1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঈদযাত্রা : ভাড়া বেশি, ভোগান্তি কম

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ এপ্রিল ২০২৩

এবারের ঈদে বাড়ি ফেরা অনেকটাই স্বস্তির হয়েছে। বাসে ভাড়া কিছুটা বেশি নেয়া হলেও ভোগান্তি না থাকায় যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেননি। লঞ্চে যাত্রী কম। তবে ট্রেনে টিকিট না পেয়ে অনেকেই ছাদে উঠতে বাধ্য হয়েছেন।

https://p.dw.com/p/4QPmo
Bangladesch  Islam l Gläube feiern Eid al Fitr
প্রিয়জনদের সাথে ঈদ উদযাপন করতে এভাবেই রাজধানী ছাড়ছেন অনেকে৷ ছবিটি ঢাকার সদরঘাট থেকে তোলা৷ ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

বিশ্লেষকরা বলছেন, তিনটি কারণে এবার ঈদযাত্রা তুলনামূলকভাবে অনেটাই স্বস্তিদায়ক হয়েছে। পাঁচদিনের লম্বা ছুটি হওয়ায় যাত্রী ভাগ হয়ে গিয়েছে। ফলে যানবাহনের ওপর চাপ কমেছে। পদ্মা সেতুর কারণে দূরত্ব কমে গেছে এবং রুট বেড়েছে। পদ্মা সেতু এবং মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ দেয়ায় অনেকেই মোটরসাইকেলে বাড়ি গিয়েছেন।

ঈদে ঢাকা থেকে সড়ক পথে ঝিনাইদহে গিয়েছেন মামুন সোহাগ। তিনি জানান, নন-এসি বাসে স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া ৬৫০ টাকা, কিন্তু ঈদের সময়ে নিয়েছে ৭৫০ টাকা। সোহাগ বলেন, "তবে বাড়তি ভাড়া ছাড়া আর কোনো ভোগান্তি ছিল না। পথে যানজট ছিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির জন্য অপেক্ষা ছিল না। এই রুটের কিছু বাস আবার সায়েদাবাদ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করায় সড়কেও চাপ ছিল কম। আগে এরকম স্বস্তির ঈদযাত্রার অভিজ্ঞতা আমার নেই৷’’

হঠাৎ করেই বিআরটিসির বাাসের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে: মোজাম্মেল হক চৌধুরী

বেসরকারি গণপরিবহণে এবার ঈদে দূরত্ব বুঝে মালিকরা ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সরকারি বিআরটিসি বাস ভাড়া বাড়িয়েছে বেশি।  ঢাকা থেকে বাসে বরিশাল যেতে সাইদুল ইসলামকে বাড়তি ২০০ টাকা ভাড়া গুণতে হয়েছে। তিনি জানান,  "স্বাভাবিক সময় ভাড়া ৬০০ টাকা হলেও ঈদে নেয়া হয়েছে ৮০০ টাকা। পথে কোনো ভোগান্তি বা তেমন যানজট ছিল না। তবে ঢাকার বাসা থেকে বাসষ্ট্যান্ডে যেতে দেড়-দুই ঘণ্টা লেগেছে।”

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীও অভিযোগ করেন, "ঈদে হঠাৎ করেই বিআরটিসির বাাসের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারি পরিবহণ এটা কীভাবে করলো? বেসরকারি গণপরিবহণেও ঈদে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে সেটা আগের মতো গলাকাটা নয়।”

এদিকে দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মা সেতুর কারণে সাধারণভাবে লঞ্চযাত্রী কমে গেলেও যেখানে সড়ক যোগাযোগ তেমন ভালো না, সেই রুটে যাত্রী আছে। যেমন ঢাকা-ভোলা রুটে যাত্রী আগের মতোই আছে বলে জানান সোহাগ রাসিফ। তিনি লঞ্চে ঈদ করতে ভোলা তার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। তিনি বলেন, "আগে ঈদের সময় লঞ্চে তিল ধারণের ঠাঁই থাকতো না। কিন্তু এবার সেরকম নয়, স্বাভাবিক সময়ের মতোই যাত্রী আছে। ভাড়া বাড়েনি।”

তিনি দাবি করেন, ঢাকা-ভোলা ডেকে ভাড়া ৪৫০ টাকা আর সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার টাকা। ঈদেও সেই ভাড়াই নেয়া হয়েছে।

আর আমিন ইকবাল মোটরসাইকেলে করে বাড়ি গিয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ। তিনি বলেন, "সেহরি খেয়ে রওয়ানা হয়েছি সাড়ে তিন ঘণ্টায় বাড়ি গিয়েছি। বাসে গেলে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা লাগতো।”

তিনি জানান, " যাওয়ার সময় গাবতলি বাস স্ট্যান্ডে কিছু যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখেছি। আর পুরো পথে আমি কোনো যানজট দেখিনি। কোনো ভোগান্তিতেও পড়িনি।”

তবে শুক্রবার সদরঘাটে ভিড় বেড়েছে এবং গাজীপুর এলাকায় মহাসড়কেও যানবাহনের চাপ বেড়েছে।  এর কারণ হিসেবে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সাধারণত ঈদের আগের দিন প্রায় ৪০ লাখ পোশাক শ্রমিকের মধ্যে ২০ লাখ ঢাকা ছাড়েন। বাকিরা আগে চলে যান। ফলে ঈদের আগের দিন লঞ্চ এবং বাসে চাপ একটু বেশি পড়ে। তবে এবার অধিকাংশ শ্রমিক সড়ক পথে সবাই মিলে আলাদা বাস ভাড়া করে বাড়ি রওয়ানা হয়েছেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, "ট্রেনের টিকিট সীমিত। তাই অনেকেই টিকিট পাননি। ফলে শেষ পর্যন্ত ট্রেনে ছাদযাত্রী তেমন থামানো যায়নি।”

যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৮০ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। শুক্রবার দিনশেষে এক কোটি ২০ লাখ মানুষের ঢাকা ছাড়ার কথা। শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম (এসসিআরএফ)-এর এক জরিপ মতে, এর মধ্যে মধ্যে সড়কপথে ৬০ শতাংশ,  ২০ শতাংশ নৌ ও   ২০ শতাংশ রেলপথে ঢাকা ছাড়েন। সড়ক পথে ২৫-৩০ লাখ মানুষ বাড়ি যাচ্ছেন মোটরসাইকেলে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, এই ঈদে ৭০ লাখ পোশাক কর্মী, ১০ লাখ পরিবহণ শ্রমিক, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাত লাখ, সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মরত ১২ লাখ আরো ১২ লাখ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরতরা ঢাকা ছাড়েন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘‘আগের চেয়ে এবার ঈদযাত্রার পার্থক্য হলো এবার সড়ক পথের যাত্রীদের ৫০ ভাগই পদ্মা সেতু দিয়ে গিয়েছেন। আর বৃষ্টি না থাকায় যেসব সড়ক ভাঙাচোরা তা তেমন ভোগান্তি সৃষ্টি করেনি। প্রচুর মানুষ এবার মোটরসাইকেলে বাড়ি যাওয়ায় অন্যান্য যানবাহনের ওপর চাপ কমেছে। তবে সবার ওপর পাঁচ দিনের লম্বা ছুটির কারণে যাত্রী ভাগ হয়ে গেছে। একসঙ্গে সবাই বাড়ি ছোটেননি। ফলে এবারের ঈদযাত্রা অনেকটাই স্বস্তিদায়ক হয়েছে।”

তবে তিনি মনে করেন, "ঈদের পর ঢাকায় ফেরার পথে ভোগান্তি হতে পারে। কারণ, তখন সবাই একযোগে রওয়ানা হবেন। আর ঈদের আগে যে মনিটরিং থাকে, ঈদের পর তা থাকে না।”

এবারের ঈদযাত্রা অনেকটাই স্বস্তিদায়ক হয়েছে: সাইদুর রহমান

মোজাম্মেল হক চৌধুরী মনে করেন, "এবারের অভিজ্ঞতা থেকে যদি পরের ঈদগুলোতে ছুটি বাড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কম হবে। আর ঈদের পরেও ছুটি একটু বাড়িয়ে দিলে ফেরার ভোগান্তিও কমবে। প্রয়োজনে অন্য ছুটি কমিয়ে ঈদের এই ছুটি বাড়ানো য়ায়।”

সাইদুর রহমানও মনে করেন, ‘‘ভোগান্তি কমাতে হলে ঈদের ছুটি নিয়ে নতুন করে ভাবা উচিত। ঈদের আগে-পরে ছুটি বাড়ানো উচিত।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য