1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরো ২০২৪ : গ্রীষ্মের ছোট এক রূপকথার গল্প?

১৫ জুলাই ২০২৪

১৮ বছর আগে এক ফুটবল আসরকে ঘিরে উৎসবের দেশ হয়ে উঠেছিল জার্মানি৷ অনেকের কাছে এখনো ওই সময়টা রূপকথার গল্পের মতো৷ কোটি প্রাণের মিলন মেলা ইউরো ২০২৪ কি সেরকম আনন্দোৎসব হতে পেরেছে?

https://p.dw.com/p/4iJKE
জার্মানির এক সমর্থক
এবারের ইউরো কি গ্রীষ্মের দ্বিতীয় রূপকথার গল্প হতে পারে?ছবি: picture alliance/dpa/Revierfoto

১৮ বছর আগে জার্মানিতে বসেছিল বিশ্বকাপের আসর৷ ২০০৬-এর সেই আসরে শেষ হাসি হাসতে পারেনি জার্মান জাতীয় দল৷ ৯ জুন থেকে ৯ জুলাই – ওই একমাসকে বর্ণনা করা হয়েছিল ‘বন্ধু বানানোর সময়' হিসেবে৷ তাই বিশ্বকাপটা ফ্রান্সকে হারিয়ে ইটালি জিতলেও আয়োজনের সার্থকতা আর আতিথেয়তার আন্তরিকতায় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছিল আয়োজক দেশ জার্মানি৷

ইউরো ২০২৪ ফিরিয়ে এনেছিল সেই স্মৃতি৷ সবার মনে উঁকি দিয়েছিল একটা প্রশ্ন - এবারের ইউরো কি গ্রীষ্মের দ্বিতীয় রূপকথার গল্প হতে পারে?

জার্মানির নাট্যকার এবং লেখক ডাগ্রুন হিনৎসে এক প্রবন্ধে দুই আসরের সার্বিক পার্থক্য তুলে ধরেছেন, ‘‘২০০৬-এর সময়টা ছিল বিস্ময়কর রকমের সুন্দর৷ বর্তমান সময়টা একেবারেই অন্যরকম৷ আমাদের তাই পুরো বিষয়টিকে বাস্তবতার নিরিখে পর্যালোচনা করতে হবে৷ ২০২৪-এর (আয়োজনের) সার্থকতা নির্ভর করছে আবার আমরা সবাইকে কতটুকু একত্রিত করতে পারছি, তার ওপর৷''

মেরুকরণের দেশে ইউরোর এক রশ্মি

২০০৬ বিশ্বকাপের সময়ের জার্মানি আর ইউরো ২০২৪-এর সময়ের জার্মানি বেশ কিছু কারণে আলাদা৷ ২০০৬ ছিল করোনার বিভীষিকা এবং শরণার্থী সংকটমুক্ত দেশ৷ রাশিয়া তখনো ইউক্রেনে হামলা চালায়নি, তাই যুদ্ধের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কুপ্রভাবও পড়েনি ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশটিতে৷ রাজনৈতিকভাবেও জার্মানি ছিল অন্যরকম৷ কারণ, তখনো ডানপন্থিদের উত্থানের আশঙ্কা দেখা দেয়নি৷ অথচ এখন জার্মানিতে ডানপন্থিদের উত্থান কোনো শঙ্কা নয়, সদ্য সমাপ্ত ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) জার্মানির পূর্বাঞ্চলীয় সব রাজ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় এটি অনিবার্য এক বাস্তবতা৷

সামাজিক সুসংহতি নড়বড়ে হয়ে যাওয়া এ সময়ে অনুষ্ঠিত ইউরো ২০২৪-কে কি তাহলে আর রূপকথার গল্পের সঙ্গে মেলানো যাবে? জার্মান স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি কোলন-এর ক্রীড়া ইতিহাসবিদ ও শিক্ষক য়্যুর্গেন মিটটাগ মনে করেন, খুব বড় না হলেও এই সময়টাকে ‘গ্রীষ্মের ছোট একটা রূপকথার গল্প' বলা যেতেই পারে৷ কারণ, ‘‘সবচেয়ে ভালো দিকটা হলো, এই মুহূর্তে জার্মানিকে একটা ইতিবাচকতা গ্রাস করেছে, ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর আগে যা সেভাবে ছিল না৷শুধু জার্মান নয়, অনেক বিদেশির কাছেও ইউরো ছিল একত্রে আনন্দ উপভোগের একটা উপলক্ষ৷নিরাপত্তাহীনতার ভয় এই সময়ে কারো মনে উঁকি দেয়নি৷এ সময়ে জার্মানরাও মনে হয় আগের চেয়ে নিজেদের কিছুটা কাছাকাছি এসেছে৷''

ইউলিয়ান নাগেলসমান : কোচের চেয়েও বেশি কিছু

জার্মানির কোচ ইউলিয়ান নাগেলসমানের কাছে ফুটবল যে স্রেফ বিনোদন বা ট্রফি জেতার প্রতিযোগিতা নয় তা স্পষ্ট হয়েছে ফুটবলারদের উদ্দেশ্যে দেয়া এক বক্তব্যে৷ স্পেনের কাছে হেরে আসর থেকে বিদায় নেয়া গুন্দোগানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সমাজের কাছে নিজেদের ঐক্যের উজ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরতে হবে, নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা এবং সৌহার্দ্যের বন্ধন আরো সুদৃঢ় করতে পারলেই কেবল সেটা সম্ভব৷ তার এ বক্তব্য খুব প্রশংসা কুড়িয়েছে৷ জার্মান স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি কোলন-এর ক্রীড়া ইতিহাসবিদ ও শিক্ষক য়্যুর্গেন মিটটাগ মনে করেন, এর মাধ্যমে ৩৬ বছর বয়সি ইউলিয়ান নাগেলসমান বুঝিয়ে দিয়েছেন তার দৃষ্টিভঙ্গি উদার কোনো রাষ্ট্রনায়কের মতো৷

সবকিছু শতভাগ ঠিক নেই

ইউরো ২০২৪-এর সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতাসহ বেশ কিছু বিষয় আয়োজক জার্মানিকে অস্বস্তিতে ফেলেছে৷ টনি ক্রুস, গুন্দুগান,  রুডিগার, মুসিয়ালাদের ইউরো অভিযানও শেষ হয়েছে সেমিফাইনালে৷

জার্মানির অনেক সমর্থক অবশ্য মনে করেন, কোয়ার্টার ফাইনালে রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের কারণে পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত না হলে তাদের দল চ্যাম্পিয়নও হতে পারতো৷ সেদিন পেনাল্টি বক্সের ভেতরে বল লেগেছিল স্পেনের মার্ক কুকুরেইয়ার হাতে৷ কিন্তু রেফারি তা আমলে নেননি৷ সেই ক্ষোভ জার্মান সমর্থকরা ঝেড়েছেন ফ্রান্স-স্পেন সেমিফাইনালে৷ কুকুরেইয়ার পায়ে বল গেলেই দুয়োধ্বনি দিয়ে রেফারির ভুলের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা৷

অলিভার পিপার/ এসিবি