1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্ত বাংলাদেশিরা, এখনো আটকে ভারতীয়রা

১৯ মার্চ ২০২২

ইউক্রেনের ভেলিন শহরের ডিটেনশন সেন্টার থেকে ছাড়া পেয়েছেন চার বাংলাদেশি৷ অভিযোগ উঠেছিল যে শিবিরটিতে আরো অনেকের সঙ্গে বাংলাদেশিদেরও ‘‘মানবঢাল’’ হিসেবে আটকে রাখা হয়েছে৷ তবে, ভারতীয়রা এখনো সেখানে আটকে আছেন৷

https://p.dw.com/p/48jFe
বামের ছবিতে মুক্তির পর রিয়াদ মালিক এবং নূর মোহাম্মদ, ডানের ছবিটি তাদের দুই মার্চের ভিডিও বার্তা থেকে নেয়া ছবি: private

ইউক্রেনের ভেলিনের ডিটেনশন সেন্টারে আটকে থাকা চার বাংলাদেশির দুইজনকে শনিবার ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ তাদের নাম রিয়াদ মালিক ও নূর মোহাম্মদ৷ এর আগে গত বুধবার কাশেম আহমেদ ও উজ্জ্বল আলী মিয়া নামের অপর দুই বাংলাদেশি নাগরিককে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল৷ তারা বর্তমানে পোল্যান্ডে রয়েছেন৷ ফলে শিবিরটিতে আর কোনো বাংলাদেশি আটকে নেই বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ সরকারের একটি সূত্র৷ 

Migranten aus Internierungslager Ukraine entlassen
কাশেম আহমেদ ও উজ্জ্বল আলী মিয়া বুধবার ছাড়া পানছবি: private

ইউক্রেনের ডিটেনশন সেন্টারে এই চার বাংলাদেশির আটকে থাকার কথা গত দুই মার্চ ডয়চে ভেলেতে প্রকাশিত হয়৷ আটকেপড়া অভিবাসীরা জানান যে তাদেরকে ‘‘মানবঢাল'' হিসেবে ব্যবহার করতে সহস্রাধিক ইউক্রেনীয় সেনার সঙ্গে একই শিবিরে শতাধিক বিভিন্ন দেশের অভিবাসীর সঙ্গে রাখা হয়েছে৷ এরপর নানা পর্যায় থেকে তাদের মুক্ত করতে উদ্যোগ শুরু হয় বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনে বাংলাদেশ অনরারি কনস্যুলেটের উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন দিক থেকে চাপ আসার কারণে আমরা দ্রুত এই বাংলাদেশি অভিবাসীদের শিবিরটি থেকে বের করে আনার চেষ্টা করি৷ ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য কিছু সঠিক তথ্যপ্রমাণ চায়৷ পেল্যান্ডের বাংলাদেশি দূতাবাস সেগুলো বিভিন্ন ধাপে তাদেরকে পাঠায়৷''

‘জটিল' মুক্তির প্রক্রিয়া

তবে, রিয়াদ মালিক এবং নূর মোহাম্মদকে মুক্ত করার বিষয়টি ‘জটিল' ছিল বলে উল্লেখ করেন আলম৷ ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ ভেলিন শিবিরে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন প্রতিনিধিকে গিয়ে তাদেরকে নিয়ে আসতে নির্দেশনা দেয়৷ বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে তখন একজন ইউক্রেনীয় নাগরিককে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি' দেয়া হয়৷ শনিবার সকালে সেই নাগরিক ভেলিনের শিবিরে গিয়ে রিয়াদ ও নূরকে মুক্ত করেন ও গাড়িতে করে পোল্যান্ডের সীমান্তের দিকে নিয়ে যান বলে জানিয়েছেন মাহবুবুল আলম৷ 

তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু ইউক্রেনে বাংলাদেশ দূতাবাস নেই এবং অনারারি কনস্যুলেটও অনেক দূরে, তাই দূতাবাসের কেউ বা আমার পক্ষে সেই ডেটিনেশন সেন্টার থেকে তাদের মুক্ত করে সীমান্তে পৌঁছে দেয়া সম্ভব ছিল না৷ আমার এক ইউক্রেনীয় বন্ধু তখন সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন এবং সেন্টারে গিয়ে বাংলাদেশিদের মুক্ত করেন৷''

DW Program
বর্তমানে ইউক্রেনের লাভিভে রয়েছেন মাহবুবুল আলমছবি: Private

ইউক্রেনের কিয়েভ থেকে এখনো পাঁচ থেকে দশজন বাংলাদেশি নাগরিক পরিবারসহ পোল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন বর্তমানে যুদ্ধকবলিত দেশটির লাভিভ শহরে অবস্থানরত মাহবুবুল আলম৷ এছাড়া দেশটিতে আরো কিছু বাংলাদেশি থাকলেও তারা এখন বের হতে চাচ্ছেন না বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ সরকারের এই উপদেষ্টা৷

তিনি বলেন, ‘‘মারিউপোলে যুদ্ধের মধ্যে আটকেপড়া দুই বাংলাদেশি ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় শহরটি থেকে বের হতে সক্ষম হয়েছেন৷ যারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কিংবা আমরা যাদের কথা জেনেছি তাদের সবাইকে সহায়তা করা হয়েছে৷ ইউক্রেনের কোনো ডিটেনশন সেন্টারে আর কোনো বাংলাদেশি আটকে নেই৷''

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর আগে দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি নাগরিক ইউরোপের দেশটিতে অবস্থান করছিলেন বলে ধারনা করা হয়৷ এরমধ্যে অন্তত আটশো থেকে একহাজার বাংলাদেশি ইতোমধ্যে দেশটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো৷

এখনো আটকে আছেন ভারতীয় নাগরিকরা

এদিকে, চার বাংলাদেশি মুক্তি পেলেও এখনো কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক ভেলিনের ডিটেনশন সেন্টারে আটকে আছেন বলে জানা গেছে৷ তবে, তাদেকে উদ্ধারে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে ভারত সরকার৷ 

ইউক্রেন ও রাশিয়ায় বাংলাদেশিরা কেমন আছেন?

ডিটেনশন সেন্টার থেকে ভারতীয় নাগরিক আরিফ হোসেন (ছদ্মনাম) টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুইজন ভারতীয় আজকে ছাড়া পেয়েছেন, আরো তিনজন একুশ তারিখের মধ্যে ছাড়া পাবেন৷ আর আমিসহ বাকি আটজনের মুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে৷''

আরিফ জানান যে শুরুর দিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সহায়তা না পেলেও নানাভাবে চেষ্টা করার পর এখন তারা নিয়মিত যোগাযোগ করতে পারছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আজকে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে৷ তারা আমাদের ছাড়া পেতে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র আজকের মধ্যে পাঠাবে এবং আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমরা মুক্ত হতে পারবো বলে আশা করছি৷''

গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় যে যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন থেকে বাইশ হাজার পাঁচশো ভারতীয় নাগরিককে ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে৷ দেশটিতে এখনো আটকে থাকা পনের-বিশজন ভারতীয় নাগরিককে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়৷

ভেলিনে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধারে কিছু করা হচ্ছে কিনা জানতে চেয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচির সঙ্গে ডয়চে ভেলের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলেও এখনো কোনো জবাব পাওয়া যায়নি৷