উইম্বলডন মানে শুধু টেনিস নয়
২৩ জুন ২০১৩ব্রিটিশ আইনেই বলে: কোনো কিছু বহুদিন ধরে করলে সেটা করার অধিকার জন্মে যায় – যেমন অন্য কারো মাঠ কি খেতের মধ্যে দিয়ে যাওয়া-আসা করার অধিকার৷ অন্যদিকে আবার দায়িত্বও জন্মে যেতে পারে: যা চিরকাল একভাবে করা হচ্ছে, তা অনন্তকাল ধরে ঠিক সেভাবেই করা চাই৷ ব্রিটিশ এটিকেটের একটা বৃহৎ অংশ এই ধরনের নানা ‘করা চাইই চাই', ‘করা চলে' কিংবা ‘করা চলে না' দিয়ে ভরা৷ তার সেরা দৃষ্টান্ত হলো উইম্বলডনে যাকে বলা হয় ‘দ্য কিউ' বা টিকিটের লাইন৷
অ্যাসকটের ঘোড়দৌড়ে পুরুষ বা মহিলাদের ঠিকমতো সাজপোশাক বা টুপি না পরার জন্য ফাইন দিতে হয়৷ সেটাও যেমন ট্র্যাডিশন, উইম্বলডনে বিশ্বের প্রাচীনতম টেনিস টুর্নামেন্টে দিনের টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো, কিংবা ক্রিম দিয়ে স্ট্রবেরি খাওয়া, কিংবা বৃষ্টির দরুণ ম্যাচ আবার শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করাটাও ট্র্যাডিশন৷ কে যেন বলছিলেন, উইম্বলডন এতটাই ট্র্যাডিশন ভিত্তিক যে, একবার বৃষ্টি না হলে ওরা হয়ত ওপর থেকে হোসপাইপ দিয়ে বৃষ্টির ব্যবস্থা করবে৷
কিউ কাঁহা
কথা হচ্ছিল ‘দ্য কিউ' নিয়ে৷ আধুনিকতা আর ইন্টারনেট বুকিং-এর মুখে ছাই দিয়ে উইম্বলডনে এখনও লাইনে দাঁড়িয়ে দিনের খেলাগুলির জন্য প্রিমিয়াম টিকিট কিনতে পাওয়া যায়৷ সেই কিউ-তে ২৪ ঘণ্টা কাটানোটাও আশ্চর্য নয়৷ মনে রাখতে হবে, লাইন ভাঙা, অন্যের জন্য জায়গা রাখা কিংবা লাইনে নিজের জিনিসপত্র দিয়ে জায়গা রেখে অন্যত্র ঘুরে আসা, এবং বিশেষ করে তারস্বরে গান শোনা একেবারেই নিষিদ্ধ৷ অকুস্থলে কিছু সাইনবোর্ড, নয়ত বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এ সব জানতে পারা যাবে৷
লাইনে যোগ দেওয়ার সময়েই হাতে একটি কার্ড পাবেন৷ তা-তে সময়-তারিখ লেখা থাকবে৷ পরে সেটা টিকিট কাউন্টারে পৌঁছে জমা দিতে হবে৷ উইম্বলডন টেনিস প্রতিযোগিতা চলে দু'সপ্তাহ ধরে৷ খেলার প্রতিদিন সব ক'টি কোর্ট মিলিয়ে দর্শকসংখ্যা হয় ৩৮ হাজারের কিছু বেশি৷ তার মধ্যে বেশ কয়েক হাজার টিকিট বিক্রি হয় ‘দ্য কিউ' থেকে৷ উইম্বলডনের ভেটারান দর্শকরা বলেন, তারা নাকি লাইনে দাঁড়ানোটা প্রায় খেলা দেখার মতোই উপভোগ করেন৷
ব্রিটিশদের এই কিউ-প্রিয়তা নাকি এসেছে বিশ্বযুদ্ধের আমলে রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়ানোর অভ্যেস থেকে! তা-তে আশ্চর্যটা কি? এভাবেই তো ইতিহাস থেকে ঐতিহ্য সৃষ্টি হয়৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স)