‘ইউনূসকে অপসারণে ভেঙে পড়তে পারে গ্রামীণ’
১৬ মার্চ ২০১১১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন মুহাম্মদ ইউনূস৷ দারিদ্র বিমোচনে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালু করেন এই অর্থনীতিবিদ৷ বর্তমানে ব্যাংকটির ঋণীর সংখ্যা ৮০ লাখের বেশি, যাদের মধ্যে অধিকাংশই গ্রামের নারী৷
চলতি বছরের মার্চ মাসের ২ তারিখ বাংলাদেশ ব্যাংক ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যুক্তি হচ্ছে, ১৯৯৯ সালে প্রফেসর ইউনূসকে ঐ পদে পুর্নবহাল করা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয়নি৷
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অব্যাহতির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ইউনূস৷ কিন্তু হাইকোর্ট গত সপ্তাহে এই রিট আবেদন খারিজ করে দেন৷ এবং জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত সঠিক৷
হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ৷ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই আবেদনের শুনানি দুই সপ্তাহ মুলতবি করেছেন৷
প্রফেসর ইউনূস মঙ্গলবার আদালতে হাজির হন৷ কিন্তু গণমাধ্যমকে এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি৷ তাঁর আইনজীবী ড. কামাল হোসেন জানান, গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে৷ ইউনূসকে অব্যাহতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্রামীণ ব্যাংকে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে৷ এটি একটি বিশেষ সংস্থা এবং আমরা সেখানে অনিশ্চয়তা চাই না৷
এদিকে, বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করেছেন ব্যাংকটির গ্রাহকরা৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন৷
আপাত দৃষ্টিতে ইউনূস এর অব্যাহতির বিষয়টি আইনী মনে হলেও তাঁর সমর্থকরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিরোধের কারণেই বর্তমানে চরম বিপদে পড়েছেন ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা৷ ২০০৭ সালে রাজনীতিতে নামার ঘোষণা দিয়েছিলেন ইউনূস, যা পছন্দ করেননি শেখ হাসিনা৷
আন্তর্জাতিক সমাজ অবশ্য ইউনূসের পক্ষেই অবস্থান করছেন৷ গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তাঁর অব্যাহতিতে ‘বিচলিত' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ফেন্ডস অব গ্রামীণ নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থাও তৈরি হয়েছে ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংককে রক্ষায়৷
উল্লেখ্য, প্রফেসর ইউনূস নিজেও গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব হস্তান্তরে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ তবে, এভাবে জোরপূর্বক নয় বরং একটি মসৃণ ও আনন্দময় পরিবেশে গ্রামীণ ব্যাংকের পরবর্তী ব্যবস্থাপনা পরিচালকের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চান তিনি৷ সম্প্রতি দেশবাসীর প্রতি এক আবেদনে এই প্রত্যাশার কথা জানান বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল জয়ী৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম/এএফপি
সম্পাদনা: ফাহমিদা সুলতানা