ইরাকে সংসদীয় নির্বাচন আশা এনেছে, কিন্তু সমস্যা কমেনি
৮ মার্চ ২০১০এই নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হল: ইরাকিদের ভয় দেখানো যায়নি৷ মর্টার আক্রমণ এবং বোমাবাজিতে ডজন ডজন মানুষের মৃত্যুর পরও ইরাকিরা ভোটকেন্দ্রগুলিতে ভিড় করেছে৷ তারা সাহস দেখিয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদী ও জাতীয় সম্প্রীতির বিরোধীদের প্রতি স্পষ্ট প্রত্যাখ্যানের নিদর্শন রেখেছে৷ এ'জন্য তাদের যাবতীয় স্বীকৃতি প্রাপ্য৷ দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ ইরাকি চায় নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্ব৷ তারা চায়, অবশেষে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটুক৷ এবং এক্ষেত্রে তারা গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার নীতিকেও নীতিগতভাবে সমর্থন করে৷
তবুও একটি সফল পরীক্ষার কথা বলার আগে সামনের বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলির কথা ভাবা দরকার৷ সরকারি ফলাফল ঘোষণায় দশ দিন, কি তারও বেশী লাগবে৷ সব গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিকরা এবং গোষ্ঠীসমূহ সে ফলাফল মেনে নেবে কিনা, তা'ও বলা শক্ত৷ এবং শিয়া, সুন্নী, কুর্দ্দ ও মিশ্র প্রার্থী তালিকাগুলির পিছনে যে বিভিন্ন ধরণের স্বার্থের সংঘাত লুকিয়ে রয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারগঠনের প্রচেষ্টা খুব সহজ হবে না৷ এমনকি নতুন করে সহিংসতার সম্ভাবনাও থাকতে পারে৷
সাদ্দাম হুসেনের পতনের সাত বছর পরে, এবং বিগত বছরগুলির রক্তপাতের পরও অনেক মূল সমস্যাই অসমাধিত রয়ে গেছে৷ যেমন বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীগুলির মধ্যে খনিজ তেল থেকে আরব্ধ অর্থের বণ্টন - অথবা তেলসমৃদ্ধ এলাকার মধ্যমণি কিরকুক শহরটির ভবিষ্যৎ৷ এই নির্বাচনে বিভিন্ন মিশ্র প্রার্থী তালিকার অস্তিত্ব এবং বিভিন্ন প্রার্থীর সম্প্রীতি নিয়ে ভাষণ সত্ত্বেও বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীগুলির মধ্যে বিপুল ব্যবধান রয়েই গিয়েছে৷ দেশটি কোনোদিনই একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ধীরে ধীরে গড়ে তোলার সুযোগ পায়নি - বরং ২০০৩ সালে হঠাৎ এক দিন থেকে আরেক দিনে একটি সম্পূর্ণ নতুন শাসনব্যবস্থায় এসে পড়েছে৷
ভবিষ্যৎ সরকারের প্রধান যেই হোন না কেন, তাঁকে বিপুল সব কর্তব্যের সম্মুখীন হতে হবে৷ একটি সুবিশাল চ্যালেঞ্জ হবে, দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী হিসেবে সুন্নীদের রাজনৈতিক দায়দায়িত্বে আরো বেশী করে সম্পৃক্ত করা৷ সুন্নীরা সাদ্দামের আমলে বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেছে এবং নতুন ইরাকে নিজেদের হেরে যাওয়াদের মধ্যে গণ্য করে৷ তার ফলে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি পূর্বাপর সুন্নীদের মধ্যে সমর্থন খোঁজে৷ এছাড়া খ্রিষ্টান এবং ইয়েসিদের মতো সহিংসতা ও বিতাড়নের ফলে বিশেষভাবে বিপন্ন সংখ্যালঘুদের রক্ষা করাটাও একটা বিশেষ জরুরী কর্তব্য৷ ক্ষমতা এবং প্রভাব সংক্রান্ত নানা স্বার্থের মাঝে সম্প্রীতি এবং আপোষ আনতে হবে৷ সব ধর্মের মানুষেরই প্রত্যাশা যে, তাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছুটা সুদিন আসবে, তা ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার মানেই হোক, আর জল কি বিদ্যুৎ সরবরাহেই হোক, বা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: পথেঘাটে নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই হোক৷
অথচ সময় থেমে নেই৷ মাস পাঁচেকের মধ্যেই দেশে এক লক্ষ মার্কিন সৈন্যদের অর্ধেক ইরাক ছাড়বে৷ বাকিরা যাবে ২০১১ সালের মধ্যে৷ তার পর এই নতুন সরকারকে একা দেশের নিরাপত্তার ভার নিতে হবে৷ অথচ এই চাপের মুখে সাত তাড়াতাড়ি সব কিছু ঠিক করার প্রচেষ্টাও একটা বড় ঝুঁকি, কেননা যে সব গোষ্ঠী এই নতুন ক্ষমতার কাঠামোয় নিজেরা যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে না বলে মনে করবে, তারাই দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটা দায় এবং একটি নিরাপত্তার ঝুঁকি হয়ে উঠবে৷
প্রতিবেদক: রাইনের সলিচ, অনুবাদ: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই