1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আরাভ খান কোথায় পুলিশের অজানা, ইন্টারপোলও জানায়নি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ এপ্রিল ২০২৩

দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান দিয়ে আলোচিত আরাভ খানকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে আলোচনা থিতিয়ে এসেছে বলে পুলিশের তৎপরতাও যেন এখন কম। ইন্টারপোলের রেড নোটিসের পর তার অবস্থান এখন কোথায় তাও জানে না পুলিশ।

https://p.dw.com/p/4QFYD
Screenshot Interpol Suche nach RABIUL ISLAM, RABIUL
ছবি: https://www.interpol.int/en/How-we-work/Notices/View-Red-Notices#2023-17153

অবশ্য ঢাকার আদালতে রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের বিরুদ্ধে পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলাসহ আরেকটি অস্ত্র মামলার বিচারকাজ চলছে। হত্যা মামলাটিতে এপর্যন্ত চার জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। আগামী ২ মে এই মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য নেয়ার দিন ধার্য আছে।

২০১৮ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর বনানীতে একটি বাড়িতে খুন হন পুলিশ বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান। তাকে জন্মদিনের নামে একটি পার্টিতে ডেকে হত্যা করা হয়। ১০ জুলাই গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার উলুখোলা এলাকায় রাস্তার পাশে একটি জঙ্গল থেকে মামুনের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিচয় গোপন করার জন্য লাশে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে চেহারা বিকৃত করা হয়। লাশ উদ্ধারের পর তার ভাই জাহাঙ্গীর খান বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সল আতিক বিন কাদেরের আদালতে নিহত পুলিশ পরিদর্শক মামুনের বোন রওশন আক্তার, দুলাভাই মোশারফ হোসেন খান, বাসার কেয়ারটেকার মিরাজুল ইসলাম ও সিকিউরিটি গার্ড মানিক সাক্ষ্য দিয়েছেন। এই মামলায় সাক্ষী মোট ৩৮ জন।

আসামি ধরা পুলিশের কাজ: দুলাল

মামলার আট অভিযুক্তের মধ্যে আরাভ খান ও তার স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার পলাতক আছেন। রহমত উল্লাহ, স্বপন সরকার, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হাসান ও দিদার পাঠান এই ছয়জন কারাগারে আটক আছেন।

এই মামলার অপ্রাপ্ত বয়স্ক দুই জন আসামি আছেন। তারা হলেন মেহেরুন্নেসা স্বর্ণা ও মোছা. ফারিয়া বিনতে মিম। তাদের নামে আলাদা চার্জশিট হয়। শিশু আদালতে তাদের বিচার চলছে।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী  মো. আবদুস সাত্তার দুলাল বলেন, "সাক্ষ্য গ্রহণ মাত্র শুরু হয়েছে। বিচারে সময় লাগবে। আরাভ খানকে পলাতক দেখিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়েছে। আদালত তার বিরুদ্ধে আগেই ওয়ারেন্ট জারি করেছে।”

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,"আদালতের কাজ হচ্ছে বিচার করা। আদালতে সাক্ষী হাজির করা আসামি ধরা পুলিশের কাজ। শুনেছি পুলিশ ইন্টারপোলের মাধ্যমে আরাভ খানকে দেশের বাইরে থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।”

আরাভ খান পলাতক থাকলেও তার পক্ষে আদালত নিয়েজিত একজন আইনজীবী আছেন।

আরাভ খানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলাটি দায়ের হয়  ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি। অভিযোগ, ওই দিন  আরাভ খান তার শ্বশুর সেকেন্দার আলীর মগবাজারের বাসায় যান ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতে। তখন তিনি একটি গুলি ভর্তি রিভলবারসহ শ্বশুরের বাসার সামনে থেকে আটক হন।  এই ঘটনায় আরাভের বিরুদ্ধে রমনা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেন ডিবির তৎকালীন এসআই সুজন কুমার  কুণ্ডু। ২০১৫ সালের ১ মার্চ আরাভের বিরুদ্ধে আদালতে জার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসআই শেখ হাসান মুহাম্মদ মোস্তফা সারোয়ার। ওই বছরের ১০ মে আদালত আরাভ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ জামিন পান আরাভ খান। জামিনে গিয়ে পলাতক থাকায় ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

বিচার কাজ স্বাভাবিক গতিতেই হয়েছে: সালাহউদ্দিন

ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মদের আদালতে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।  মোট ২০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ৭ মে মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারি পিপি  এ কে এম সালাউদ্দিন জানান,"এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। ২০ জনের মধ্যে ১০ জন মূল সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালত এখন যুক্তিতর্ক শুনবেন। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যেই মামলার রায় হবে।”

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "মামলাটির বিচার কাজ স্বাভাবিক গতিতেই হয়েছে। আগে ঝুলে ছিলো, আরাভ আলোচনায় আসার পর গতি বেড়েছে তেমন নয়।”

গত ২৪ মার্চ ইন্টারপোল আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করে। বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের অনুরোধে ওই রেড নোটিস জারি করা হয়। নোটিসে আরাভ খানের নাম শুধু রবিউল ইসলাম লেখা আছে। আর গ্রামের বাড়ি লেখা আছে বাগেরহাট। কিন্তু তার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার আশুতিয়া গ্রামে। তবে সে ছোটবেলায় বাগেরহাটের চিতলমারীতে থাকত।

পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোল ডেস্কের কাছে আরাভ খানের সর্বশেষ তথ্য জানতে চাইলে তারা কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া মনজুর রহমান  জানান, "ইন্টারপোল রেড নোটিস জারি করেছে ওই পর্যন্তই। আর কোনো তথ্য আমাদের জানায়নি। সে এখন কোথায় আছে বা তার অবস্থান সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।”

ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন,"আরাভ খানের বিষয়টি এখন পুলিশ সদর দপ্তর দেখছে। আমাদের কাছে এখন আর কোনো তথ্য নাই।”

আদালতে বিচারাধীন দুইটি মামলার বাইরে আর কোনো মামলা আরভের বিরুদ্ধে আছে কী না, তাদের তদন্তে কী পাওয়া গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমাদের জানা নেই। নতুন কোনো তথ্য পেলে জানাব।”

গত মাসে জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দুবাইয়ে আরাভ খানের একটি স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করতে গেলে আলোচনায় আসেন আরাভ খান। পুলিশই তখন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তার অপরাধের ব্যাপারে তথ্য দেয়। আরাভ খানের সঙ্গে কিছু সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নামও আলোচনায় আসে। প্রশ্ন ওঠে তার সম্পদ এবং দেশ থেকে পালানোর প্রক্রিয়া নিয়ে।

সাকিব কি জানতেন আরাভের পেছনে কার টাকা?