোট। বাকি ৬৬৩টি ভোট তৃণমূলের। এভাবেই একের পর এক বুথ দখল করে শাসক দল ছাপ্পা দিয়েছে। এটা জনগণের রায় নয়।"

এদিন ভোটগণনা কেন্দ্র থেকে বেরোনোর সময় বাগদা ও মানিকতলার বিজেপি প্রার্থীদের তৃণমূল কর্মীদের স্লোগানের মুখে পড়তে হয়। বাগদায় বিজেপির বিনয় বিশ্বাসকে পুলিশের বেষ্টনীতে নিরাপত্তা দিয়ে ভোটগণনা কেন্দ্র থেকে বার করতে হয়। সেই সময় তাকে ঘিরে চলতে থাকে 'জয় বাংলা' স্লোগান।

বাগদার জয়ী তৃণমূল প্রার্থী মধুপর্ণা বলেন, "তৃণমূল কাউকে কোথাও বাধা দেয়নি। বিজেপি নিজেদের মধ্যে লড়াই করেছে আর তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছে। ওদের এই কৌশল কাজে আসেনি, আসবে না।" মুকুটমণি বলেন, "মতুয়াদের ভুল বুঝিয়েছিল বিজেপি। মানুষ সেই বিভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে। তাই ওদের প্রত্যাখ্যান করেছে। কমিশন বা কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোট দেয় না, মানুষ দেয়।"

চারটি কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু এর পাশাপাশি সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা কবুল করছে বিজেপি। দলের সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "মানুষের সমর্থন আমাদের দিকে আছে। কিন্তু ভোটের দিন যে সাংগঠনিক ক্ষমতার দরকার হয়, সেটা আমরা এখনো গড়ে তুলতে পারিনি। বোমা, গুলি, হামলার মুখে দাঁড়িয়ে আমাদের লড়তে হয়েছে।"

চারটি কেন্দ্রের কোনোটিতেই বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীরা সেভাবে লড়াইয়ে ছিলেন না। সব কেন্দ্রেই লড়াই হয়েছে দ্বিমুখী।

বিজেপির ধাক্কা

পশ্চিমবঙ্গ সহ মোট সাতটি রাজ্যের ১৩টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বিজেপি অধিকাংশ কেন্দ্রে হেরেছে বা পিছিয়ে রয়েছে। বাকি সব আসনে ভালো ফল ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের।

পাঞ্জাবের জলন্ধরে আম আদমি পার্টি, হিমাচল প্রদেশের ডেরা ও নালাগড়ে, উত্তরাখণ্ডের মঙ্গলৌর ও বদ্রীনাথে কংগ্রেস, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে জয়ী হয়েছে। বিজেপি এগিয়ে রয়েছে হিমাচল প্রদেশের হামিরপুর ও মধ্যপ্রদেশের চিঞ্চওয়ারা কেন্দ্রে।

পর্যবেক্ষকদের মতে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা দেখা গিয়েছে। ক্ষমতায় এলেও অনেক আসন কমেছে মোদী ব্রিগেডের। সেই ধারাতেই বিধানসভার উপনির্বাচনের ফল।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, আগামী ২১ জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের যে সমাবেশ রয়েছে, সেখানে শহিদদের উদ্দেশে এই জয় উৎসর্গ করা হবে।

পশ্চিমবঙ্গের এই ফল দেখে এখনই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল আগাম বলতে চাইছেন না বিশ্লেষকরা। শুভময় বলেন,

"রাজ্যে যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা যদি চেষ্টা করে, তাহলে উপনির্বাচনে তাদের জেতার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। তবে বিধানসভা ভোট অনেক দেরি আছে। এখন তা নিয়ে কিছু বলার সময় আসেনি।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য