জলদস্যু আতঙ্কে বন্ধ ইলিশ ধরা
২৫ জুন ২০১৩বাংলাদেশে পয়লা আষাঢ় থেকে শুরু হয়েছে ইলিশের মৌসুম৷ তাই জেলেরা সেভাবেই প্রস্তুত ছিলেন৷ এই যেমন, ২রা আষাঢ় ভোলার সিদ্দিক মাঝি জেলেদের বঙ্গোপসাগরে পাঠান ইলিশ ধরতে৷ কিন্তু ইলিশ ধরার সাধ তাঁরা পূরণ পারেন নি৷ বরং তাঁরা সাগরে গিয়ে পড়েন জলদস্যুদের কবলে৷ জলদস্যু কালাম বাহিনী নৌকা এবং জালসহ ১৯ জন জেলেকে অপহরণ করে৷ পরে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তাঁদের উদ্ধার করা হয় বলে জানান সিদ্দিক মাঝি৷ কিন্তু তিনি তাঁর মোট চারটি নৌকা এবং জাল ফেরত পাননি৷ ফলে তিনি আরো কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন৷ তাই এখন জেলেরা আর সাগরে ইলিশ ধরতে যেতে সাহস পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি৷ বলা বাহুল্য, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে এবার ইলিশ মাছের আকাল দেখা দিতে পারে৷
একই অবস্থা চলছে বরগুণাসহ উপকূলীয় এলাকায়৷ বরগুণার সাংবাদিক জয়দেব রায় ডয়চে ভেলেকে জানান, জলদস্যুরা জেলেদের কাছে আগাম টাকা চেয়ে বার্তা পাঠাচ্ছে৷ টাকা না পেলে তারা জেলেদের অপহরণের হুমকি দিচ্ছে৷ তাই বরগুণার ৫০ হাজার জেলে এবার হাত-পা ঝেড়ে বসে আছেন৷ তাঁদের কথা, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এবার তাঁরা আর ইলিশ ধরতে যাবেন না৷
ভোলার সাংবাদিক মেজবাহউদ্দিন শিপু ডয়চে ভেলেকে জানান, উপকূলীয় এলাকায় জলদস্যুদের অন্তত ১০টি সশস্ত্র দল আছে৷ তাদের আছে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র এবং দ্রুত গতির ইঞ্জিন বোট৷ ফলে নিরীহ জেলেরা তাদের কাছে পুরোপুরি জিম্মি৷ এই ভরা মৌসুমে প্রায় পাঁচ লাখ জেলে তাদের হুমকির মুখে রয়েছে৷ তাঁরা যদি ইলিশ ধরতে না পারেন তাহলে পরিবার নিয়ে তাঁদের উপোস যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না৷ যাঁরা দাদন নিয়ে জাল ও নৌকা কিনেছেন তাঁরা পড়েছেন ঋণের ফাঁদে৷ লোকমান হোসেনসহ কয়েকজন জেলে ডয়চে ভেলেকে জানান যে, তাঁরা এখন কিভাবে ঋণ শোধ করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা৷ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডেরও তেমন সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না, জানান তাঁরা৷ এছাড়া, এবার জলদস্যুরা টোকেন প্রথা চালু করেছে৷ তাদের যারা আগাম চাঁদা দেয় তাদের বিশেষ ধরণের টোকেন দেয়া হয়৷ সাগরে ইলিশ ধরার সময় সেই টোকেন যাদের কাছে থাকে, তারা নিরপদ৷ কিন্তু না থাকলে জলদস্যুরা নৌকা এবং জালসহ জেলেদের ধরে নিয়ে মুক্তিপন আদায় করে৷ আর মুক্তিপন না পেলে তারা জেলেদের হত্যা করতেও পিছপা হয় না৷
ভোলা জেলার এসপি মো. মনিরুজ্জামান ডয়চে ভেলের কাছে জলদস্যুদের এই তত্পরতার কথা স্বীকার করেন৷ তিনি জানান, জলদস্যুরা মূলত নোয়াখালির হাতিয়া এবং সুন্দরবন কেন্দ্রিক৷ তারা বিরান চর এবং গভীর বনে আস্তানা বানিয়ে পুরো উপকূলীয় এলাকাতেই দস্যুতা করে৷ জেলেদের অপরহরণ করে নিয়ে গিয়ে চরাঞ্চলে তাদের আস্তানায় রাখে৷ তিনি জানান, এই জলদস্যুদের আধুনিক নৌযান এবং আগ্নেয়াস্ত্র আছে৷ শুধু পুলিশের একার পক্ষে তাদের দমন করা সম্ভব নয়৷ তাই ব়্যাবের মহাপরিচালককে প্রধান করে পুলিশ, ব়্যাব এবং কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে৷ এই টাস্কফোর্স জলদস্যু দমনে যৌথ অভিযান চালাবে৷ সেই অভিযান নিয়ে খুলনায় ইতিমধ্যেই প্রাথমিক বৈঠক করেছেন তাঁরা৷ শীঘ্রই অভিযানটি শুরু হবে আর চলবে পুরো বর্ষা মৌসুম ধরে৷