ইসরায়েলে বিভাজনের অদৃশ্য পরিখা
৫ জানুয়ারি ২০১২জেরুসালেমের পশ্চিমে বেইত শেমেশ শহরটির আশি হাজার বাসিন্দাদের অধিকাংশই গোঁড়া সনাতনপন্থি ইহুদি৷ এখানকার কট্টর ইহুদিরা দৈনন্দিন জীবনেও নারী-পুরুষের বৈষম্য চালু করার প্রচেষ্টা করার ফলে দেশের বাকি মানুষদের টনক নড়েছে, কেননা ইসরায়েলের মানুষ অন্তত সামাজিক বিচারে ধর্মনিরপেক্ষ বলেই পরিচিত৷ গতমাসে বেইত শেমেশে এক আট বছরের কিশোরীর উপর স্কুল যাওয়ার পথে থুথু দেয় সনাতনপন্থিরা৷ তাদের মতে মেয়েটির সাজপোশাক নাকি অশোভন ছিল৷
টেলিভিশনে নারী-পুরুষ বৈষম্যের অন্যান্য উদাহরণও দেখা যায় - কখনও বাসে মহিলাদের পিছনে বসতে বাধ্য করা হচ্ছে; কখনও পুরুষ এবং মহিলারা রাস্তার দু'পাশে হাঁটছেন আলাদা ভাবে৷ সাধারণ ইসরায়েলিরা যখন এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রীতিমতো পথে নেমে প্রতিবাদ প্রদর্শন করতে শুরু করে, তখন বোঝা যায় যে ইসরায়েলি সমাজের মধ্যে অদৃশ্য পরিখার মতো এই গভীর বিভাজন অপর একটি শঙ্কা থেকেও ইন্ধন পাচ্ছে৷
এবং সেই ইন্ধনটি হল কট্টর সনাতনপন্থি ইহুদিদের মধ্যে জন্মের হার৷ উগ্র সনাতনপন্থি পরিবারগুলিতে সন্তানের জন্মের হার গড়ে ৭ দশমিক ৫, যা কিনা জাতীয় গড়ের দ্বিগুণের বেশি৷ সনাতনপন্থিরা বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ, কিন্তু আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যেই ২০ শতাংশে পৌঁছে যাবে৷ এছাড়া সনাতনপন্থি সম্প্রদায়গুলি অনেকটাই রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির উপর নির্ভরশীল, কেননা তাদের পুরুষরা বাড়িতে থেকে ধর্মচর্চ্চাতে মনোনিবেশ করে৷ সামরিক সেবাও তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়৷ দেশের রাজনীতিতেও তারা অতিমাত্রায় বর্তমান৷ ১২০ সদস্য বিশিষ্ট ইসরায়েলি সংসদে ১৮টি আসন এই ‘হারেদিম'-দের৷
পরিস্থিতি এই যে, একদিকে যেমন ‘হারেদিম'-বিরোধীরা এবার সক্রিয়ভাবে গোঁড়াদের বাসে উঠে নারী-পুরুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, অপরদিকে সনাতনপন্থিরা বুধবার রাতে জেরুসালেমে মিছিল করে তাদের উপর - তাদের কথায় - সরকারি ‘‘নিপীড়ন''-কে নাৎসি আমলের জার্মানির অত্যাচারের সঙ্গে তুলনা করেছে - যার প্রতিক্রিয়া হয়েছে অবশ্যই তীব্র এবং দেশব্যাপী৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাক থেকে শুরু করে বিরোধী নেত্রী জিপি লিভনি, সকলেই এই অশুভ তুলনার নিন্দা করেছেন৷ এবং এভাবেই ইসরায়েলি সমাজের সেই অদৃশ্য পরিখাটি ক্রমেই আরো দৃষ্টিগোচর হয়ে উঠছে৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক