1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উত্তর প্রদেশে 'বিদেশি' বাছাই শুরু হতেই বিতর্ক 

২৪ জানুয়ারি ২০২০

উত্তর প্রদেশের সব জেলায় শুরু হয়েছে 'বিদেশি' চিহ্নিতকরণ অভিযান৷ যোগী সরকারের সেই অভিযান নিয়ে শুরু হয়েছে জোরদার বিতর্ক৷ বিরোধীদের অভিযোগ, পুরো প্রক্রিয়াটাই বেআইনি৷

https://p.dw.com/p/3WlFB
ছবি: Imago/Hindustan Times/A. Yadav

উত্তর প্রদেশ জুড়ে 'বিদেশি' চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে৷ ২১ জেলা থেকে আসা রিপোর্ট হল, ৪০ হাজারের বেশি 'বিদেশি' চিহ্নিতকরণ করা হয়ে গিয়েছে৷ রাজ্য়ের মন্ত্রী শ্রীকান্ত শর্মা জানিয়েছেন, পুরো কাজটাই হয়েছে সিএএ অনুযায়ী৷ এই আইনের বিজ্ঞপ্তি জারির পরেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের লোকেদের চিহ্নিত করা হচ্ছে৷ কিন্তু আইনজ্ঞরা, বিরোধী নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন,সিএএ নিয়ে রুলই তো তৈরি করেনি সরকার৷ রুল তৈরি হলে তো বোঝা যাবে কীভাবে চিহ্নিতকরণ করবে সরকার৷ তা হলে এখন বিদেশি চিহ্নিতকরণ হচ্ছে কী করে? পুরোটাই তা হলে বেআইনি?

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সামনে সওয়াল করতে গিয়ে এই  যুক্তিটাই দিয়েছিলেন আইনজীবী অভিষেক মণু সিংভি৷ তিনি বলেছিলেন, উত্তর প্রদেশে সিএএ নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ ৪০ হাজারেরও বেশি লোককে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারও নামের পাশে টিক চিহ্ন দেওয়া হচ্ছে। কারও নামের পাশে ক্রস বা কাটা চিহ্ন দেওয়া হচ্ছে৷ অভিষেক যখন এই সওয়াল করছেন, তখন আদালতে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্য়ায়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''সিংভি বলেছেন, টিক মারা মানে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া যায়৷ ক্রস মানে সন্দেহজনক৷ কিন্তু সিএএ রূপায়ণের ক্ষেত্রে কোনও রুল তৈরি করা হয়নি৷ তা হলে এই কাজ কী ভাবে করতে পারে রাজ্য সরকার? যাদের নামে ক্রস বা কাটা দেওয়া হয়েছে, তাঁদের ভোটাধিকার এবং অস্তিত্ব তো সঙ্কটের মধ্য়ে পড়বে৷''

সিপিএম নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিমও মনে করেন, যোগী আদিত্যনাথ সরকার যে কাজ করছে তা বেআইনি৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলছেন, ''এটাকে বলে রেসিয়াল প্রোফাইলিং৷ বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার চায়, আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বাতিল করে রেসিয়াল ডেমোক্রেসি চালু করা৷ তার মানে, গণতন্ত্র থাকবে, কিন্তু একটি নির্দিষ্ট জাতি, ভাষা, ধর্মের ভিত্তিতে৷ যার কিছুটা উদাহরণ আমরা মিয়ানমারে দেখছি৷ সু চি এসেছেন, কিন্তু রোহিঙ্গাদের ওপর ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷'' সেলিমের দাবি, ''উত্তর প্রদেশেও যোগী তাই করছেন৷ ধর্ম, ভাষা, খাদ্যকে ব্যবহার করে প্রোফাইলিং করা হচ্ছে৷ সরকার পক্ষপাতদুষ্ট৷ তাই রুল ছা়ড়াই লোককে চিহ্নিত করা হচ্ছে, কাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, কাকে ডিটেনশন শিবিরে পাঠানো হবে, কাকে ফেরত পাঠানো হবে৷ এটা আমাদের গণতন্ত্রের ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত৷''

তৃণমূল সাংসদ এবং আইনজীবী সুখেন্দু শেখর রায়ও মনে করেন, উত্তর প্রদেশ সরকার এ ক্ষেত্রে আইনের পথে হাঁটছে না৷ ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন,''আইন তৈরি হওয়ার পর সরকার তার রুল বা নিয়ম তৈরি করে৷ কীভাবে সরকার এই আইনরূপায়ণ করবে, তা রুলে বলা হয়৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে এখনও রুল তৈরি হয়নি৷ গেজেটে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে মাত্র৷ তাই কোনও সরকার এই আইনকে হাতিয়ার করে বিদেশি চিহ্নিত করতে পারে না৷ করলে সেটা বেআইনি। যোগী সরকার তাই সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিদেশি চিহ্নিতকরণের কাজ করছে৷''

বিতর্ক সত্ত্বেও উত্তর প্রদেশ সরকার 'বিদেশি' চিহ্নিতকরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷ সিএএ মামলা সুপ্রিম কোর্টে উঠবে মাস খানেক পরে৷ তখন আবার এই আপত্তির কথা জানাতে পারেন সিংভিরা৷ ততদিনে অবশ্য উত্তর প্রদেশে 'বিদেশি' চিহ্নিতকরণের কাজ অনেকটাই এগিয়ে যাবে৷

জিএইচ/কেএম