আসামের যে গ্রামে বাড়ি ভারতে, উঠোন বাংলাদেশে
আসামের গোবিন্দপুর গ্রাম। কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে যে গ্রামের বাড়ি ভারতে, কিন্তু উঠোনের সিংহভাগ বাংলাদেশে।
সীমান্তের আশ্চর্য গ্রাম
গ্রামের নাম গোবিন্দপুর। এই গ্রাম কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে পড়েছে। জায়গা ছিল না বলে গ্রামের বাড়িগুলির পিছন দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া সেসময় দেয়া যায়নি। ফলে এই গ্রামের মানুষরা বসবাস করেন কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে।
গেট খুললে ঢোকা যায় ভারতে
সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে গেট। তখন পরিচয়পত্র দেখিয়ে যাতায়াত করতে হয়। রুটিরুজির জন্য আসতে হয় কাঁটাতারের বেড়ার গেট পেরিয়ে ভারতে। আবার সময়ে ঘরে ফিরে যেতে হয়। ছয়টার পরে শরীর খারাপ বা জরুরি প্রয়োজন হলে বিএসএফকে জানাতে হয়। তারা তখন গ্রামবাসীদের পৌঁছে দেয় হাসপাতালে।
ঘর হতে যার আঙিনা বিদেশ
গোবিন্দপুর গ্রামের এই বাড়ির উঠোন একটু শুরু হতেই পড়ে যাচ্ছে বাাংলাদেশের সীমানা। সেখানে সাদা পাথর বসানো আছে, যার একদিকে লেখা ভারত, অন্যদিকে বাংলা।
কাঁঠাল গাছ পড়ে্ছে বাংলাদেশে
জবাবালা বিশ্বাসের উঠোনে দুই দেশের সীমানায় রয়েছে একটা কাঁঠাল গাছ। তুলসীমঞ্চের পিছনে ওই গাছে ভর্তি কাঁঠাল হয়ে আছে। কিছু কাঁঠাল হেলে আছে ভারতের দিকে, কিছু বাংলাদেশের দিকে।
কী বলছেন জবাবালা
এই বাড়িটি জবাবালা বিশ্বাস ও তার পরিবারের। বাড়িটি ভারতে, আঙিনার অনেকটাই বাংলাদেশে। জবাবালা বললেন, তাদের বাড়ির এটাই বিশেষত্ব। উঠোনের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে সীমান্ত। তবে তারা এই জীবনযাপনে অভ্যস্ত।
গ্রামের মধ্যে দিয়ে সীমান্ত
গ্রামের মধ্যে দিয়ে সীমান্ত চলে গেছে। ভারতের দিকে সেই পাথরে লেখা রয়েছে 'ইন্ডিয়া'। এই পাথরই বলে দিচ্ছে, গ্রামের কোনদিকটা ভারতে পড়েছে। এখান থেকে কাঁটাতারের বেড়ার গেটে যেতে সময় লাগে হেঁটে মিনিট চারেক।
পাথরের অন্যদিকে লেখা 'বাংলা'
ওই পাথরের অন্যদিকে লেখা 'বাংলা'। অর্থাৎ, বাংলাদেশের জমি শুরু বা শেষ হচ্ছে ওখানেই। সেই সীমানায় পড়েছে ওই গ্রামে।
৪২ ঘর, ২১১ জন মানুষ
গোবিন্দপুরে আছে মোট ৪২টি ঘর। তাতে বসবাস করেন ২১১ জন। তাদের বাচ্চারা কাঁটাতারের বেড়ার গেট পেরিয়ে স্কুলে যায়। পড়াশুনো করে। গ্রামে কেউ চাষ করেন, কেউ মাছ ধরেন, কেউ বা অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত।
বাংলাদেশের মানুষ
মাঠ পেরিয়ে দূরে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের রাস্তা। সেখানে মানুষজন হেঁটে যাচ্ছেন। গোবিন্দপুর গ্রামে ও তার আশপাশের এলাকা পুকুর, জলাশয় ভর্তি।
কী বলছেন গ্রামবাসীরা
গ্রামবাসীদের একটাই দাবি, তাদের গ্রামও কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে চলে আসুক। তাহলেই তারা ঢুকে যাবেন মূল ভূখণ্ডে। তাদের বক্তব্য, বিএসএফ তাদের সঙ্গে সবসময় সহযোগিতা করে । কোনো অসুবিধা হলে সাহায্য করে।
অসুবিধা একটাই
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, একটাই অসুবিধা আছে তাদের। এই গ্রামের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে গেলে মেয়ের পরিবার অনেক সময় পিছিয়ে যায়। কাঁটাতারের ওপারের গ্রামে বিয়ে দেবে কিনা, তা নিয়ে চিন্তা করে। তবে তাই বলে এমন নয় যে, কাউকে এর জন্য অবিবাহিত থাকতে হয়। বিয়ে ঠিকই হয়।
ভোট দেবেন তারা
প্রাপ্তবয়স্ক গ্রামবাসীদের কাছে ভোটার আই কার্ড আছে। তারা গেট পেরিয়ে ভোট দিতে যাবেন। কিছুটা হাঁটতে হবে এই যা। তবে তাদের অভিযোগ, কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল তাদের গ্রামে এসে প্রচার করে না। ফলে তারাও তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারেন না।
প্রচুর পুকুর
গ্রামের মধ্যে আছেএকাধিক পুকুর বা জলা জায়গা। প্রায় সকলের বাড়িতেই আছে, বাঁশের তৈরি মাছ ধরার ফাঁদ। যা পুকুরে, জলা জায়গায় রেখে দিলে মাছ ভিতরে ঢুকে পড়ে, আর বেরোতে পারে না। তারা নিয়মিত এভাবেই মাছ ধরেন।
কাঁটাতারের বেড়ার পাশে চাষের জমি
গ্রামের পাশেই আছে চাষের জমি। এই এলাকার অন্য গ্রামের মতো গোবিন্দপুরও সবুজে ভরা। তফাতের মধ্যে কেবল ওই কাঁটাতারের বেড়ার এপাশে তাদের অবস্থান।
চণ্ডীমণ্ডপও আছে
গ্রামের মধ্যেই আছে চণ্ডীমণ্ডপ। সেখানে পুজো হয়., হয় ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান। মানুষ আসেন।
সবমিলিয়ে নয়টি গ্রাম
গোবিন্দপুর একা নয়, এখানে এরকম নয়টি গ্রাম আছে, যা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে। এই গ্রামগুলোর মানুষের জীবন এভাবেই কাটে।