1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিউত্তর কোরিয়া

উত্তর কোরিয়া ও যুব নারী ফুটবল যেন এক অসাধারণ জুটি

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তৃতীয়বারের মতো অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবল বিশ্বকাপ জিতলো উত্তর কোরিয়ার নারী দল৷ কীভাবে এই খেলায় উৎকর্ষে পৌঁছাতে পারছে বিচ্ছিন্ন এই দেশ?

https://p.dw.com/p/4l3lx
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জয়ী উত্তর কোরিয়ার নারী ফুটবল দল
উত্তর কোরিয়া এখন তিনটি অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জিতেছে, এটাই প্রমাণ যে যুব ফুটবলের উন্নয়নে তাদের সরকারের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করছে ছবি: Julian Medina/Sports Press Photo/IMAGO/

জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এবার জুড়লো উত্তর কোরিয়ার নাম৷ তিনবার অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল বিশ্বকাপ জিতলো তারা৷ ২০২৪ সালে উত্তর কোরিয়ার নারীরা অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া চ্যাম্পিয়নশিপও জিতেছে৷

অক্টোবর মাসে এই দেশেরই অনূর্ধ্ব-১৭ টিম তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জিততে যাবে৷

জাতিসংঘের মতে, ‘‘বর্তমান বিশ্বে উত্তর কোরিয়ার মতো আর কোনো দেশ নেই৷'' তবুও তারা কীভাবে যুব ফুটবলে এমন ভেলকি দেখাচ্ছে?

এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলা ও নীতি বিষয়ক অধ্যাপক ড. জুং ভু লি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাদের সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব ও পরিচিতি বোঝানোর হাতেগোনা কয়েকটি পন্থার একটি আন্তর্জাতিক খেলার ময়দান৷ ফলে তাদের প্রেক্ষিত থেকে, এই ধরনের বড় সাফল্য আসলে আন্তর্জাতিক দর্শকের সামনে জাতীয় পতাকা ওড়াতে পারার একটা গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ৷ একই সাথে, নিজের দেশের ভেতর উত্তর কোরিয়া তাদের নেতৃত্বকে মহিমান্বিত করার জন্য খেলাধুলাকে প্রোপাগান্ডার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে৷''

স্পষ্ট ও সুচিন্তিত কৌশল

উত্তর কোরিয়ায় ফুটবল রীতিমত জনপ্রিয়, কিন্তু তারা জানে যে সিনিয়র ফুটবলের শীর্ষ স্থানে পৌঁছাবার তুলনায় যুব লেভেল ফুটবলের শীর্ষে পৌঁছানোর যাত্রা কিছুটা সহজ৷ ফলে, তাদের নজর ঘোরে যুব নারী ফুটবলের দিকে, যেখানে এই যাত্রা আরো সহজ৷

কিন্তু এই কারণেই যুব নারী দলের পারফর্মান্স থেকে লাভবান হয়নি দেশের সিনিয়র দল, কারণ এই নীতির লক্ষ্য তা নয়৷ লক্ষ্য, শুধুই জয়৷

ড. জুং ভু লি বলেন, ‘‘তাছাড়া প্রতিষ্ঠিত ও উঠতি ক্লাবগুলির মাঝের ফারাকও অনেক, কারণ, বেশ কিছু ইউরোপিয়ান দেশে পেশাদার লিগ থাকে, আর তারা নানা মহল থেকে সাহায্য পেয়ে থাকেন৷ যুব ফুটবলের দুনিয়ায় আমার মতে, ইউরোপিয়ান স্পোর্টস সংস্থাগুলি আসলে আনন্দ পাবার পেছনে বেশি জোর দেয়৷ অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ায় ১৩-১৪ বছর বয়সি হলেও, তারা খুব নিয়ম মেনে, অনুশাসনের সাথে পেশাদার ট্রেনিং করে, যাতে কম বয়সেই বেশি সফল হতে পারে৷''

সেকারণেই হয়তো এই বছর গ্রীষ্মে কলোম্বিয়াতে উত্তর কোরিয়ার অনূর্ধ্ব-২০ নারীরা আর্জেন্টিনাকে ৬-২ ও কোস্টারিকাকে ৯-০ গোলে হারিয়ে দেয়৷ তারপর যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয় করে৷

পিয়ংইয়ং আন্তর্জাতিক ফুটবল স্কুলে অল্প বয়সেই মেয়েদের বাছাই করা হয়, তাদের কড়া প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ সেই স্কুলের সাহায্যেই উত্তর কোরিয়ার জয়যাত্রা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে৷

উন্নত জীবনের আশায়...

এই জয়ে উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট ব্যবস্থাও লাভবান হচ্ছে৷

ড. জুং ভু লির মতে, ‘‘উত্তর কোরিয়া কিন্তু এখনও খুব কড়া একটি সোশালিস্ট ও কমিউনিস্ট ব্যবস্থা মেনে চলে৷ বিশেষ করে কিম জং উনের অধীনে, তারা সবসময় ক্যাপিটালিস্ট ও কমিউনিস্ট ব্যবস্থাকে তুলনা করে চলে, যেখানে কমিউনিস্ট ব্যবস্থাকে দেখানো হয় উন্নততর হিসাবে৷ তাছাড়া, যখন আমি উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমে উত্তর কোরিয়া দলের খেলার খবর দেখি, তারা বারবার এটা বলে যে এমনটা হয়েছে কমিউনিস্ট ব্যস্থার কারণে, কারণ শারীরিকভাবে পরিশ্রান্ত হলেও তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে৷''

তিনি আরো যোগ করে বলেন, ‘‘তারা সরাসরি এই চিন্তাধারাকে ক্যাপিটালিস্ট দেশের সাথে তুলনা করে৷ ক্যাপিটালিজমের দুনিয়ায় অ্যাথলিটরা শারীরিকভাবে আহত হলে ও ক্লান্ত হলে পারফর্ম করার কোনো সুযোগ থাকে না৷ কোচের সাথে মিলে ঠিক করতে হয় নিজেকে৷ কিন্তু সোশালিস্ট ব্যবস্থায় কোনো কোচ বা মেডিকেল স্টাফের কথার তুলনায় তাদের চাওয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ তাই উত্তর কোরিয়া নিজেদের ব্যবস্থাকে উন্নততর বলে দাবি করে৷''

এই চিন্তাধারা দলের সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করলেও জয়ের পথে দৃঢ় থাকার জন্য আরেকটি বিষয় কাজ করে: বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তি৷

এবিষয়ে বুঝিয়ে বলেন ড. জুং ভু লি৷ তিনি বলেন, ‘‘যদিও উত্তর কোরিয়াকে আমরা বেশ অনুন্নত ও রীতিমত কৃষিপ্রধান দেশ বলেই চিনি, যেখানে মানুষ অনেক কষ্টে দিন কাটায়, রাজধানী পিয়ংইয়ং এর চিত্র কিন্তু আলাদা ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ৷''

ভালো খেলার পুরস্কার হিসাবে অনেক সময় খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় ‘রেসিডেন্স সার্টিফিকেট' যা থাকলে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে ঢুকতে পারবেন তারা৷ একই সাথে, খেলোয়াড়দের অ্যাপার্টমেন্টে বাসাও দেওয়া হয়৷

এমন পুরস্কার উত্তর কোরিয়ার বাস্তবতার প্রেক্ষিতে ফেলনা নয়৷ দেশটির প্রান্তিক অঞ্চলে জীবন যেমন কঠিন, তেমনই খাবারের অভাব ও অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরিষেবাও রয়েছে৷ ফলে বড় শহরে জীবনের আকর্ষণ অনেকটাই৷ ড. লি বলেন, ‘‘জীবন বদলানোর এটা একটা উপায়৷ অনেকটা লটারি জেতার মতো৷''

প্রতিভাবান প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কেমন?

উত্তর কোরিয়ার ১৭ বছর বয়সি খেলোয়াড় চোয় ইল-সনসেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাব জেতার পর প্রশ্ন ওঠে, কোন ক্লাবে খেলতে দেখা যাবে তাকে? কিন্তু অনেকেই ভুলে যান কোন বাস্তবতা থেকে খেলার মাঠে নামেন ইল-সন৷

বিদেশের মাটিতে তার খেলার সম্ভাবনা বিষযে ড. লি বলেন, ‘‘আমার মতে তা একেবারে অসম্ভব না হলেও খুব একটা সহজও নয়৷ প্রথমত, উত্তর কোরিয়ার ওপর নানা ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ তাছাড়া, যখনই উত্তর কোরিয়ার কোনো খেলোয়াড় ইউরোপের কোনো লিগে খেলেছে, বাস্কেটবলে কিছু উদাহরণ আছে যখন তার প্রাপ্য টাকা খেলোয়াড়ের নিজস্ব অ্যাকাউন্টের বা এজেন্টের বদলে সরাসরি সরকারের অ্যাকাউন্টে যায়, ফলে সেই জটিলতাও রয়েছে৷''

জনাথন হারডিং/এসএস