1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ সরকার ও শান্তি প্রক্রিয়া

১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯

ইসরায়েলে সংসদ নির্বাচনের পর রক্ষণশীল লিকুদ ও কিছুটা উদারপন্থী কাদিমা– দুই দলই প্রায় সমান সংখ্যক আসন জেতার ফলে সরকার গড়ার প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে৷

https://p.dw.com/p/Gsvt
লিভনি না নেতানিয়াহু – কে পারবেন শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে?ছবি: AP/DW-Bildmontage

সম্ভাব্য জোটসঙ্গী হিসেবে কট্টর জাতীয়তাবাদী ও আরব-বিরোধী ‘ইসরায়েল বেইতেনু’ দলের হাতেই আগামী সরকার গড়ার চাবিকাঠি রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ তবে নতুন সরকার যদি দুর্বল হয়, সেক্ষেত্রে শান্তি প্রক্রিয়া স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে৷

আদৌ কি পরিবর্তন ঘটেছে?

সিপি লিভনি ও বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন ধাঁচে যতই পরিবর্তনের কথা বলুন না কেন, ইসরায়েলী ওবামা বলে কিছু নেই৷ নির্বাচনী প্রচারাভিযানে পরিবর্তন সম্পর্কে যত প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছিল, ভোটগ্রহণের পর দেখা গেল যে সেসব ছিল ফাঁকা বুলি৷ এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও কিছু এসে যেত না৷

এই নির্বাচনে কোনো পক্ষেরই জয় হয় নি৷ এতকালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর কাদিমা দলকে তালিকার শীর্ষে রাখতে পেরেছেন বটে, কিন্তু সম্ভাব্য সহযোগীর সঙ্গে জোট গড়তে গেলে যে আসনসংখ্যার প্রয়োজন, তা যথেষ্ট নয়৷ অন্যদিকে লিকুদ দলের নেতা বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু অঙ্কের হিসেবে অনেক এগিয়ে আছেন৷ তাঁর সম্ভাব্য জোটসঙ্গীদের ঝুলিতে যথেষ্ট আসন রয়েছে৷ তবে লিভনি ও নেতানিয়াহু – দুজনকেই কার্যত স্বীকার করতে হবে যে এভাবে তাঁদের পক্ষে সরকার চালানো সম্ভব হবে না, কারণ ইসরায়েলের ইতিহাসে এমন সরকারী জোটের মেয়াদ কখনই দীর্ঘস্থায়ী হয় নি৷

শান্তি প্রক্রিয়ায় ভূমিকা

সেইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার কী হবে? তবে এই প্রশ্ন শুধু বিদেশেই উচ্চারিত হচ্ছে – খোদ ইসরায়েলে বহুদিন হল এই প্রশ্ন আর শোনা যাচ্ছে না৷ বিদেশে বসে যাঁরা বিশ্বাস বা নেহাত আশা করেছিলেন, যে এবারের নির্বাচনে শান্তি ও স্বাভাবিক পরিস্থিতির প্রশ্নে ভোটাভুটি হচ্ছে, তাঁরা নিজেদের মনগড়া জগতেই বিচরণ করছিলেন৷ নেতানিয়াহু অতীতে যথেষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, যে আন্তর্জাতিক স্তরে শান্তির প্রশ্নে যতই ঐক্যমত থাকুক না কেন, তিনি নিজে মোটেই শান্তির পূর্বশর্ত নিয়ে চিন্তিত নন৷ তাঁর সম্ভাব্য জোটসঙ্গীরা তো বিষয়টি নিয়ে ভাবতেই প্রস্তুত নয়৷

অন্যদিকে কাদিমা ও সামাজিক গণতন্ত্রী লেবার পার্টিও কিন্তু শান্তি নীতির ক্ষেত্রে তাদের অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে গর্ব করতে পারে না৷ লেবার দলের নেতা এহুদ বারাক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্যাম্প ডেভিডে পিএলও নেতা ইয়াসের আরাফাতের সঙ্গে আলোচনার ব্যর্থতার জন্য মূলত দায়ী ছিলেন৷ আজও তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে সাম্প্রতিক গাজা অভিযানের দায় বহন করছেন৷ কাদিমা দলের নেতা সিপি লিভনিও মুখে শান্তির কথা বলেন বটে, কিন্তু তাঁরই দল গত কয়েক বছর ধরে শান্তির পথে সুপরিকল্পিতভাবে একের পর এক বাধা সৃষ্টি করে এসেছে৷ পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতির সম্প্রসারণ করা হয়েছে, নতুন বসতি স্থাপন করা হয়েছে৷ ইসরায়েল সেখানে যত বেশী নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাবে, সেখানে এক ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র স্থাপন করা ততই কঠিন হয়ে পড়বে৷ কারণ তখন ঐ সব বসতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা ততই কঠিন হয়ে পড়বে৷

কে শান্তি চায়?

ইসরায়েলে মানুষ সহজেই বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরের কথা বলে – যেমন একদিকে রয়েছে জাতীয়তাবাদী দক্ষিণপন্থী শিবির, অন্যদিকে রয়েছে বামপন্থী শান্তিবাদি শিবির৷ দাঁড়িপাল্লার দুদিকে এরা মোটামুটি একটা ভারসাম্য বজায় রাখে৷ কিন্তু বাস্তবে শুধু এক জাতীয়তাবাদী এবং এক কট্টর জাতীয়তাবাদী শিবির রয়েছে৷ কোনো পক্ষের হাতেই শান্তির জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নেই৷ ভোটাররাও এর ফলে তেমন বিচলিত বলে মনে হয় না, কারণ তারা বহুকাল আগেই শান্তিপূর্ণ সমাধানসূত্রের আশা ছেড়ে দিয়েছেন৷ তাঁদের কাছে এখন শুধু নিরাপত্তা বা আপাত নিরাপত্তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ সেই নিরাপত্তার জন্য যে হিংসা প্রয়োগ করা হয়, তার ফলে যে আরও অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে, সেবিষয়ে তাঁরা মোটেই সচেতন নন৷

তাহলে কে জেরুজালেম শাসনভার গ্রহণ করবে? এই প্রশ্নের জবাব পেতে বেশ কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য কোনো এক ব্যক্তি দেশের হাল ধরবেন – কিন্তু সেটা কোনো মৌলিক রাজনৈতিক বিকল্প হবে না৷ দুই প্রধান দলই জোট গড়তে যেভাবে সব দলের সঙ্গেই আলোচনা চালাচ্ছে, তার মাধ্যমেই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷

লেখক: পেটার ফিলিপ অনুবাদক: সঞ্জীব বর্মন