1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইইউ-র সন্ত্রাসবাদী তালিকা কিভাবে তৈরি হয়?

২৪ জানুয়ারি ২০২৩

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় শিগগিরই অন্তর্ভুক্ত হতে পারে ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডের নাম৷ কালো তালিকাভুক্তরা সম্পদ বাজেয়াপ্ত থেকে শুরু করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, এমন নানা বিধিনিষেধের আওতায় পড়েন৷

https://p.dw.com/p/4Mcrl
ইরানের ইসলামিক রিভলিউশনারি গার্ড কর্পসের কিছু সদস্য এখনই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সন্ত্রাসবাদের তালিকায় রয়েছেন৷
ইরানের ইসলামিক রিভলিউশনারি গার্ড কর্পসের কিছু সদস্য এখনই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সন্ত্রাসবাদের তালিকায় রয়েছেন৷ ছবি: Morteza Nikoubazl/NurPhoto/picture alliance

অন্তত চারজন সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর ইরানের অভিজাত সেনা ইউনিট ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস- আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে তালিকাভুক্ত করার কথা ভাবছে জার্মানি এবং ফ্রান্স৷ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে মিলে এই দুই দেশ যৌথ নিরাপত্তা নীতির অধীনে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে

থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর কাউন্টার টেরোরিজমের তানিয়া মেহরা জানিয়েছেন, ইইউ জোটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কাউন্সিলের পরবর্তী বৈঠক থেকেই এই সিদ্ধান্ত আসতে পারে৷ কিন্তু ঠিক কিভাবে সন্ত্রাসবাদের তালিকায় কোনো সংগঠন বা ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়, এবং এর পরিণাম কী হয়৷

তালিকার বিস্তারিত...

২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রথম এমন তালিকা তৈরি করে৷ সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিহ্নিত করা হয় এই তালিকায়৷ হামলার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত এক প্রস্তাবকে সমর্থন করে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়৷ এর লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসী এবং তাদের অর্থদাতাদের চিহ্নিত করা এবং তাদের অর্থ সরবরাহ ও চলাচল বন্ধ করা৷

প্রতি ছয় মাসে একবার ইইউ এই তালিকা পুনর্বিবেচনা করে৷ এই মুহূর্তে তালিকায় ১৩ জন ব্যক্তি এবং ২১টি গোষ্ঠীর নাম রয়েছে৷ ইইউ অঞ্চলের ভেতরে এবং বাইরে বোমা হামলা থেকে শুরু করে গুপ্তহত্যা পর্যন্ত নানা অপরাধ সংগঠনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে৷

এই তালিকায় অন্তর্ভুক্তদের সকল সম্পদ জব্দ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ তালিকায় রেভোলিউশনারি গার্ডের নাম অন্তর্ভুক্ত হলে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো সদস্য রাষ্ট্রে থাকা সম্পদ বা সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারবে না৷ বাহিনীর সদস্যদের চলাচলেও আসবে বিধিনিষেধ৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিচারের মুখোমুখিও হতে পারেন৷

কেবল তাই নয়, তালিকায় থাকা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ইইউর কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন আর্থিক বা অন্য কোনো সহায়তা করলে তাদেরকেও আনা হতে পারে নিষেধাজ্ঞার আওতায়৷

যেভাবে তৈরি হয় তালিকা

সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটানো বা ঘটানোর পরিকল্পনায় জড়িত বা সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে৷ এমনকি যেসব ঘটনার তদন্ত করা হয়নি, সেসব ক্ষেত্রেও কেউ কেউ তালিকায় তাদের নাম দেখতে পারেন৷

ইইউ সদস্য রাষ্ট্র বা তৃতীয় কোনো রাষ্ট্রও তথ্য-প্রমাণসহ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নাম প্রস্তাব করতে পারে৷ এরপর ‘ওয়ার্কিং পার্টি অন রেসট্রিকটিভ মেজারস টু কমব্যাট টেরোরিজম' বা সংক্ষেপে কমেট নামের একটি বিশেষ গ্রুপ এই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে৷

কমেটে ঠিক কারা রয়েছেন, সেটি স্পষ্ট নয়৷ তবে যদি কমেট সিদ্ধান্ত নেয় যে কাউকে তালিকাভুক্ত করা উচিত, তারা সেই প্রস্তাব ইউরোপীয় কাউন্সিলের কাছে জমা দেয়৷ ইইউ সব সদস্য রাষ্ট্রের সরকারপ্রধান আছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলে৷ এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের দুই প্রধানও কাউন্সিলের সদস্য৷

এই প্রক্রিয়ার পাশাপাশি জাতিসংঘ যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার দায়ে চিহ্নিত করে, তার নামও ইইউ-র তালিকায় আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷

তালিকায় এখন যাদের নাম রয়েছে

আল কায়েদা এবং এর অঙ্গসংগঠন, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো এই তালিকায় রয়েছে৷ ২০১৬ সালের একটি বিশেষ সিদ্ধান্তে আইএস বা এর সঙ্গে জড়িত কারো কাছে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং অন্য কোনো সামরিক যন্ত্রপাতি বিক্রির ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে৷ ইইউ-র নাগরিক না হলে এবং কেবল তার নিজের দেশের উদ্দেশে যাত্রাপথ না হলে আইএস-এর সদস্যদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে প্রবেশের ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷

ফিলিস্তিনের ইসলামিস্ট জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের নামও রয়েছে এই তালিকায়৷ লেবাননের হেজবুল্লাহ (সামরিক শাখা), সিরিয়ার কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে), শ্রীলঙ্কার লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিটিই), কলম্বিয়ার এহেরসিতো দে লিবেরাসিওন নাসিওনাল (ইএলএন), কমিউনিস্ট পার্টি অব দ্য ফিলিপাইন্স-এর মতো অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং বিপ্লবী গোষ্ঠীর নামও রয়েছে এই তালিকাতে৷

তবে ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডকে সন্ত্রাসবাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে এটি হবে জোটের একটি অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত৷ এই প্রথম কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে চিহ্নিত করা হবে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে৷ অবশ্য আইআরজিসি এর সদস্যদের কয়েকজনের নাম এরই মধ্যে এই তালিকায় রয়েছে৷ ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেকটরেট ফর ইন্টার্নাল সিকিউরিটিও রয়েছে তালিকায়৷

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর কাউন্টার টেরোরিজম এর তানিয়া মেহরা অবশ্য মনে করেন, এই তালিকায় নাম উঠলেও বাড়তি কোনো আর্থিক সমস্যায় ফেলবে না আইআরজিসিকে৷ এরই মধ্যে নানা ইরানের বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞায় আইআরজিসি এর নাম রয়েছে৷ বরং এর ফলে বাধ্যতামূলক সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়া ইরানিরা বিপদে পড়তে পারেন বলে মনে করেন তিনি৷ তবে রেভোলিউশনারি গার্ডকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে ইরানকে একটি কঠিন বার্তা দেয়া হবে বলে মনে করেন তিনি৷ এর ফলে ইরানের সঙ্গে ইইউ এর কূটনৈতিক সম্পর্কে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা তার৷

তালিকা থেকে কি নাম বাদ দেয়া যায়?

তালিকায় থেকে নাম কাটানোও সম্ভব৷ তালিকায় নাম ঢোকানোর মতোই এর প্রক্রিয়াও একই৷ কোনো ইইউ সদস্য রাষ্ট্র বা তৃতীয় রাষ্ট্রকে এই প্রস্তাব উত্থাপন করতে হয়৷ ২০১৬ সালে শান্তি চুক্তি করতে রাজি হওয়ায় তালিকা থেকে কলম্বিয়ার বিপ্লবী গোষ্ঠী ফার্ক এর নাম বাদ দেয়া হয়৷

জটিল কিছু ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ইইউ এর বিরুদ্ধে মামলা করারও নজির রয়েছে৷ হামাস নিজেদের বৈধ প্রতিরোধ আন্দোলন দাবি করে ২০১৪ সালে ইইউ এর বিরুদ্ধে মামলা করে৷ ইইউ এর জেনারেল কোর্ট তালিকা থেকে হামাসের নাম বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে রায় দেয়৷ আদালত বলে, হামাসকে তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া কেমন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে নেয়া হয়েছে৷ তবে ২০১৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ আদালত কোর্ট অব জাস্টিস সে রায় পালটে দেয়৷

শোলা লাওয়াল/এডিকে