1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আলো দূষণের কারণে অন্ধকার আকাশ আরো বিরল হয়ে উঠছে

৩ আগস্ট ২০২১

আজকাল বিশ্বের খুব কম জায়গায় রাতের আকাশের নির্মল রূপ দেখা যায়৷ আলোর দূষণের কারণে সেই সুযোগ কমেই চলেছে৷ অথচ আরো ভেবেচিন্তে আলোর ব্যবহার করলেই সেই দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব৷

https://p.dw.com/p/3ySzs
ফাইল ফটোছবি: picture alliance/D. Kalker

আইফেল জাতীয় পার্কের রাতের আকাশ সত্যি খুব স্পষ্ট৷ হারাল্ড বার্ডেনহাগেন সেখানে একটি অবজারভেটরি বা মানমন্দির গড়ে তুলেছেন৷ তিনি লক্ষ্য করছেন, যে রাতের আকাশ ক্রমশঃ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের একেবারেই কোনো আলোর দূষণ না থাকলে, অর্থাৎ একেবারে স্বাভাবিক রাতের আকাশ থাকলে আমরা সম্ভবত তিন থেকে সাড়ে চার হাজার নক্ষত্র দেখতে পেতাম৷ ইউরোপে কোথাও সেটা আর সম্ভব নয়৷ এখানে রাতে বড়জোর ১,৮০০ থেকে আড়াই হাজার নক্ষত্র দেখা যায়৷'' 

সেখানে হাজার হাজার নক্ষত্র, এমনকি মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিও চোখে পড়ে৷ হারাল্ড বার্ডেনহাগেনের কাছে সেই দৃশ্য খুবই পরিচিত৷ তবে জার্মানির বেশিরভাগ মানুষ এমন দৃশ্য শুধু কল্পনাই করতে পারেন৷ কারণ প্রায় সব জায়গায় রাতের আকাশ অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে৷ হারাল্ড বলেন, ‘‘আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং একেবারে কোনো মেঘ না থাকলে কোলোন শহরে হয়তো ২০-৩০টা নক্ষত্র চোখে পড়ে, কারণ সেগুলি বেশি উজ্জ্বল৷ কোলোন থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গেলে আলোর ছটা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়৷ তখন কিছুটা ভালো আকাশ চোখে পড়ে৷''

আলোর দূষণ গোটা বিশ্বে একটা সমস্যা হয়ে উঠেছে৷ পৃথিবীর বুকে এমন জায়গার সংখ্যা কমে চলেছে, যেখানে সত্যি অন্ধকার আকাশ দেখা যায়৷ কৃত্রিম আলো রাতের আকাশ উজ্জ্বল করে তুলছে৷ এর ফলে শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও শখের পর্যবেক্ষকদের সমস্যা হচ্ছে না৷ কৃত্রিম আলোর কারণে আমাদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে৷

রাতে সক্রিয় পোকামাকড় চিরকাল নক্ষত্রের আলোর উপর ভিত্তি করে দিক নির্ণয় করে এসেছে৷ কৃত্রিম আলো এই প্রাণীগুলির জন্য মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠেছে৷ পোকামাকড়ের মৃত্যুর জন্য আলোর দূষণকে দায়ী করা হয়৷ এই দূষণের ফলে পাখিও দিক নির্ণয় করতে পারছে না৷ উদভ্রান্ত হয়ে পাখি এমনকি আলোকিত ভবনে ধাক্কা মারছে৷

হারাল্ড বার্ডেনহাগেন জানেন, যে রাতে কৃত্রিম আলো অপরিহার্য৷ তবে তিনি হাত গুটিয়ে বসে থাকার পাত্র নন৷ রাতে শহরের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে অপ্রয়োজনীয় বা ত্রুটিপূর্ণ আলোর উৎসের সন্ধান করে তিনি উন্নতির পথ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন৷ বিশেষ ক্যামেরার সাহায্যে তিনি আকাশ কতটা অন্ধকার বা আলোকিত, তা পরিমাপ করেন৷ হারাল্ড বলেন, ‘‘শিল্পক্ষেত্রের জন্য নির্ধারিত এই এলাকার ঔজ্জ্বল্য অবশ্যই প্রত্যাশিত৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক আলো এড়ানো সম্ভব৷ এই প্লান্টের একটা বড় অংশ উঁচু টাওয়ারের উপর বসানো স্পটলাইট দিয়ে আলোকিত করা হয়৷ সেগুলির উপরে কোনো ঢাকনা নেই৷ অর্থাৎ প্রায় সব দিকেই আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে৷ একটা বড় অংশ উপরের দিকে অথবা ধারে চলে যায়, যার একেবারেই কোনো প্রয়োজন নেই৷ ধাতু অথবা অন্য কোনো উপযুক্ত ঢাকনা দিয়ে আলো ঠিকমতো ঢাকা দিতে পারলে শুধু প্রয়োজনীয় অংশ আলোকিত করা সম্ভব৷'' 

বাদুড়ের উপর আলোর দূষণ নিয়ে গবেষণা

পরিস্থিতির উন্নতির ক্ষেত্রে আলোর সুনির্দিষ্ট ব্যবহার কিছুটা অবদান রাখতে পারে৷ আলোর দূষণ কমানোর আরও একটি উপায় রয়েছে৷ নির্ধারিত কিছু জায়গায় রাতে আলোর ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা যেতে পারে৷ যেমন আইফেল জাতীয় পার্ক৷ ২০১৪ সালে এই এলাকাকে ‘স্টার স্যাংকচুয়ারি' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷

জার্মানিতে মোট চারটি এমন এলাকা রয়েছে৷ আইফেল এলাকায় অন্ধকারের এমন মরূদ্যান গড়ে তোলার পেছনে বার্ডেনহাগেনেরও অবদান রয়েছে৷ তিনি জানালেন, ‘‘স্টার স্যাংকচুয়ারি এমন এক এলাকা, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়৷ যেমন মিল্কি ওয়ে দৃশ্যমান করে তুলতে হয়৷''

আমাদের শহরগুলি সম্ভবত কখনোই আইফেলের মতো অন্ধকার হবে না৷ কিন্তু কমপক্ষে আলোর দূষণ কমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে৷ হারাল্ড বার্ডেনহাগেন সেই লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন৷ সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে হয়তো আরো বেশি মানুষ খালি চোখে মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি দেখতে পাবেন৷

ইয়াকব কাইসার/এসবি