ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষের হুমকিতে ৫০ লাখ শিশু
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই দাতব্য সংস্থা বলছে, হোদাইদার মধ্য দিয়ে আসা সরবরাহ ব্যাহত হলে ‘অনাহারের মাত্রা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে৷'
সৌদি-সমর্থিত আক্রমণে লোহিত সাগরের পাড়ে অবস্থিত শহরটির বন্দর যে-কোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ সেভ দ্য চিলড্রেন ইয়েমেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর তামের কিরোলোস বলছেন, ‘‘সরবরাহ সামান্য মাত্রায় ব্যাহত হলেও এরই মধ্যে অপুষ্টিতে ভোগা লাখ লাখ শিশু মৃত্যুর হুমকিতে পড়তে পারে৷''
দেশটিতে পাঠানো খাদ্য, জ্বালানি ও মানবিক সহায়তার ৮০ শতাংশই আসে ২০১৪ সাল থেকে হুতি বিদ্রোহীদের দখলে থাকা হোদাইদা দিয়ে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য ও পরিবহনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে দেশজুড়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার দুই মাস পর সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে নতুন করে হোদাইদায় যৌথ হামলা শুরু করে ইয়েমেন সেনাবাহিনী, সরকারপন্থি মিলিশিয়া এবং সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট৷
জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে, ছয় লাখ বাসিন্দার এই শহরে আক্রমণ করা হলে দেশজুড়ে অন্তত ৮০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে৷
নেই কান্নার শক্তিও
সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী বলছেন, ‘‘পরবর্তী খাবার কখন পাওয়া যাবে তা নিয়ে সবসময়ই অনিশ্চয়তায় থাকে দেশটির লাখ লাখ শিশু৷ আমি একটি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম, যেখানে শিশুরা ক্ষুধায় এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, তাঁরা কাঁদতেও পারছিল না৷''
তিনি বলেন, ‘‘এই যুদ্ধ ইয়েমেনের একটি প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে৷ তাঁরা বোমা থেকে শুরু করে ক্ষুধা, এমনকি কলের মতো রোগের হুমকিতে দিন কাটাচ্ছে৷'' ইয়েমেন যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন, ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ হয়েছেন বাস্তুচ্যূত৷ আরো হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন অপুষ্টিতে ও রোগে ভুগে৷
২০১৪ সালে হুতি বিদ্রোহীরা দেশটির উত্তরাঞ্চলের দখল নিয়ে নেয়, নিয়ন্ত্রণে আসে রাজধানী সানার কর্তৃত্বও৷ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদির সমর্থনে ২০১৫ সালে ইয়েমেন সংকটে হস্তক্ষেপ করে সৌদি আরবের নেতৃত্বে আরব জোট৷
হোদাইদা বন্দর ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশ ইরান হুতি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ সৌদি আরবের৷ তবে ইরান এবং হুতি বিদ্রোহীরা এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে৷
যুদ্ধরত দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো৷ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রি করায় সমালোচনার মুখে পড়েছে বিভিন্ন পশ্চিমা রাষ্ট্রের সরকার৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সৌদি আরবকে গোয়েন্দা তথ্য ও জেট বিমানে জ্বালানি সরবরাহ করে আসছে৷ এসব তথ্য ব্যবহার করেইয়েমেনের বেসামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালাচ্ছে সৌদি আরব, উঠেছে এমন অভিযোগও৷
এডিকে/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)