আরেকটি নতুন জেলা পেল পশ্চিমবঙ্গ
৪ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের ২২তম জেলা হিসেবে ভূমিষ্ঠ হয়েছে ঝাড়গ্রাম৷ পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে তৈরি হওয়া এই জেলার বড় অংশেই জঙ্গলমহল৷ মাঝে ক’বছর মাওবাদী কার্যকলাপে যেন নিষিদ্ধ ভূখণ্ড হয়ে উঠেছিল এ এলাকা৷ এতদিনে ফিরেছে জীবনের ছন্দ৷
এলাম ‘আরণ্যকের’ দেশে
জঙ্গলমহলের প্রবেশদ্বার ঝাড়গ্রাম শহর৷ হাওড়া-কলকাতা থেকে প্রতিদিন এক্সপ্রেস ট্রেন আসে এই স্টেশনে৷ সড়কপথে কলকাতা থেকে সরাসরি বাসেও আসা যায় ঝাড়গ্রামে৷
‘গ্রাউন্ড জিরো’ জঙ্গলমহল
শীত শেষে বসন্ত এসেছে জঙ্গলমহলে৷ পাতা ঝরার প্রহর পার করে অপূর্ব সবুজে সেজে উঠেছে আদিবাসীদের আপন দেশ৷ নির্জন পথের দু’ধারে শাল ও কেন্দু বা বিড়িপাতার জঙ্গলের মাঝে একাকী দাঁড়ালে মনে হতেই পারে বিভূতিভূষণের আরণ্যক-এর কথা৷ দূরে পর্বতের সারি নিয়ে ডাকছে বেলপাহাড়ি৷
অরণ্যের প্রথম আলো
আক্ষরিক অর্থেই সূর্যোদয় হচ্ছে অতীতের মাও উপদ্রুত এলাকা হিসেবে কুখ্যাত জঙ্গলমহলের৷ বসন্তের রঙিন প্রকৃতির মতো মানুষের জীবনও উঠেছে সেজে৷
মহুয়ায় জমেছে মৌ
জঙ্গলমহলে বসন্ত মানেই মাতাল করা মহুয়ার মধুমাস৷ কিছু দূর অন্তর পথিকের স্নায়ু অবশ করে দেয় মিঠে একটা গন্ধ৷ সেই গন্ধের উৎস রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহুয়া গাছের সারি৷ থোকা হয়ে শাখায় শাখায় ঝুলছে ফুল৷ মাটিতে পড়লে কুড়িয়ে নিয়ে যান গ্রামবাসীরা৷ এটা থেকেই তৈরি হয় নেশার পানীয়৷
আয়ের পথ মহুয়া
জঙ্গলমহলের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িয়ে মহুয়া ফুল৷ আদিবাসীদের বাড়ির সামনে রোদে ফুল শুকোতে দেওয়া হয়৷ কুড়িয়ে আনার সময় ফুলের রং থাকে ডিমের কুসুমের মতো হলুদ৷ শুকিয়ে গেলে রং হয় কালচে খয়েরি৷ এই ফুল গ্রামবাসীরা বিক্রি করেন স্থানীয় দোকানে৷ ২০১৭ সালে এক কেজি মহুয়া ফুল বিক্রি হচ্ছে ২২ টাকায়৷
চলো রিনা, ক্যাসুরিনা
জঙ্গলমহলের বুক চিরে চলে গিয়েছে সর্পিল সড়ক৷ বেলপাহাড়ি থেকে বাঁশপাহাড়ি যাওয়ার পথে রাস্তা কোথাও ঢালু, কোথাও অনেকটা চড়াই৷ গ্রামবাসীদের যাতায়াতের মাধ্যম দ্বিচক্রযান, সাইকেল অথবা মোটরবাইক৷ জনবিরল রাস্তায় হারিয়ে যাওয়ার হাতছানি৷
ভয়ংকর সুন্দর
জঙ্গলের মধ্যে আমতল গ্রাম৷ এখনও যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে লেখা জেলার নাম পশ্চিম মেদিনীপুর৷ তার গায়ে কাগজের একটা পোস্টার সাঁটা৷ সেখানে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনী সিআরপিএফ-এর মোবাইল নম্বর লেখা৷ বেলপাহাড়ি থানা থেকে বহু দূরের এ সব এলাকা মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল ছিল৷ বিপদে গ্রামবাসীদের সাহায্য করতে সিআরপিএফ-এর হেল্পলাইন৷
অরণ্যের পক্ষীরাজ
শান্ত জঙ্গলমহলে সংখ্যায় কম হলেও নিয়মিত বাস চলাচল করে৷ বেলপাহাড়ি থেকে মানবাজার, বান্দোয়ান, পুরুলিয়া ছুঁয়ে যায় বেসরকারি বাস৷ এখন সন্ধের অন্ধকার নেমে এলেও বাস দেখা যায় এই রাজ্য সড়কে৷
পথ চাওয়াতেই আনন্দ
কিছু দূর অন্তর পাকা সড়ক থেকে এমনই লাল মাটির রাস্তা ঢুকে গিয়েছে জঙ্গলের মধ্যে৷ বন্ধুর পথে অনেকটা এগোলে গ্রামে পৌঁছনো যায়৷ এই পথে কোনো আলো নেই৷ আগে দিনের বেলাতেও এমন প্রত্যন্ত গ্রামে ঢোকা পুলিশের পক্ষেই বিপজ্জনক ছিল৷ এখন রাতেও গ্রামবাসীরা যাতায়াত করেন৷
আমাদের ছোট গাঁয়ে...
কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা মনে হতে পারে৷ মূল সড়ক থেকে ভিতরে ঢুকলে দেখা মেলে এমনই গ্রামের৷ বিনপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত এই গ্রামের নাম লালজল৷ পাহাড়ে ঘেরা এ সব গ্রাম আজ নিরুপদ্রব৷
উন্নয়নের কেন্দ্র
মাওবাদীদের দৌরাত্ম্যের সময় খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল ভুলাভেদা৷ শিকেয় উঠেছিল পঞ্চায়েতের কাজকর্ম৷ প্রতিনিয়ত ছিল হামলার আশঙ্কা৷ ভুলাভেদা গ্রাম পঞ্চায়েতের এই কার্যালয়ের মাধ্যমে স্থানীয় এলাকায় উন্নয়নের কাজ পরিচালিত হয়৷
চলো পড়তে যাই
গ্রামের নাম মাজুগোড়া৷ চরমপন্থি কার্যকলাপের জেরে জনজীবনে আতঙ্কের আবহ ছিল একসময়৷ যদিও মাওবাদীরা সাধারণ গ্রামবাসীদের ক্ষতি করত না৷ কিন্তু, হিংসার ঘটনায় ত্রস্ত ছিল জঙ্গলমহল৷ পরিস্থিতি বদলাতে খুলেছে স্কুলও৷
ওই যে গাঁটি যাচ্ছে দেখা
পাকা সড়ক থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে গ্রাম লালজল৷ সন্ধে নামলেই জ্বলে ওঠে সৌরশক্তির আলো৷ পাশের জঙ্গল থেকে ডেকে ওঠে ময়ূর৷ হাতের নাগালে পানীয় জলের জোগান৷
কুমোর ঠাকুর গড়ে
অশান্তির সময়েও উৎসবে ছেদ পড়েনি জঙ্গলমহলে৷ তবু সন্দেহ আর ভয়ের মিশেলে আবেগে ঘাটতি পড়েছিল৷ আজ আবার ফিরে এসেছে উৎসব ঘিরে আগের সেই স্বতঃস্ফূর্ততা৷ লালজল গ্রামে চৈত্রের বাসন্তী পুজো উপলক্ষ্যে মূর্তি তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পী৷
জঙ্গলের হাসিমুখ
অরণ্যবাসী মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে৷ লোধা, শবর, সাঁওতাল জনজাতির প্রতিনিধি যেন এই মহিলা৷ গাছের ডাল দিয়ে তৈরি তাঁর হাতের ঝাঁটা৷ নিকোনো উঠোনের মাটির দোচালা ঘর একেবারে অরক্ষিত৷ তবুও সেখানে শান্তিতে রাতে ঘুমোতে পারেন তাঁরা৷
হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা
৫ নম্বর রাজ্য সড়ক চলে গিয়েছে বাঁকুড়া৷ সাইনবোর্ড পথের মধ্যে জানান দেয়, জঙ্গলমহলের পর্যটনকেন্দ্র ঝিলিমিলি আর ১৭ কিলোমিটার দূরে৷ বাঁশপাহাড়ি হয়ে যেতে হয় সেখানে৷ ঝাড়গ্রামের কাঁকড়াঝোড় বিখ্যাত তার অরণ্যের জন্য৷
লালপাহাড়ির দেশে যা
মাওবাদীরা যখন পুরো মাত্রায় সক্রিয়, তখন প্রকৃতির আপন দেশে পর্যটকরা যেতে পারতেন না৷ সবসময় ভয় ছিল অপহরণ, খুনের৷ পরিবেশ শান্ত হতেই পর্যটকরা ফের জঙ্গলমহলের দিকে ফিরছেন৷ পাহাড়ে উঠতেও আর ভয় নেই৷
জীবন এগিয়ে চলে...
বাঁশপাহাড়ি যাওয়ার পথে চাকাডোবা মোড়৷ তিনমাথার একটি চলে গিয়েছে অরণ্যসুন্দরী কাঁকড়াঝোড়ের দিকে৷ কর্মব্যস্ত মানু্ষের ছবি বলে দিচ্ছে, জঙ্গলমহলে জীবনের স্বাভাবিক লয় ফিরে এসেছে৷