বাগদাদের পথে জঙ্গিরা
১৩ জুন ২০১৪ইরাকি পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে বাগদাদ থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে বাকুডা শহরের কাছে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সুন্নি জঙ্গিদের যুদ্ধ শুরু হয়েছে৷ ২০০৩ সালে অ্যামেরিকান সৈন্যদের অভিযানের পর থেকে আরব, কুর্দি ও সুন্নি অধ্যুষিত বাকুডা শহরে প্রায়ই সংঘাত ও সহিংসতা ঘটে আসছে৷
আল-কায়েদার শাখা ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট-এর (আইএসআইএল) জঙ্গিরা গত সোমবার এই আক্রমণ শুরুর পর সালাহেদিন প্রদেশের রাজধানী তিকরিত এবং নিনেভে প্রদেশের মসুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়৷ তাঁদের হাতে পূর্বাঞ্চলীয় শহর জালাওলারও পতন হয়েছে বলে দুবাইভিত্তিক আল-আরাবিয়া টেলিভিশনের খবরে জানানো হয়েছে৷
এদিকে বিভিন্ন শহরে সুন্নি জঙ্গিদের আক্রমণের সুযোগে কুর্দি বিদ্রোহীরাও নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠছে৷ সরকারি সৈন্যরা পালিয়ে যাওয়ার পর কিরকুক শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তাঁরা
প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকি জরুরি অবস্থা জারির উদ্যোগ নিলেও পার্লামেন্টে ৩২৫ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ১২৮ জনের সমর্থন পেয়েছেন তিনি৷ দেখা গেছে, অধিকাংশ স্থানেই আইএসআইএল হামলা শুরুর পর সরকারি বাহিনী নিজেদের অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে গেছে৷ সুন্নি জঙ্গিদের ঠেকাতে বাগদাদে শিয়া মতাবলম্বীরা স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গঠন করছে বলে বার্তা সংস্থাগুলোর খবরে জানানো হয়েছে৷
ইরাকের রাষ্ট্রায়াত্ত টেলিভিশন মসুলে জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান বাহিনীর আক্রমণের ছবি দেখালেও শহরের নিয়ন্ত্রণ আইএসআইএল-এর রয়ে গেছে হাতেই৷ সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে দখল করা গাড়িতে চড়ে জঙ্গিরা কুচকাওয়াজ করেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে৷
আইএসআইএল-এর মুখপাত্র আবু মোহাম্মদ আল-আদনানি ইতোমধ্যে হুমকি দিয়েছেন যে, তাঁর বাহিনী রাজধানী বাগদাদ দখল করে আরো দক্ষিণে শিয়া অধ্যুষিত কারবালার দিকে এগিয়ে যাবে৷
এমন এক সময়ে আল-কায়েদা সমর্থিত জঙ্গিরা এই তৎপরতা শুরু করেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক থেকে তাদের সব সৈন্য সরিয়ে নেয়ার শেষ পর্যায়ে রয়েছে৷ অবশ্য জঙ্গি দমনে ইরাকি বাহিনীকে সহায়তার জন্য ওয়াশিংটন সব বিকল্পই খোলা রেখেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানিয়েছেন৷
তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা কোনো বিকল্প বাদ দিচ্ছি না৷ জিহাদিরা যাতে ইরাক বা সিরিয়ায় তাঁদের অবস্থান আরো শক্তিশালী করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা আমাদের জন্য জরুরি৷''
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জে কার্নি এর ব্যাখ্যায় বলেন, স্থল অভিযানের কথা যুক্তরাষ্ট্র আপাতত ভাবছে না৷ তবে আকাশপথে অভিযানের সম্ভাবনা ওবামা উড়িয়ে দেননি৷
ইরাকের সাবেক একনায়ক সাদ্দাম হোসেনের দল বাথ পার্টির সদস্যরা আইএসআইএল-এ যোগ দিতে শুরু করায় সুন্নি মতাবালম্বী এই জঙ্গিরা সম্প্রতি নতুন করে সংগঠিত হয়৷ বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা প্রত্যাহার বিলম্বিত করতে পারে৷ অথবা কোনো একটি পক্ষকে সমর্থন দিতে পারে, তবে তাতে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা থাকবে৷
মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অভিযানে ২০০৩ সালে ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেন উৎখাত হন৷ সেই যুদ্ধের পর থেকে ইরাকে কখনোই পুরোপুরি শান্তি ফেরেনি৷ জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর শিয়া ও সুন্নি মতাবলম্বীদের সংঘাত এবং জঙ্গি হামলায় প্রায় নয় হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ চলতি বছর কেবল মে মাসেই নিহত হয়েছেন অন্তত ৮০০ জন৷
জেকে/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)