1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আসামিদের না পেয়ে একজনকেই চার্জশিট!

২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

২০১৫ সালে বাংলা নববর্ষের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলকায় যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে পায়নি পুলিশ৷ এমনকি সংবাদমাধ্যমে আটজনের ছবি প্রকাশের পরও নয়৷ তাই আটক একজনকেই আসামি করেছে তারা৷

https://p.dw.com/p/2UiO8
যৌন হয়রানির শিকার (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Imago/Imagebroker

গত সপ্তাহে একজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয়ার যুক্তি হিসেবে মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বা পিবিআই-এর ইন্সপেক্টর আব্দুর রাজ্জাক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কেউ তথ্য না দিলে কী করা যাবে? এত বড় আলোচিত ঘটনা চার্জশিট তো একটা দিতেই হবে৷ তাই  একজনকে আসামি করেই চার্জশিট দিয়ে দিয়েছি৷''

চার্জশিটে যাকে আসামি করা হয়েছে তার নাম কামাল৷ সে পুরনো ঢাকার একজন ফল বিক্রেতা৷ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা সে স্বীকার করেছে পুলিশের কাছে৷ তবে তার দাবি, সে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত নয়৷ তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘বাকি যাদের সিসিটিভি ফুটেজ ধরে চিহ্নত করা হয়েছে, তাদের কামাল চেনে না৷ তবে আমাদের মনে হয়েছে যে কামাল সুযোগ নিয়েছে৷''

২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখে (১৪ এপ্রিল) টিএসসির উল্টো দিকে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের গেটে এই যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে৷ ঐ এলকায় সিসিটিভি ছিল, ছিল টহল পুলিশ৷ এরপরও প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ঐ ঘটনা ঘটার সময় নারীদের উদ্ধারে এগিয়ে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সে সময়কার ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দীসহ আরো কিছু তরুণ৷ লিটন নন্দী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বেশ কয়েকজন নারী যৌন হয়রানির শিকার হন৷ তাঁদের মধ্যে আমরা ১০ জনকে উদ্ধার করেছি৷ আমার মনে হয়, এটা এক বা দু'জনের কাজ নয়৷ বড় একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের কাজ ছিল এটা৷''

লিটন জানান, ‘‘পুলিশ প্রথমে ঘটনাটা অস্বীকার করেছিল৷ পরে অবশ্য ঘটনা স্বীকার করে পুলিশ নিজেই মামলা করে তদন্ত শুরু করে৷ আমরা সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে আটজনকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করি৷ কিন্তু এই আটজনই নয়, এর বাইরেও আরো অনেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল৷''

আব্দুর রাজ্জাক

আটজনকে চিহ্নিত করার পর, গত বছরের ১৭ই মে তাদের ধরিয়ে দিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগবা ডিবি সংবাদমাধ্যমে তাদের ছবি প্রকাশ করে৷ এরপর একই বছরের ১৩ই ডিসেম্বর আদালতে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয় ডিবি৷ তারা জানায় যে, তারা কাউকে এই ঘটনায় জড়িত বলে চিহ্নিত করতে পারেনি৷ কিন্তু চলতি বছরের ২৮শে জানুয়ারি পুলিশ ঢাকার চকবাজার এলাকা থেকে কামাল নামে একজন ফল বিক্রেতাকে আটক করে৷ পুলিশ জানায় চিহ্নিত আটজনের মধ্যে একজন কামাল৷ ঘটনার সময় তার দাড়ি থাকলেও, পরে সে দাড়ি কেটে ফেলে৷

এরপর ডিবি মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন জানালে আদালত মামলাটি ২৩শে ফেব্রুয়ারি পুনরুজ্জীবনের আদেশ দিয়ে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয় পিবিআই-কে৷

কিন্তু পিবিআই মামলার নতুন কোনো তদন্ত না করে ঐ একজনকেই আসামি করে চার্জশিট দিয়েছে৷ মামলায় ৩৪ জন সাক্ষীর কথা বলা হলেও, ঘটনার শিকার কারুর জবানবন্দি বা বক্তব্য নেই৷ পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এ ধরনের ঘটনার শিকার যাঁরা হন, তাঁরা সাধারণত নিজেদের নানা কারণে প্রকাশ করতে চান না৷ তাই তাঁদের বক্তব্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে৷ তবে পুলিশের কাজ হলো তাঁদের নাম পরিচয় গোপন রেখে তাঁদের বক্তব্য জানা৷ তা না হলে তদন্ত পূর্ণাঙ্গ হয় না৷ কারণ শুধু ছবি বা ফুটেজের মাধ্যমে সব সময় নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, কে দুর্বৃত্ত আর কে উদ্ধার বা রক্ষাকারী৷''

লিটন নন্দী

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক দাবি করেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু কেউ আমাদের সহযোগিতা করেনি৷ কেউ আমাদের তথ্য দেয়নি৷ আমরা কী করবো?'' কিন্তু তাই বলে এমন একটা দুর্বল তদন্ত, দুর্বল চার্জশিট? এ প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ‘‘তা হবে কেন! কখনো চিহ্নিতদের ধরতে পারলে, তাদের নাম ঠিকানা জানতে পারলে আমরা আদালতকে জানাবো৷ তখন তারাও আইনের আওয়তায় আসবে৷''

লিটন নন্দী বলেন, ‘‘এটা দুঃখজনক যে চিহ্নিত করার পরও অভিযুক্তদের খুঁজে পায়নি পুলিশ৷ দেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এতগুলো এজেন্সি, তাদের এত ‘সোর্স', তারপরও তারা অপরাধীদের ঠিকানা বের করতে পারে না৷ এটা তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের ব্যাপক আস্থাহীনতা তৈরি করবে৷''

বাকি সাতজন অভিযুক্তকে খুঁজে না পেয়ে একজনকে চার্জশিট দেওয়া কি যুক্তিসঙ্গত? জানান আপনাদের মতামত, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান