‘ইয়ারমুক শরণার্থী শিবির দোজখের গহ্বর'
৭ এপ্রিল ২০১৫ডয়চে ভেলে: তথাকথিত ইসলামিক স্টেট ও আল নুসরা ফ্রন্ট সিরিয়ার বাকি অংশে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে৷ অথচ গত বৃহস্পতিবার তাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া সত্ত্বেও এই দুই গোষ্ঠী আবার দামেস্কের দক্ষিণে ইয়ারমুক এলাকার একটা বড় অংশ দখল করে নিয়েছে৷ এই এলাকায় মূলত ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা বসবাস করেন৷ প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সেনাবাহিনী সহ আরও গোষ্ঠী ইয়ারমুক দখলের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে৷ সেখানকার পরিস্থিতি কী রকম?
ক্রিস্টোফার গিনেস: এক মানবিক সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বলতে পারি, বেসমারিক জনগণ এই ভয়ংকর সংকটের মাঝে আটকা পড়েছে৷ প্রায় ১৮,০০০ মানুষ, যাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিশু সেখানে রয়েছে৷ ক্যাম্পের মধ্যে পরিস্থিতি মিনিটে-মিনিটে বদলে যাচ্ছে, অর্থাৎ ক্ষমতার ভারসাম্য এক থাকছে না৷ সেখানকার মানুষের জীবন আজ বিপন্ন৷ ভাঙা ঘরবাড়ির মধ্যে তারা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে, আতঙ্কে বাইরে যেতে পারছে না৷ সে কারণেই আমরা অস্ত্রবিরতির দাবি জানাচ্ছি, যাতে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার মতো সংগঠন সেখানে মানবিক সাহায্য পাঠাতে পারে৷ বিবাদমান গোষ্ঠীগুলিকে চূড়ান্ত সংযম দেখাতে হবে, যাতে যে সব মানুষ সেখান থেকে চলে যেতে চায়, তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়৷ আমার আশা, তারপর আরও পদক্ষেপ নিয়ে ইয়ারমুকের উপর অবরোধ তুলে নেওয়া সম্ভব হবে৷
ডয়চে ভেলে: ইয়ারমুকের প্রতি গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শেষ পর্যন্ত আইএস-এর হামলা ও ক্ষুধায় জর্জরিত মুমূর্ষু মানুষের প্রয়োজন পড়লো কেন?
ক্রিস্টোফার গিনেস: আমার মনে হয়, ইয়ারমুক বিশ্বের আগ্রহের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে৷ প্রশ্ন হলো, সেই আগ্রহ কি রাজনৈতিক পদক্ষেপের জন্ম দেবে? কারণ আমরা অনেক কাল ধরে বলে আসছি, যে শুধু মানবিক পদক্ষেপের সময় পেরিয়ে গেছে৷ এখন বড় শক্তিধর দেশগুলিকে বিবাদমান গোষ্ঠীগুলির উপর প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে হবে৷ প্রথমত, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বেসামরিক জনগণের সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোনো আপোশ চলবে না৷ বর্তমানে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ দ্বিতীয়ত মানবিক সাহায্য সরবরাহের সুযোগ দিতে হবে৷ গত সপ্তাহে সংঘর্ষের কারণে আমাদের ক্যাম্পে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না৷ অথচ সেখানে গিয়ে আমাদের খাদ্য, পানীয় ও ওষুধ সরবরাহ করতে হবে৷ মানুষের অন্যান্য প্রয়োজনও মেটাতে হবে৷ তাছাড়া ক্যাম্পের পরিস্থিতিও স্থিতিশীল করতে হবে এবং চরম অমানবিক অবস্থা দূর করতে হবে৷ মানুষ যাতে এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসে তা নিশ্চিত করতে হবে৷
ডয়চে ভেলে: যুদ্ধ শুরু হবার পর বেশ কয়েক বছর ধরে ইয়ারমুক-এর পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন রয়েছে৷ সাম্প্রতিক সংঘর্ষ কি পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলেছে?
ক্রিস্টোফার গিনেস: পরিস্থিতির সত্যি অবনতি ঘটেছে৷ ইয়ারমুক এমন এক জায়গা, যেখানে ওষুধের অভাবে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু ঘটেছে৷ পরিস্থিতি সত্যি আগেই খারাপ ছিল৷ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শিবিরের মূল পানি সরবরাহের প্রণালী ধ্বংস হয়ে গেছে৷ তাই মানুষ জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার সরবরাহের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল৷ পরিস্থিতি মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছিলো৷ সত্যি বলতে কি ইয়ারমুক নরক বা দোজখের গহ্বর হয়ে উঠেছে৷ বর্তমানে যে জোরালো সংঘর্ষ চলছে, তার ফলে পরিস্থিতির নাটকীয় অবনতি ঘটেছে৷
ডয়চে ভেলে: আপনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সমাজকে পদক্ষেপ নিতে হবে৷ আন্তর্জাতিক সমাজ কী করতে পারে?
ক্রিস্টোফার গিনেস: আমাদের আশা, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মিলিত হবে এবং সব পক্ষের উপর তারা চাপ সৃষ্টি করবে৷ এবং সত্যি বাছবিচার না করে সব পক্ষের উপর চাপ দিতে হবে৷ পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে সামগ্রিক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে৷ শক্তিধর দেশগুলি জানে তারা কারা এবং কী করতে হবে৷ আমাদের আশা, সবার আগে অর্থবহ কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হবে৷ তখন অস্ত্রবিরতি, নিরীহ মানুষের পালানোর সুযোগ, মানবিক সাহায্য সরবরাহ সম্ভব হবে৷ তারপর ইয়ারমুকের উপর অবরোধ তুলে নেওয়ার লক্ষ্যে অর্থবহ পদক্ষেপ সম্ভব হবে৷